‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

‘ভয়কে জয়’ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণের কারণে নির্ধারিত সময়ের সাড়ে আট মাস পর গতকাল রবিবার সারাদেশে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার ২১ মাস পর এই প্রথম কোনো পাবলিক পরীক্ষা শুরু হলো। ভিন্ন পরিস্থিতিতে এই পরীক্ষাও হচ্ছে ভিন্নভাবে। দীর্ঘ বিরতির পর পরীক্ষা হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় থাকলেও তারা ‘ভয়কে’ জয় করেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। পরীক্ষা শেষে অনেকেই বলেছেন, অটোপাসের চেয়ে এই পরীক্ষা অত্যন্ত ভালো।
এদিকে শিক্ষার্থীরা কোভিড বিধি মেনে কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও বাইরে অভিভাবকদের জটলায় তা উপেক্ষিত ছিল। কিছু কেন্দ্রে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থাও দেখা যায়নি। এর পাশাপাশি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও তীব্র যানজটের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন রাজধানীর অধিকাংশ পরীক্ষার্থী-অভিভাবক। রুটিন অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে পরীক্ষা। প্রথম দিন নেয়া হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা। এদিন সব শিক্ষা বোর্ড মিলে প্রায় ১১ হাজার পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পরীক্ষায় অসাধুপায় অবলম্বনের জন্য ১০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দেশের বাইরে এ বছর নয়টি কেন্দ্র- জেদ্দা, রিয়াদ, ত্রিপলি, দোহা, আবুধাবি, দুবাই, বাহরাইন, ওমানের সাহাম ও গ্রিসের এথেন্সে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এবার সব বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে না। শুধু গ্রুপভিত্তিক (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ইত্যাদি) তিনটি বিষয়ে সময় ও নম্বর কমিয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। আবশ্যিক ও চতুর্থ বিষয়ের মূল্যায়ন হবে জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার নম্বর ‘ম্যাপিং’ করে। সর্বশেষ ২০২০ সালের

ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হয়েছিল। চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ

শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১৮ লাখ ৯৯৮ জন। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৩ লাখ এক হাজার ৮৮৭ জন শিক্ষার্থী। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা দিচ্ছেন এক লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন। মোট ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে এবারের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার পরের মাসেই (মার্চ ২০২০) দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এরপর সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। এখন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিয়ে আবার দেশে পাবলিক পরীক্ষা নেয়া শুরু হলো। এ পরীক্ষা শেষ হবে ২৩ নভেম্বর।
দীর্ঘদিন পর পরীক্ষায় বসায় কোনো কোনো পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুরুতে একধরনের ভয় কাজ করে। মাস্কে নাক-মুখ ঢেকে, হাতে স্যানিটাইজার নিয়ে অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল তাদের ঢুকতে হয়েছে পরীক্ষার কেন্দ্রে। রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কোভিড বিধি মেনে কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও বাইরে অভিভাবকদের জটলায় তা উপেক্ষিত ছিল। কিছু কেন্দ্রে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থাও দেখা যায়নি। পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী ও কেন্দ্রের কর্মী ছাড়া অন্য কেউ যেন পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ না করে, সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ।
আগে সংবাদ সম্মেলনে এবং গতকাল কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েও শিক্ষামন্ত্রী অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীর সঙ্গে একজনের বেশি অভিভাবক না আসতে অনুরোধ জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু অভিভাবকরা এসব আহ্বান-অনুরোধ কানেই তোলেননি। মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গেই তিন-চারজন করে অভিভাবক এসেছেন। অভিভাবকদের ব্যাপক চাপে কেন্দ্রের প্রবেশপথে ঢোকা কঠিন হয়ে পড়ে। স্কুলের সামনের প্রধান সড়কে তৈরি হয় যানজট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিভাবকদের সরে যেতে বললেও তাতে কাজ হয়নি। এই কেন্দ্রের নিরাপত্তারক্ষী হজরত আলী বলেন, সবাইকে নিয়ম মেনে ঢুকাচ্ছি আমরা। মাস্ক পরে সবাই আসছে। স্যানিটাইজ করে ভেতরে নিচ্ছি।
শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের পরীক্ষার্থী তানজীম হোসেন জানান, দেরি হলেও পরীক্ষা দিতে পেরে তারা খুশি। অটোপাসের কথা তো আর শুনতে হবে না। পরীক্ষার কারণে পড়াশোনায়ও গতি এসেছে। এখন নিরাপদে পরীক্ষা দিতে পারলেই হয়। মতিঝিল বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়া ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী জেসি খান বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগে কিছুটা নার্ভাস লাগছিল। মনে ভয় কাজ করছিল। এ জন্য শুরুতে লেখায় কিছুটা ধীরগতি ছিল। তবে পরে ভয়ভীতি কেটে যায়।
পরীক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষার হলে, তখন বাইরে অভিভাবকরা ভিড় করে অপেক্ষায় ছিলেন। বিশেষ করে পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে এই ভিড় বেড়ে যায়। এ বিষয়ে রাজধানীর হাতিরপুল থেকে আসা মনিরুল আলম খান নামে এক অভিভাবক বলেন, পরীক্ষার কেন্দ্র মেয়ের অপরিচিত। তাই তার সঙ্গে এসেছেন তিনি। আবার পরীক্ষা শেষে নিয়ে যাবেন বলে এভাবে অপেক্ষা করছেন। তার পরামর্শ, যদি নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র করে শুধু পরিদর্শকদের অন্য বিদ্যালয় থেকে আনা হতো তাহলে ভালো হতো।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল সকালে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে বাইরে অভিভাবকদের ভিড় করার প্রসঙ্গে টেনে বলেন, সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষার হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়ার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা একটু যেখানে হচ্ছে, তা হলো বাইরে অভিভাবকরা ভিড় করেছেন। তারা হয়তো স্বাস্থ্যবিধি সেভাবে মানছেন না। তাই আবার অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন বাইরে ভিড় না করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা বরাবরের মতো আছে, থাকবে। কেউ যেন গুজবে কোনোভাবেই কান না দেন। যারা গুজব ছড়াবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়