ডেঙ্গুতে ৯১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত সাড়ে ২৩ হাজার

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সংঘাত থামছেই না : সংঘর্ষে জড়িতদের তালিকা করছে আ.লীগ, অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এক মাসে নিহত ৮, নির্বাচনী সংঘর্ষে ৩৮ নিহত

পরের সংবাদ

নির্বাচন ঘিরে বারবার নির্যাতন : ইস্যু যাই হোক হামলার লক্ষ্যবস্তু ‘সংখ্যালঘু’, স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ধর্ম’

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : কেবল ধর্ম অবমাননার গুজব তুলেই নয় জাতীয়সহ বিভিন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও চলে ‘সংখ্যালঘু’ নির্যাতন। এককথায় স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে সব সময়ই ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মামলা হয়। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় প্রতিশ্রæতি। চলে দোষারোপের রাজনীতি। কিন্তু কিছুদিন যেতেই ইস্যু চাপা পড়ে যায়। অপরাধীরাও বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায়।
মানবাধীকার কর্মী ও সংখ্যালঘু নেতারা বলছেন, ১৯৭৫ পরবর্তী কোনো জাতীয় নির্বাচন সংখ্যালঘুদের জন্য সুফল বয়ে আনেনি। এনেছে নির্যাতন আর আর্তনাদ। অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। হামলা ও লুটের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেবালয়ও। মন্দির-মণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা এখন হরহামেশাই হচ্ছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার কুশীলব হিসেবে রয়েছেন পরাজিত ও জয়ী সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও দলীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা সংখ্যালঘু অজুহাতে নির্যাতনের সময় নীরব ভূমিকা পালন করে। অতীতের রেকর্ড সেই প্রমাণই দিচ্ছে। যা কেবল হতাশই করে সংখ্যালঘুদের।
নির্বাচন মানেই যেন সংখ্যালঘু নির্যাতন : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর একটি বিশেষ ভোট ব্যাংকের তকমা নিয়ে দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা চালানো হয় তা ১৯৪৭, ১৯৫০, ১৯৬৪, ১৯৯০, ১৯৯২ সালের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় ঘটেছে। ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নেমে আসে নানামুখী নির্যাতন। এ সময় ৩৫২টি মন্দির আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। সংখ্যালঘু মেয়েদের ধর্ষণ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন-উত্তর সহিংসতার শিকার হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়ানক। গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, জোর করে বিয়ে, ধর্মান্তরিত করা, চাঁদা আদায় ও সম্পত্তি দখল- কোনো কিছুই যেন বাদ ছিল না সে সময়। অভিযোগ রয়েছে- ভোলার চরফ্যাশনে এক রাতে দুই শতাধিক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়। এই দুটি ঘটনার সময় বিএনপি-জামায়াত

