কক্সবাজার : জহিরুল হত্যার ঘটনায় শিবির নেতা গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ভয়কে জয়’ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

পরের সংবাদ

বিজয়ী বিদ্রোহীদের ভাগ্যে কী আছে : সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সাময়িক বহিষ্কার > ১৯ নভেম্বর আ.লীগের সভায় আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : কোনোভাবেই কমছে না আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা। এ নিয়ে দলটির হাইকমান্ড কঠোর অবস্থানে থাকলেও বিদ্রোহীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, বিজয়ী হচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন প্রায় ৯০০ জন। মোট বিজয়ীর ২৫ ভাগই বিদ্রোহী। প্রথম দফাতেও এ সংখ্যা কম ছিল না। আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় দফার নির্বাচন। এ নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ১ হাজারের বেশি নেতাকর্মী। দলটির কঠোর অবস্থানেও টনক নড়ছে না তাদের। যা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতি-নির্ধারকদের জন্য। কারণ বিদ্রোহী প্রার্থীরা দল মনোনীত প্রার্থীদের রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। আর তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছেন কিছু মন্ত্রী, সাংসদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা। ফলে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তারা। এত বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হচ্ছেন, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ। তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও আছেন। প্রশ্ন উঠছে তাদের নিয়ে কী ভাবছে ক্ষমতাসীন দলটি। বিদ্যমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে; নাকি দলীয় সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসবে।
দলটির কেউ কেউ বলছেন, এত সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয় দলকে ভাবিয়ে তুলছে। এ নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। আবার কারো কারো মতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ বিএনপি। বিএনপি নির্বাচনে এলে এত বিদ্রোহী হতো না। তবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী দিচ্ছে। অনেক জায়গায় তাদের প্রার্থী দুর্বল ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে পাস করিয়ে আনছে। এরকম তথ্য দলের হাইকমান্ডের কাছে আছে। এসব নিয়ে ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত বিদ্যমান সিদ্ধান্তের আলোকেই বিদ্রোহীদের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
চলমান নির্বাচন ঘিরে দলের বিদ্রোহী দমন ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে এরইমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে

চিঠি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। চিঠিতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় গতকাল শনিবার যশোরের মনিরামপুরে ১৭ জনকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। নাটোরের লালপুরে বহিস্কার হয়েছেন ৯ জন। ২৯ অক্টোবর মাগুড়ায় বহিষ্কার হয়েছে ৮ বিদ্রোহী প্রার্থী। ৮ নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে বহিষ্কার হয়েছেন ৯ জন। ২ নভেম্বর জামালপুরে বহিষ্কার করা হয়েছে ২২ নেতাকে। ৮ নভেম্বর সিলেটে বহিষ্কার হয়েছে ৮ জন। ৪ নভেম্বর যশোরের চৌগাছায় বহিষ্কার হয়েছে ১৩ জন। ৭ নভেম্বর ফরিদপুরে বহিষ্কার হয়েছেন ১০ জন। ৪ নভেম্বর সাতক্ষীরায় ৯ জন। ১২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ১২ জন। ৯ নভেম্বর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ৮ জন, ২ নভেম্বর খুলনার ডুমুরিয়ায় ১৫ জনকে বহিষ্কার করে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ। এছাড়া লালমনিরহাট, বরিশাল, রংপুরসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাইতেই অসংখ্য বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ীই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এতেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও উসকানিদাতাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের পাশাপাশি তাদের মদতদাতা নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার সম্মুখীন হবেন। তবে ভবিষ্যতে তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, তার কোনো সঠিক জবাব নেই সিনিয়র নেতাদের কাছেও।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোরের কাগজকে বলেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ তার সিদ্ধান্তে অনড় আছে। স্থানীয় নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের শোকজ করা হচ্ছে। বহিষ্কার করা হচ্ছে। যারা সরাসরি বিদ্রোহী প্রার্থী তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেই, তাদের সঙ্গে দলের যারা কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদের মদতদাতা এমপি বা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এ দলে কর্মীর অভাব নেই। দুর্দিনের অনেক ত্যাগী কর্মী আছে। সুতরাং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের দল থেকে ছেঁটে ফেলা হবেই। তারা দলের জন্য ভালো কখনোই হতে পারে না। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয়। কেউ যদি মনে করেন, তাকে ছাড়া দল চলবে না- সেটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। আগাছা ছেঁটে ফেলেই আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী হবে। দলের শৃঙ্খলা আরো সুসংহত হবে।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, দলের পরবর্তী মনোনয়ন পাবেন না, দলীয় পদচ্যুত হবেন জেনেও নিজ দায়িত্বে অনেকেই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। অনেকে নির্বাচিতও হচ্ছেন। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমার মনে হয়, বিষয়টি নিয়ে একটি নির্মোহ গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। যারা নির্বাচিত হচ্ছেন, নিশ্চয়ই তারা জনপ্রিয় বা স্থানীয় কোনো সমীকরণে নির্বাচিত হচ্ছেন। সব জায়গায় এক রকম চিত্র নয়। সুতরাং গড়পরতা কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ করে এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। একই সঙ্গে সমাজে ছড়িয়েপড়া অহিষ্ণুতা কমিয়ে এনে পরমতসহিষ্ণু একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সবার উপরে দেশ- এই ভাবনায় গোটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশ আবার পথ হারাবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে। সেখান থেকে একটা সিদ্ধান্ত আসবে। বিদ্রোহীদের বিষয়ে আমাদের বিদ্যমান সিদ্ধান্ত বহালও থাকতে পারে, কিংবা আরো কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে অথবা সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে।
দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া ভোরের কাগজকে বলেন, এর আগে বিভিন্ন নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে- তারা যত জনপ্রিয়ই হোক না কেন আর কোনোদিন নৌকা প্রতীক পাবেন না। এটি আমাদের দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। গত নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন বা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, তাদের নাম এবারো তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে পাঠানো হলেও তাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না। চলমান নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও আমাদের একই ধরনের সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে। ভবিষ্যতে তারা নৌকার প্রার্থী কিংবা দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ পাবেন না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৃণমূলে চিঠি দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্তও নেয়া হচ্ছে। বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিএনপিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিত, তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির প্রতিদ্ব›িদ্বতা হতো। বিদ্রোহ অনেক কমে যেত। কারণ অন্য দল নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে না এলেও স্বতন্ত্র হিসেবে শতশত প্রার্থী দিয়েছে। যেখানে তাদের প্রার্থী দুর্বল, সাংগঠনিক শক্তি নেই। সেখানে তারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ওপর ভর করেছে। তাদের সমর্থন দিচ্ছে। অর্থ দিচ্ছে। তাদের সাংগঠনিক শক্তি কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পাস করে আসছে। এসব বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য এসেছে। আগামী সপ্তাহে আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির সভা আছে, সেখানে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়