কক্সবাজার : জহিরুল হত্যার ঘটনায় শিবির নেতা গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ভয়কে জয়’ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

পরের সংবাদ

নেতৃত্বশূন্য তৃণমূল, কর্মকাণ্ড চলছে পুরনো কমিটি দিয়েই

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ‘আগের মতো কেন্দ্র থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ‘সুপার ফাইভ’ বা ‘সুপার সেভেন’ কমিটি আর হচ্ছে না। কাউন্সিলররা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করছেন। দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে হলে এখন থেকে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমর্থন পেতে হবে। সিন্ডিকেট কমিটি বা ‘পকেট কমিটির’ ব্যাপারে সতর্ক হচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে বিএনপির খুলনা বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতারাও কমিটি পুনর্গঠনে কাজ করছেন। এ বিভাগের প্রায় সব জেলা কমিটি ভেঙে নতুন করে গোছানো হচ্ছে।
খুলনা বিভাগে ১টি মহানগর এবং ১০টি জেলা রয়েছে। এর মধ্যে কেবল কুষ্টিয়ায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে। এ ছাড়া যশোর ও ঝিনাইদহ জেলায় আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ৭টি জেলার প্রাথমিক পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এই জেলাগুলো হলো- চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকি জেলাগুলোর পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা হবে। জেলা কমিটি গঠন শেষ হলে মহানগর গোছানোর কাজ শুরু করা হবে। সাংগঠনিক টিমের নেতারা জানান, গত ৩১ অক্টোবর বিভাগীয় পর্যায়ের মিটিং করে জেলা, থানা এবং পৌর জেলা কমিটি গঠন শুরু করা হয়েছে।
খুলনা বিভাগে এক যুগ আগের পুরনা কমিটি দিয়ে চলছে বিএনপির মহানগর কমিটি। জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলেও তৃণমূলে নেই পূর্ণাঙ্গতা। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নগর ও জেলা কমিটি ছাড়া তৃণমূল প্রায় নেতৃত্বশূন্য। স্থানীয় নেতারা বলছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্বাচন, কয়েক দফা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েও দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে শেষ পর্যন্ত কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এমন অবস্থাতেও খুলনায় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা।
জানতে চাইলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ভোরের কাগজকে বলেন, খুলনার ১০ জেলার মধ্যে ৭টি জেলায় প্রথম পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠন শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা থানা ও পৌর কমিটি গঠনের কাজ চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, জেলাগুলোতে পুলিশ দলীয় কার্যালয় খুলতেই দেয় না। নেতাকর্মীরা বাড়িঘরে থাকতে না পেরে পালিয়ে থাকে। ফলে বাধ্য হয়েই এক জেলার কমিটি গঠনের কাজ পার্শ্ববর্তী অন্য জেলায় গিয়ে করতে হচ্ছে। নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাহসী ও ত্যাগী নেতাদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মহানগরে এক কমিটিতেই যুগ পার! : ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে মহানগর বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সভাপতি, মনিরুজ্জামান মনিকে সাধারণ সম্পাদক ও ফকরুল আলমকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ১৩ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়।
সূত্র জানায়, কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রথম দফা সম্মেলনের তারিখ ছিল ২০১৬ সালের ৫ মার্চ। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সম্মেলন নিয়ে দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিলে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে আন্দোলন সংগ্রাম, নির্বাচনসহ নানা কারণে সম্মেলন আর হয়নি। ২০০৯ সালের গঠিত নগর কমিটি এখনো বহাল রয়েছে। ১২ বছর পুরাতন এই কমিটির ১১ জন সদস্য মারা গেছেন। এছাড়া অনেকেই দল ত্যাগ ও বহিষ্কার হয়েছেন। নিষ্ক্রিয় রয়েছেন অনেকে। এদিকে নগর বিএনপির পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ৫ থানা, ৩১টি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নের কমিটিও। এ অবস্থায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের পক্ষে দলের তৃণমূলের নেতারা।
সূত্র জানায়, এক যুগ মহানগর কমিটিতে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে ও মনিরুজ্জামান মনি প্রতির নেতাকর্মীদের আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ফের মহানগরের নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসছেন বিএনপির এই দুই সিনিয়র নেতা। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের আগেই উন্মুক্ত ময়দানে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলন করা না গেলেও নগর শাখার সম্মেলন ডেকে কাউন্সিলের মাধ্যমে আন্দোলনমুখী কমিটি ঘোষণা দেয়া হবে।
জেলা কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ : ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এসএম শফিকুল আলম মনাকে সভাপতি ও আমীর এজাজ খানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপির ২৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। একই বছরের ৬ ডিসেম্বর খুলনা জেলা বিএনপির ১৮১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। এছাড়া ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৭টির আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। ২টি পৌরসভার আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। আর তেরখাদা ও রূপসায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। একাধিকবার মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নতুন কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। শুধু জেলা বিএনপির কমিটি নয়; খুলনা বিভাগের প্রতিটি জেলা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটির উদ্যোগ নিয়েও বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে নতুন কমিটি দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট নেতারা।
জেলা বিএনপির সভাপতি এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, খুলনায় বিএনপির অবস্থান বরাবরই শক্তিশালী। ২০০১ সালের নির্বাচনে জেলার চারটি আসনের মধ্যে তিনটিই বিএনপি পেয়েছিল। মাঠ পর্যায়ের সাধারণ মানুষ বিএনপিকে মনেপ্রাণে চায়। বিএনপি এখন সাংগঠনিকভাবে যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত ও শক্তিশালী। সব পুরাতন কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেয়া হবে শিগগিরই। তবে কবে নাগাদ দেয়া হবে তা সাংগঠনিক সম্পাদকরা বলতে পারবেন।
নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, শক্তিশালী সংগঠন ছাড়া কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা যায় না। ধীরে ধীরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে দমন-নিপীড়নের যে ভীতি কাজ করছিল তার বাইরে এসে তারা রাজপথে নেমেছে। দল এখন দলের পুনর্গঠনের দিকে নজর দিয়েছে। তৃণমূলে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করা হবে। পূর্ণাঙ্গ শক্তি সঞ্চয় করেই বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে মাঠে নামবে।
একযুগ পর যশোর নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি : ২০০৯ সালের শেষের দিকে তৃণমূলের ভোটে মারুফুল ইসলাম মারুফকে সভাপতি ও মুনির আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে যশোর নগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে ২০১২ সালে শহরের বিডি হলে পরিচিতি সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একাধিক ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে ওই কমিটিতে স্থান না দেয়ায় কয়েকজন লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। যার ভিত্তিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ওই কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি করার নির্দেশ দেন। পরে ১০১ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।
সর্বশেষ গত ১ নভেম্বর সোমবার ১২ বছরের পুরনো কমিটি ভেঙে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির সভা থেকে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে মারুফুল ইসলাম মারুফকে আহ্বায়ক ও মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চুকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। সভায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলেও নগর কমিটির নেতারা কেউই আসেননি।
কোন্দল আছে, কোন্দল নেই : খুলনা বিভাগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তুলনামূলক কম। তবে বিভাগের তুলনায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত খুলনা জেলা বিএনপি। জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তারা দলীয় কর্মসূচি পালন করেন আলাদা ব্যানারে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের অনেকেই। যদিও সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়