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পরও সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা হয়। অবস্থা এমন যেন, সাঈদীর রায়ের জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ই দায়ী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বা জামায়াত অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, নির্বাচনের পর আবার আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসেছে। তারপরও যশোরসহ দেশের কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর ভোটপরবর্তী সহিংসতা চলে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরও একই চিত্র। শুধু তাই নয়, ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে ২০১১ সালে। স্কুলের ছাত্রদের দিয়ে মিছিল করানো হয়। জীবন বাঁচাতে অনেক দিন পালিয়ে থাকতে হয় ওই সংখ্যালঘু শিক্ষককে। পরে জানা যায়, ওই শিক্ষকের ওপর স্কুলের রুটিন তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তার করা রুটিনে কারো কারো কোচিং ব্যবসায় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
রিপোর্ট কী বলে : আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ৬৭৯টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ বছরে গড়ে প্রায় ৪৬০টি ঘটনা ঘটেছে গত আট বছরে। এসব ঘটনায় ১১ জন খুন হয়েছেন এবং ৮৬২ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, মন্দিরে হামলা এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্বব্যাংকের ‘ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন’ নামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে ধর্মীয় স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১০০-তে ৭৮। যেটি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মোটামুটি একই রকম ছিল। ১৯৯৬ সালে তা হয় ৮৮। ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত এটি ছিল ৮৬। ২০০১ সালে এটি কমে ৭৯ হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকেই বাংলাদেশের পিছু হটা শুরু হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল প্রতিবছর এটি বেশ খানিকটা করে কমতে কমতে ২০০৫ এবং ২০০৬ উভয় বছরেই ৬৮-তে নেমে আসে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। ২০১২ পর্যন্ত এটি ৭৩ এবং ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে ৬৮-তে নেমে আসে। দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে স্কোর যেখানে ছিল ৬৫; ২০১৯ সালে তা হয়ে যায় ৪১। আর ক্যাটো ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর হিউম্যান ফ্রিডম ইনডেক্স প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরে ধর্মীয় এবং অন্যান্য নির্যাতনবিষয়ক যে পরিমাপকটি তারা ব্যবহার করে সেটি ক্রমান্বয়ে বেড়ে গেছে।
ক্রমান্বয়ে কমছে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী : পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমছে। নিরাপত্তা এবং পরবর্তী বংশধরদের কথা ভেবেই দেশ ছাড়ছেন অনেকে। বাংলাদেশের আদম শুমারি অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালে দেশে মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু। ১৯৫১ সালের এ সংখ্যা ২২ শতাংশ, ১৯৬১ সালে ১৮ দশমিক ৫ ভাগ, ১৯৭৪ সালে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৯৮১ সালে ১২ দশমিক ১ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০০১ সালে ৯ দশমিক ২ শতাংশ আর ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনগোষ্ঠীর ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সংখ্যালঘু। তবে ২০১৪-১৫ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক তথ্য অনুযায়ী, দেশে সংখ্যালঘুর সংখ্যা বেড়েছে। শতকরা হিসেবে এই সংখ্যা ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।
বারবার কেনো সংখ্যালঘুরই লক্ষ্যবস্তু : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ১০ বছরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বড় ঘটনা ঘটেছে অনেকগুলো। কিন্তু এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও আজ পর্যন্ত তাদের কোনো শাস্তি হয়নি। অথচ একটি ফেসবুক পোস্টের জন্য ভিন্ন সম্প্রদায়ের এবং প্রগতিশীল মানুষের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। চলছে হয়রানি এবং বিনাবিচারে দীর্ঘদিন কারাবরণ। এসব ঘটনা প্রমাণ করে বাংলাদেশ গত প্রায় এক দশক ধরে প্রগতির উল্টো পথে হাঁটছে। কতিপয় রাজনৈতিক দল এমনকি ব্যক্তিকেন্দ্রিক দাবি-দাওয়া নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর ওপর জ্বালাও-পোড়াওয়ের নৃশংসতা চালানো হয়। আইনের আশ্রয় নিলে নির্যাতনে মাত্রা বাড়ে বৈ কমে না।
দোষারোপের রাজনীতি চলছেই : শনিবার দিনাজপুরের এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে এবং সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে ভোট আদায়ের চেষ্টা করে- সেই চক্র অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িক উগ্রগোষ্ঠী দেশের পূজামণ্ডপসহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে। সেগুলো ধীরে ধীরে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হচ্ছে।
