সম্প্রীতির জমিনে শকুনের চোখ

আগের সংবাদ

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ‘মেটা’

পরের সংবাদ

ওরা আল্লাহ মানে, আল্লাহর নির্দেশ মানে না

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৯, ২০২১ , ১১:৫৮ অপরাহ্ণ

এই উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সব মানুষ বহিরাগত। হিন্দুরা এসেছে ইউরোপ থেকে স্বস্তিকা হাতে নিয়ে, যা জার্মানির হিটলারও ব্যবহার করতেন। মুসলমানরা এসেছে সুদূর মক্কা-মদিনা থেকে, হযরত মুহাম্মদ (স.) এর উম্মত হিসেবে। খ্রিস্টানরা এসেছে বাইবেল হাতে নিয়ে। মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করে বিশ্বের সব মানুষ আদি পিতা হযরত আদমের (আ.) বংশধর। অর্থাৎ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ একে অপরের ভাই। অথচ তারপরও ভ্রাতৃহত্যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বিধাতা হত্যাকাণ্ডকে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ বলেছেন এজন্য শাস্তির বিধানও দিয়েছেন। এক শ্রেণির রক্তপিপাসু মানুষ হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে- কখনো ধর্ম রক্ষার অজুহাতে, কখনো রাজ্য জয়ের নেশায়, কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে। মানুষে মানুষে মারামারি হানাহানি বন্ধ করার জন্য যুগে যুগে কত মহামানব এসেছেন কিন্তু রক্তস্রোত বন্ধ হয়নি। এর অবসান হবে কবে? মানুষ কবে মানুষকে ভালোবাসবে।
ভারতে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ইংরেজদের শাসনের শুরুতে মুসলমানরা রাজত্ব হারানোর শোকে তাদের বিরোধিতা করে। অপেক্ষাকৃত কম সুবিধাপ্রাপ্ত হিন্দু সম্প্রদায় বহিরাগত ইংরেজদের স্বাগত জানায়। হিন্দু ও মুসলমানের পরস্পরবিরোধী আচরণের এই সুযোগ গ্রহণ করে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী। তারা তাদের শাসন কাজের সুবিধার জন্য একটা নীতি গ্রহণ করে, যার নাম- ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ অর্থাৎ ‘বিভেদের মাধ্যমে শাসন।’ এই নীতির ফলে ২০০ বছর হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ধর্মীয় বিরোধিতার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। পরবর্তীকালে স্বাধীনতার দাবিতে (পাক-ভারতের) গঠিত রাজনৈতিক দলের নেতারা এই বিদ্বেষ নিজ নিজ সম্প্রদায়ের স্বার্থে ব্যবহার করে। ধর্মীয় বিদ্বেষ একটা স্থায়ী ভিত্তি পায়। এই ভারত এখন আর অখণ্ড ভারত নয়- এর দুটি পরিচয় হয়, হিন্দু ভারত আর মুসলিম ভারত (পাকিস্তান)। মুসলিম লীগ নেতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের দাবি জানান। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলমানদের জন্য একাধিক রাষ্ট্রের উল্লেখ থাকলেও মুসলিম লীগের অবাঙালি নেতারা কৌশলে একাধিক রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি মাত্র রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়। ফলে মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান এবং হিন্দুদের জন্য ভারত- এই দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়। সাংবাদিক মোহাম্মদ মোদাব্বের বলেছেন, ‘১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের দুই প্রান্তে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উল্লেখ ছিল। কিন্তু পশ্চিমা মুসলিম নেতাদের চক্রান্তে দুটি রাজ্যের বদলে একটি রাজ্যের কথাই প্রচার লাভ করে। এ কে ফজলুল হক যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন তাতে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের উল্লেখ ছিল।’ (ইতিহাস কথা কয়)।
এই চক্রান্ত যে উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য কত বড় ক্ষতিকর ছিল মৃত্যুর কিছুদিন আগে জিন্নাহ তার চিকিৎসকের কাছে স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দেখ ডাক্তার, আমি জীবনে দুটি ভুল করেছি, তা-ও পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে। প্রথম ভুল করেছি লাহোর প্রস্তাব বিকৃত করে, যা দেশের একজন নেতা হিসেবে আমার পক্ষে আদৌ উচিত হয়নি। আমি দিব্যি চোখে দেখতে পাচ্ছি, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব মানবে না। তারা স্বাধীন হয়ে যাবে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ওদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ। পাকিস্তান প্রকৃতপক্ষে ওদের ত্যাগের জন্যই এসেছে। কিন্তু পাকিস্তানের নেতারা ওদের প্রতি অবিচার করেছে।’ (প্রাগুক্ত)
