দেয়াল চাপায় শিশুর মৃত্যু : কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিস

আগের সংবাদ

বিজয়ী বিদ্রোহীদের ভাগ্যে কী আছে : সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সাময়িক বহিষ্কার > ১৯ নভেম্বর আ.লীগের সভায় আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

মোমেনের পদত্যাগ দাবি : সাম্প্রদায়িকতা বন্ধে কঠোর হওয়ার তাগিদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেনের (২৮ অক্টোবর) বিবৃতির প্রতিবাদে তার আশু পদত্যাগ দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিকে ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ ও সত্যের অপলাপ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছে সংগঠন দুটি। এছাড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধে কঠোর হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বিকালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারাদেশে আয়োজিত ধিক্কার মিছিলে এই দাবি করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ঐক্যমোর্চার প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত স্বাক্ষরিত এক ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাব চত্বরের সমাবেশ থেকে। ঢাকায় এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, গত ১৩ অক্টোবর মহাষ্টমীর দিন থেকে গত ১ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৭টি জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলায় ১১৭টি মন্দির ও পূজামণ্ডপ, ৩০১টি বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে মোট ৪ জন ছাড়া আরো ৫ জন হিন্দু হত্যার শিকার হয়েছে। নিহত ৫ জনের মধ্যে ১৩ অক্টোবর সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণের মুখে কুমিল্লার রাজ রাজেশ্বরী মন্দিরের গেট বন্ধ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীর আঘাতে গুরুতর জখম দিলীপ দাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২১ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। একই দিন সকাল ১১টায় কুমিল্লার চাঁদমনি কালীমন্দির সংলগ্ন বাড়িতে বসবাসরত অধীর সাহা (৮০) মন্দির আক্রমণ ও ধারালো অস্ত্রসহ দুষ্কৃতকারীদের আস্ফালন দেখে তাৎক্ষণিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। ১৫ অক্টোবর চৌমুহনীতে ইস্কন মন্দিরের ভক্ত যতন সাহা (৩৫) মন্দির রক্ষা করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। একই দিনে ইস্কন মন্দিরের সন্যাসী প্রান্ত দাসকে (৩০) কুপিয়ে পুকুরে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। পরের দিন সকালে প্রান্ত দাসের মৃতদেহ ভেসে উঠলে তার মা মৃতদেহ শনাক্ত করেন। উপস্থিত জনগণ ও প্রান্ত দাসের মার বক্তব্য অনুযায়ী, মৃতদেহের মাথায় ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের কোপের দাগ ছিল। চাঁদপুর হাজীগঞ্জে বিভিন্ন মন্দির ও বসতবাড়িতে সন্ত্রাসীদের হামলা এবং তাণ্ডবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হাজীগঞ্জের মানিক সাহা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপত্বিত করেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। বক্তব্য রাখেন অন্যতম সভাপতি ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, সাংবাদিক স্বপন সাহা, মিলন কান্তি দত্ত, জয়ন্ত কুমার দেব, এডভোকেট তাপস পাল, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, এডভোকেট শ্যামল কুমার রায়, প্রভু চারু চন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী প্রমুখ। এ ধিক্কার মিছিলে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ছাড়াও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় হিন্দু মহাজোট, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন, শ্রীশ্রী ভোলানন্দগিরি আশ্রম ট্রাস্ট, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, বাংলাদেশ ঋষি পঞ্চায়েত ফোরাম, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ অংশগ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুর্গোৎসবের সময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিষয়ে প্রচারিত ঘটনাবলিকে ‘চলমান প্রপাগান্ডা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘এতে ৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৪ জন মুসলিম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘাতে; আর ২ জন হিন্দু মারা গেছেন। একজনের মৃত্যু স্বাভাবিক, আরেকজনের মৃত্যু পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে। কোনো মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। ২০টি বাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। অতি উৎসাহী কতিপয় গণমাধ্যম ও ব্যক্তি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মনগড়া কাহিনী প্রচার করছে সরকারকে হেয় করার জন্যে-’। বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘জানতে পেরেছি, মাদকাসক্ত একজন পবিত্র কুরআনের একটি কপি দেবতার পায়ের কাছে রেখে যায়-’।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাম্প্রদায়িকতা চলাকালে প্রধানমন্ত্রী ও এর পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সামগ্রিক ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে যেভাবে বক্তব্য রেখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তার সম্পূর্ণ বিপরীত। যা পৃথিবীজুড়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ঘোষণার আলোকে ও এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত সুষ্ঠু বিচার এবং সরকারি দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রæত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্যে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন ছাড়াও জাতীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানানো হয়।
এদিকে সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়ে সুরমা পয়েন্ট হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্য পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ঐক্য পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, সংগঠনের সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দেব প্রমুখ। বক্তারা সব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দ্রুত বিচার ও শাস্তি দাবি করে সা¤প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধে কঠোর হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়