২৮ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করেছিলেন জিয়া, এরশাদ পরিচর্যা করেছেন। খালেদা জিয়ার সময়ে এর রক্ষণাবেক্ষণের ফলে শেকড় গভীরে পৌঁছে যায়। কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার ঘটনায় বিএনপি জড়িত। এটা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। সারাদেশে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে। জড়িতরা যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পূজামণ্ডপসহ যেসব বাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে, তাতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে জনগণের নিরাপত্তা দিতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সরকারের যেহেতু জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, জনগণের ভোট তারা পায় না। এজন্য জনগণের দৃষ্টিটাকে ভোটের অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার থেকে সরানোর জন্য সরকার এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় দোষারোপের রাজনীতি প্রসঙ্গে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, এখানে ভোটের রাজনীতির হিসাব-নিকাশ কাজ করেছে। প্রগতিশীলদের সঙ্গে নেয়ার ক্ষেত্রেও তারা চরম ব্যর্থ হয়েছে। যে নাগরিক সমাজ তাদের সহযোগী হতে পারত, তাদেরও তারা সরিয়ে দিয়েছে। স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিতরাও ভোটের জন্য সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছে। ২০ বছর ধরে হাজার হাজার হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো এখনো অস্বীকৃতির মধ্যে আছে। তারা একে অন্যকে দোষারোপের মধ্যে আছে। তিনি মনে করেন, ১৯৭৫ সালের পর দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প বপন করা হয়েছে। সেটি ২০ বছর ধরে বাধাহীনভাবে চলেছে। এরপর যারা এসেছে তারা সেটি দূর করতে পারেনি। এমনকি সেভাবে তারা চেষ্টা না করে অঙ্কুরিত বিষবাষ্পে জলসিঞ্চন করেছে।
আইনমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি : সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়েছেন সংখ্যালঘুরাও। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন দাবি করেন, দেশে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় কেউ ধর্ষিত হননি এবং একটি মন্দিরেও অগ্নিসংযোগ কিংবা ধ্বংস করা হয়নি। ধর্মীয় সহিংসতায় এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়জন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন মুসলমান। তারা হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়ার চেষ্টার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। আর যে দুজন হিন্দু মারা গেছেন তাদের মধ্যে একজনের সাধারণ মৃত্যু ও অন্যজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। ২৯ অক্টোবর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বিবৃতি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়।
সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পর বিভিন্ন সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন বিষয়ে ‘ত্বরিত ব্যবস্থা’ নেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের কথা থেকে সরে এসেছেন তিনি। আনিসুল হক বলেছেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের কোনো প্রয়োজন নাই। কারণ দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা সেখানেই সংরক্ষিত করে গেছেন। সম্ভব হলে সংসদের এই অধিবেশনে আর না হলে আগামী অধিবেশনে সাক্ষী সুরক্ষা আইনটি বিল আকারে উত্থাপন করা হবে। এই আইনটি হবে সব ধরনের মামলার সাক্ষীদের জন্য। শুধু সংখ্যালঘু নির্যাতনের মামলার সাক্ষীদের জন্য নয়।
সংখ্যালঘু কমিশন প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, এটা নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। সেই নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসে প্রধানমন্ত্রী এর সব দিক ভেবে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে যতক্ষণ পর্যন্ত না একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত দেবেন তার আগ পর্যন্ত কমিশনের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
সংখ্যালঘু নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা যা বলছেন : শনিবার এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান, আদিবাসী নির্বিশেষে এদেশের ৩০ লাখ মানুষ একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণ রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। ধর্মের নামে বৈষম্য, পীড়ন, হত্যা ও সন্ত্রাস চিরতরে নির্মূল করার জন্য বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে নেয়ার পাশাপাশি ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। ’৭১-এর পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা এবং তার অন্যতম প্রধান সহযোগী চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাকিস্তানপন্থি মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বারবার হামলা সেই চক্রান্তেরই অংশ। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে নির্মূল করতে হলে অবশ্যই বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাদের সব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও মনে করেন, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনে নির্বাচন ইস্যু একটি অন্যতম বিষয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকা আশানুরূপ নয়। আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও সামাজিক অনুশাসনে বহুত্ববাদের স্বীকৃতি ও চর্চার বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে। যার ফলশ্রæতিতে এদেশের সংখ্যালঘুরা নিজ দেশেই ঐতিহাসিক কাল ধরে বসবাস করা সত্ত্বেও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবহেলা ও বঞ্চনা শিকার হচ্ছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় গেলে তারা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেই দাবি জানিয়ে আসছি। এখন নানা রকম টালবাহানা চলছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। বিচারহীনতার কারণেই বারবার সংখ্যালঘুদের ওপর ঘটছে এসব হামলা। এত এত হামলা ও সহিংস ঘটনা ঘটল একটিরও বিচার হয়নি। ২০০১ সালের সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর ওপর তদন্ত সম্পর্কিত সাহাবউদ্দিন কমিশন রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিও আমাদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়