গাজীপুরে কেমিক্যাল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

আগের সংবাদ

বাজার অস্থির দিশাহারা মানুষ : নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আরেক দফা বাড়বে

পরের সংবাদ

তেলের দাম বাড়ার প্রতিক্রিয়া সড়কে : ডিজেলের দাম বাড়ালেও ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি > পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন সেক্টরে ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সব রুটে ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। ভাড়া বাড়ানো না হলে পরিবহন ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোকে যেমন যৌক্তিক বলে দাবি করা হয়েছে, তেমনি পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও ভাড়া বাড়ানোর দাবিকে যৌক্তিক বলে মনে করেন। পরিবহন নেতারা বলছেন, হঠাৎ করে জ¦ালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো অযৌক্তিক। এ অবস্থায় পরিবহনের ভাড়া না বাড়িয়ে গাড়ি রাস্তায় নামালে মালিক-শ্রমিকদের লোকসান গুনতে হবে। পরিবহন সেক্টরের বিভিন্ন সংগঠন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। বাস মালিকদের পাশাপাশি ট্রাকসহ পণ্য পরিবহন মালিকরাও ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সরকার পেট্রল ও ডিজেলের দাম কমালেও বাংলাদেশে হঠাৎ করেই দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, গত বুধবার হঠাৎ করে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে। প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয় ১৫ টাকা। এই ঘোষণার পর সব রুটে বাস ভাড়া বাড়ানোর জন্য বাস মালিক সমিতি বিআরটিএর কাছে লিখিত আবেদন করে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ তাদের এ দাবিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে বলেন, সরকারের জ্বালানি মন্ত্রণালয় হঠাৎ করেই এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। এর ফলে সব পরিবহনকে তেলের অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধে হিমশিম খেতে হবে। ভাড়া না বাড়ালে বাস চালানো সম্ভব হবে না। এজন্যই আমরা বাস ভাড়া বাড়ানোর জন্য বিআরটিএর কাছে আবেদন করেছি। চেসিস, টায়ার-টিউব ও খুচরা যন্ত্রাংশের দাম দফায় দফায় বেড়েছে, সরকারের ফি বেড়েছে কিন্তু ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এ কারণে বাস ভাড়া বাড়ানোর আমাদের দাবিও যৌক্তিক।
এদিকে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোকে যৌক্তিক মনে করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এ কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করছে। আমরাও এটা পুনর্নির্ধারণ করেছি। গত ১ নভেম্বর ভারতের বাজারে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ১২৪ দশমিক ৪১ টাকা বা ১০১ দশমিক ৫৬ রুপি ছিল। অথচ বাংলাদেশে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা। দাম কম থাকার ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে তেল পাচারের আশঙ্কা রয়েছে। এটা হলে ক্ষতি আরো বেশি হবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার শুধু ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫

টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করেছে। নতুন এ দাম বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে থাকায় ‘লোকসান কমাতে’ দেশের বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের চাহিদা পূরণে প্রতি বছর ৪০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করা হয়। অকটেন আমদানি করা হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন। প্রায় সমপরিমাণ পেট্রল উৎপাদন করা হয় দেশীয় উৎস থেকে। আগে পেট্রল ও অকটেন বিপণনে বিপিসির মুনাফা থাকলেও এখন শুধু লোকসান দিতে হচ্ছে। সরকার সর্বশেষ ২০১৬ সালে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৪০ থেকে ৫০ ডলারের কাছাকাছি।
অন্যদিকে পরিবহনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জ¦ালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে। আবার কোনো কোনো সংগঠন এরই মধ্যে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংক লরি-প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম না কমালে আজ শুক্রবার থেকে সমন্বয় পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ট্রাকসহ পণ্য পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। আমরা এ ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নিয়েছি। কারণ এ অবস্থায় গাড়ি চালালে মালিকদের লোকসান গুনতে হবে। সরকারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমাতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তেজগাঁও কার্যালয় থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
জ¦ালানি তেলের দাম না কমালে আজ শুক্রবার থেকে রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রামের বিভাগীয় সভাপতি মো. মুছা বলেন, তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যমান ভাড়ায় গাড়ি চালিয়ে পোষানো সম্ভব নয়। ধর্মঘটের বিষয়টি আমাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগর, উত্তর, দক্ষিণ সব এলাকার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, ৮০ টাকা করে তেল কিনে গাড়ি চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল বলেন, হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এভাবে মালিক-শ্রমিকদের পক্ষে গাড়ি চালানো খুব কষ্টকর। এর প্রভাব পড়বে ভাড়ায়। কিন্তু ভাড়া বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
রাজশাহী বিভাগেও পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি ও রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, হঠাৎ তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো খুবই অস্বাভাবিক। এ অবস্থায় ভাড়ার সঙ্গে তেলের দামের সমন্বয় হচ্ছে না। ভাড়া না বাড়ালে পরিবহন মালিকদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। ভাড়া সমন্বয় করা না হলে শুক্রবার থেকে রাজশাহী বিভাগের সব রুটে বাস, ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। মালিক-শ্রমিকরা সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কনজ্যুমার’স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন ছড়াবে। দামের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে এর প্রভাব সব স্তরে পড়বে। ভোক্তা পর্যায়ে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কেরোসিন-ডিজেলের দাম বাড়ায় পণ্য পরিবহন, যাতায়াতে ব্যয় বাড়বে। এতে ব্যবসায়ীরা প্রতিটি পণ্য ও সেবার দাম বাড়িয়ে দিলে জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সরকারকে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলো।
সাধারণ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এলপিজির দাম বাড়ার কারণে জীবনযাত্রায় চাপ পড়েছে। এর মধ্যেই আবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর প্রভাব প্রতিটি নাগরিকের জীবনে পড়বে। কৃষিকাজ ও গণপরিবহনে ব্যয় বাড়বে। পরিবহন খরচ বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। এভাবে জ্বালানির দাম বাড়ানো একেবারেই অযৌক্তিক। জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানো আত্মঘাতী ও জনবিরোধী সিদ্ধান্ত।
এদিকে ভারতে পেট্রল ও ডিজেলের দাম কমেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল-ডিজেলের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক কমিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিবৃতি অনুযায়ী প্রতি লিটার পেট্রলে শুল্ক কমানো হয়েছে ৫ রুপি এবং লিটারপ্রতি ডিজেলে শুল্ক কমানো হয়েছে ১০ রুপি। সরকারি শুল্ক হ্রাস করার ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশটির খুচরা বাজারে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমবে। দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে জনগণের প্রতি ‘উপহার’ হিসেবে শুল্ক হ্রাসের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়