‘ভীষণ এক্সাইটেড ও নার্ভাস’

আগের সংবাদ

নির্বাচন ঘিরে বারবার নির্যাতন : ইস্যু যাই হোক হামলার লক্ষ্যবস্তু ‘সংখ্যালঘু’, স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ধর্ম’

পরের সংবাদ

১১ পাচারকারী গ্রেপ্তার : ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে শতাধিক নারী পাচার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় পাচার হওয়ার আগমুহূর্তে এক নারীসহ সর্বমোট ২৩ জনকে উদ্ধার করা হয়। ভারতে নারীপাচার চক্রের হোতা কামরুল ইসলাম ওরফে জলিল ওরফে ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুলসহ (৩৭) তার চক্রের সদস্য রিপন মোল্লা (২২), আসাদুজ্জামান সেলিম (৪০) ও নাইমুর রহমান ওরফে শামীমকে (২৫) মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচার চক্রের হোতা নুর-নবী ভূঁইয়া রানা (৪৪) ও তার চক্রের সদস্য আবুল বাশার (৫২), আল ইমরান (৪১), মনিরুজ্জামান (৩৫), শহিদ সিকদার (৫৪), প্রমোদ চন্দ্র দাস (৬২) এবং টোকনকে (৪৫) রাজধানী বনানী, পল্লবী, তেজগাঁও এবং উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে ৫৩টি পাসপোর্ট, ২০টি মোবাইল, ৮ বোতল বিদেশি মদ, ২৩ ক্যান বিয়ার, ২টি মোটরসাইকেল, ১টি ল্যাপটপ, ১ সেট কম্পিউটার, ৯১ হাজার ৪০ টাকাসহ মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র জব্দ করা হয়।
পাচারকারীদের মধ্যে অন্যতম গ্রেপ্তার কামরুল সিনেমাতে নৃত্যশীল্পী হিসেবে কাজের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়াও ঢাকায় ড্যান্সক্লাব প্রতিষ্ঠা করে সে। তবে এর আড়ালে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুন্দরী তরুণীদের নাচ শেখানোর নামে ভারতে পাঁচারের জন্য টার্গেট করত

কামরুল। একসময় ফাঁদে ফেলে ভারতে টার্গেটকৃতদের পাচার করে দিত এ ব্যক্তি। শুধুমাত্র এ চক্রের মাধ্যমেই গত ২-৩ বছরে শতাধিক তরুণী পাচার হয়েছেন। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যে পাচারকারী চক্রটি গত ৫ বছরে অন্তত ৩৫ জন নারীকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পাচার করেছে। এ ছাড়াও বৈধভাবে আরো প্রায় ২৫০ জন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে গেলেও কথা অনুযায়ী তাদের কাজ দেয়া হয়নি, উল্টো বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে র‌্যাব-৪ কার্যালয়ে ১১ নারী পাচারকারী গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশে মানবপাচারকারী চক্রের হোতা ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুলসহ এ চক্রের সদস্য প্রায় ১৫-২০ জন। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি সক্রিয়ভাবে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে প্রথমে চক্রটি নাচ শেখানোর নামে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুন্দরী তরুণীদের ঢাকায় নিয়ে আসত। একসময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করিয়ে তাদের বেপয়োরা জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে ফেলা হতো। পরবর্তী সময়ে তাদের পার্শ্ববর্তী দেশে আরো উন্নত জীবনযাপনের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে দেয়া হতো। তিনি আরো বলেন, কখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার নামে তরুণীদের গ্রুপ নিয়ে ভারতে যেত কামরুল। সেখানে নিয়ে তরুণীদের বিক্রি করে দেয়া হতো। এভাবে চক্রটি গত ২-৩ বছরে প্রায় শতাধিক মেয়েকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে। সেখানে মূলত অনৈতিক কাজ করানোর উদ্দেশ্যে তাদের পাচার করা হতো। এ ছাড়া ভিকটিমদের প্রথমে সীমান্ত এলাকার সেফ হাউসে রাখা হতো। সীমান্তের ওপারে সিন্ডিকেটের যোগসাজশে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে পাচার করা হয় অনেককে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক চক্রটি বিভিন্ন দেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচার করত উল্লেখ করে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, এ চক্রে দেশে ১০-১২ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ৫-৭ বছর ধরে হাউসকিপিং, নার্স, রেস্টুরেন্ট পেশায় নারী কর্মীদের বিনা অর্থে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সি তরুণী ও মধ্য বয়স্ক নারীদের প্রলুব্ধ করত এই চক্রটি। মূলত বিদেশে পাচারের মাধ্যমে ভিকটিমদের বিক্রি করে দেয়া হতো। এখন পর্যন্ত চক্রটি ইতোমধ্যে ৩০-৩৫ জন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। এ ছাড়া বৈধভাবে অন্তত আরো ২০০-২৫০ জন নারীকে বিদেশে নিয়ে গেলেও তাদের নির্ধারিত কাজ না দিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। কখনো তাদের সেসব দেশে আটকে রেখে স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো। মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারকারী চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার নুর-নবী ভূঁইয়া রানার নেতৃত্বে ঢাকায় কয়েকটি সেফ হাউস পরিচালনা করা হতো জানিয়ে মঈন বলেন, বেশ কয়েক দিন সেসব সেফ হাউসে ভিকটিমদের আটকে রেখে পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করা হয়। প্রথমত তারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠতি বয়সি ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল যুবক-যুবতী এবং মধ্যবয়স্ক নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলত। তাদের বিদেশে বিভিন্ন লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়, এতে তারা রাজি হলে প্রথমে ঢাকায় সেফ হাউসে রেখে ভুয়া প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। এ সময় কোনো নারী বিদেশে যেতে অনীহা প্রকাশ করে পাসপোর্ট ফেরত চাইলে তাদের কাছ থেকে দেড়-দুই লাখ টাকা আদায় করা হতো। নুর-নবী ভূঁইয়া রানা ১৯৯৮ সাল থেকে দুবাই-ওমানে প্রবাসী হিসেবে কাজ করে। ওমানে থাকা অবস্থায় মানবপাচারকারী একটি চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন থেকেই মানবপাচার কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। গত বছর ওমান থেকে দেশে ফিরে মানবপাচারের সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়