দেয়াল চাপায় শিশুর মৃত্যু : কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিস

আগের সংবাদ

বিজয়ী বিদ্রোহীদের ভাগ্যে কী আছে : সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সাময়িক বহিষ্কার > ১৯ নভেম্বর আ.লীগের সভায় আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নেয়ার নির্দেশনা : ক্ষুব্ধ, হতবাক নারী-মানবাধিকার কর্মীরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টার পর পুলিশ যেন মামলা না নেয়- আদালতের এমন নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ-হতবাক নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা। রায় ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকেই এই নির্দেশনার প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা। প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতিও দিয়েছে। নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আদালতের এ নির্দেশনা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনার মূলে কুঠারাঘাত করেছে। এ নির্দেশনার ফলে সমগ্র বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, নতুন করে আস্থার সংকট ঘটানো হয়েছে। ধর্ষণের মতো অপরাধ করার পরও অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। কারণ ধর্ষক বা ধর্ষকরা ভুক্তভোগীকে ৭২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখতে পারলেই নিজেদের বিচারের আওতামুক্ত থাকা নিশ্চিত করে নিতে পারবে।
গণমাধ্যমে পাঠানে এক বিবৃতিতে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, ৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হলে মামলা না নেয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মামলা রুজু করার জন্য বিধিনিষেধ বিচার প্রাপ্তির সুযোগ সংকোচিত করবে যা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি। তাছাড়া মেডিকেল রিপোর্টই ধর্ষণ মামলার একমাত্র এভিডেন্স নয়। আরো অনেকগুলো পারিপার্শি^ক এভিডেন্স থাকে- সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে মামলার বিচার এগিয়ে চলে। বিচারিক আদালত যদি এ ধরনের বিধিনিষেধ তৈরি মন্তব্য দেয় ভবিষ্যতে ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
তারা আরো বলেন, আমরা জানি, প্রচলিত আইন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে রিভিউ করার ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী কেবল সুপ্রিমকোর্টের আছে। দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য সাধারণ জনগণ এবং ভুক্তভোগীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেইসঙ্গে প্রচলিত ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকায় নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যার মৌলিক মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত

হচ্ছে। এ ধরনের আইন বাতিল করে সমতাপূর্ণ, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন আইন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।
প্রগতিশীল নারী সংগঠনসমূহের সমন্বয়ক ও সিপিবি নারী সেলের আহ্বায়ক ল²ী চক্রবর্তী, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি রওশন আরা রুশো, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালি, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, নারী সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতার লিমা, বিপ্লবী নারী ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক আমেনা আক্তার গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টার পর পুলিশ যেন মামলা না নেয়- আদালতের এমন নির্দেশনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষণের ক্ষেত্রে দেখা যায় ১০০টি ঘটনার মধ্যে গড়ে মাত্র ২৩টি ঘটনায় মামলা হয়। প্রভাবশালীদের দাপটে মামলা ও বিচার অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাবিত হয়। ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টার পর পুলিশ যেন মামলা না নেয় আদালতের এমন নির্দেশনায় অর্থ ও ক্ষমতাধারী অপরাধীরা অসহায়-দরিদ্র ভিক্টিমদের ৭২ ঘণ্টা মামলা করতে না দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারে। এই নির্দেশনা প্রভাবশালী অপরাধীদেরই সহযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশে আইন-আদালতও ক্ষমতা ও অর্থের দাপটে প্রভাবিত হয় এর আগেও দেখা গেছে। এর আগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় প্রধান আসামি হওয়া এবং নানা ধরনের সংশ্লিষ্টতা সংবাদ মাধ্যমে আসার পরও পুলিশের চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আদালতের এ ধরনের নির্দেশনা অর্থ ও ক্ষমতাধারী অপরাধীরা তাদের নিজেদের স্বার্থে অপব্যবহার করার সুযোগ পাবে এবং অসহায়, দরিদ্র, প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সামগ্রিকভাবে সব নিপীড়িত নারীদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে- এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এই নির্দেশনা পরিত্যাগ করতে অনুরোধ জানান নেত্রীরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণবান্ধব সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের দাবিতে ‘শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা’র পর সংসদ ভবনের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শাহবাগ জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। পরে এটি সিটি কলেজ, কলাবাগান হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়। এই কর্মসূচি থেকে আগামীকাল রবিবার সকালে আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এই প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারীরা। এ সময় তারা নানা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী শিরীন হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, ‘শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা’র সংগঠক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসীসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষণ হলো একমাত্র অপরাধ, যেখানে অপরাধ ঘটার পর অপরাধের বিচারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় অপরাধের শিকার নারীর চলন-বলন ও পোশাকের দিকে। প্রতিটা ধর্ষণের অভিযোগের পর সমাজের আচরণ দেখে মনে হয়, যেন এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বৈষম্যমূলক মানদণ্ড অনুযায়ী নারীর চলন-বলন ঠিক না থাকলে তার সঙ্গে অন্যায় হওয়াটাই স্বাভাবিক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়