কাগজ প্রতিবেদক : জমি বিকিকিনি নিয়ে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। চলছে পদে পদে হয়রানি। ভূমি অফিস থেকে শুরু করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস পর্যন্ত সর্বত্রই যেন হয়রানির ফাঁদ পাতা। সবখানেই দালালদের দৌরাত্ম্য। জাল দলিলের প্রবণতা কমলেও হাঁ করে আছে দুষ্টচক্র। সিন্ডিকেট করে নকল কাগজপত্র বানিয়ে মালিকানা সাজানোর ঘটনা ঘটছে অহরহ। জমি নিয়ে মানুষের অস্বস্তির কমতি নেই। এন্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থা বিবেচনায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার ই-রেজিস্ট্রেশন চালু করেছে। দেশের ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সীমিত পরিসরে এর কার্যক্রম চালু হয়েছে। ভোগান্তি নিরসনে আগামী বছর পর্যায়ক্রমে ৫০১টি রেজিস্ট্রি অফিসকে এর অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
একাধিক ভূমি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত মৌজা দরে জমি বিকিকিনি হয় না বললেই চলে। দলিলে ‘মৌজারেট’ উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে এর কয়েকগুণ বেশি দামে জমি বিকিকিনি চলছে। এ নিয়ে পেনশন মামলার কমতি নেই। জমির রকমভেদে চালা, নাল, ভিটি, বাড়ি, ডোবা, পুকুর, শাইল, আমনসহ কয়েকটি শ্রেণি রয়েছে। যার পরিবর্তন করে রেজিস্ট্রির অভিযোগ পুরনো হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরদারির কারণে তা এখন অনেকটা কমেছে। পর্চা, খারিজ, মূল দলিল, খাজনা নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। সিএস, এসএ, আরএস ও বিএস রেকর্ডেও নয় ছয়ের সুযোগ রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্মার্টকার্ড টেম্পারিং এবং জাল হচ্ছে। ভুয়া মালিক দাঁড় করিয়ে রেজিস্ট্রির অভিযোগও রয়েছে। সর্বশেষ বিএস জরিপে রেকর্ড নিয়ে ৩০ ও ৩১ ধারায় মামলার অন্ত নেই। মালিকানার সমস্যা নিরসনে জমির মালিকদের বছরের পর বছর ধরে ঘুরতে হচ্ছে আদালতে। জীবদ্দশায় মামলা শেষ করে যেতে পারেননি এমন নজিরও কম না।
এদিকে সাব-কবলা, ডিক্লারেশন হেবা ও অন্যান্য দলিলের জন্য সরকার ২০০ টাকা মূল্যের নীল কাগজে খারিজ করার বিধান চালু করলেও এতে দুর্ভোগ কমেনি বরং
বেড়েছে। নীল কাগজে ভূমি অফিস থেকে এক সপ্তাহে খারিজ হওয়ার কথা থাকলেও তা সাদা কাগজের নোটিসের পূর্বের ন্যায় ৫০ দিনই লাগছে। বিড়ম্বনা নিরসনে সরকারের উদ্যোগের সুফল মিলছে না। ভূমি অফিসে জমে থাকছে নীল কাগজে আবেদনের স্তূপ। কথিত সেরেস্তা নামের বোঝাও রয়েছে। একেক সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এজন্য একেক রেট নির্ধারিত। ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তা নির্ধারিত। এই টাকা দলিল লেখক কল্যাণ সমিতি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের স্টাফদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়ে থাকে। আবার নকল প্রাপ্তির জন্য এর পিছনে সরকার ফি ৬০০/৮০০ টাকা করে নেয়ার কথা থাকলেও বাংলা নকলে ১৩০০ টাকা এবং ইংরেজি নকলে ১৭০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। অফিস ভেদে এই রেট কমবেশি হয়। ঘুষ বাণিজ্যের ইয়ত্তা নেই। মূলত ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে যুগ যুগ ধরে চলা অস্বস্তিকর খবরের সুরাহা করতে উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যকর সুফল মিলছে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।