দ্বিজাতিতত্ব প্রমাণ করার জন্য মুসলিম লীগ ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতায় ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ অর্থাৎ ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে প্রথম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূচনা ঘটায়। এ দাঙ্গার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরবর্তীতে নোয়াখালী, বিহার, পাঞ্জাবসহ ভারতের সর্বত্র দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।
কলকাতা ছাড়াও ভারতের অনেক শহরে বহুসংখ্যক মুসলমান বাস করলেও পশ্চিমা মুসলিম লীগ নেতারা কলকাতাকে দাঙ্গার জন্য বেছে নেয় বাঙালি হিন্দু মুসলমানের দীর্ঘদিনের লালিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্পর্ক ধ্বংস করার জন্য। এতে তারা সফলও হয়। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দ্বিজাতিতত্ত্ব মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও এই মিথ্যা তত্ত্বের ভূত চেপে বসে আছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ সর্বত্র। দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রমাণ করার জন্য মহাত্মা গান্ধীর অসাম্প্রদায়িক ভারত আজ ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করেছে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মি. নরেন্দ্র মোদি ভারতের বাইরের সব হিন্দুকে ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম প্রধান ধারক ও বাহক ‘মহান ভারতবর্ষ’ কি বিশ্ববাসীর কাছে ‘হিন্দু ভারত’ নামেই পরিচিত হবে? সভ্যতা বিস্তার ঘটায়, অসভ্যতা সঙ্কুচিত করে, ছোট করে। সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় মানুষকে মানবেতর পর্যায়ে নিয়ে যায়। প্রাণিজগতে একমাত্র মানুষ পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার ভিত্তিতে নিজেদের বিস্তার ঘটায়। এ কারণে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রাণপণে লড়াই করেছিল। এতে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন, তিন লাখের বেশি মা-বোন নির্যাতিত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় সব বাঙালি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার শত্রæরা বাংলাদেশের সব সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দেয়। এ কাজে সফল হওয়ার জন্য ধর্মব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজরা ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে দেশে ঘুষ, দুর্নীতি, লোভ, ধর্ষণ, সামাজিক অন্যায় অবিচার, বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সবের জন্য আমরা সবসময় স্বাধীনতার শত্রæদের দায়ী করছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে স্বাধীনতার শত্রæরা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সক্রিয়ভাবে জড়িত। এসব জানা সত্ত্বেও দেশের সুশীল সমাজ ও সরকার এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজ দায়িত্ব শেষ হয় না। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে যতটা এগিয়েছি সামাজিক ক্ষেত্রে এগোতে পারিনি। কোনো জাতির সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সে জাতির সভ্যতার মাপকাঠি নির্ণিত হয়, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে নয়। রাষ্ট্র যাদের জন্য তাদের উন্নয়ন না হলে সে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মারাত্মকভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। অনেক সংখ্যালঘুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের উপাসনালয়, ঘরবাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে ভেঙেচুরে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যারা করেছে তারা ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে এটা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জার বিষয় যে, দেশের ১৭ কোটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এক কোটি সংখ্যালঘুকে তাদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এই অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারের প্রতিবাদে দেশবাসী সোচ্চার হয়েছে। বিশেষ করে ‘মুরতাদ’ অপবাদের অভিষিক্তরা সভা, সমিতি, মানববন্ধন, মিছিল, শোভাযাত্রা করে অপরাধের নিন্দা জানাচ্ছে এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করছে। অথচ যাদের কাছে বেশি অংশগ্রহণ আশা করা হয়েছিল সেইসব ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়ই ইসলামের অপবাদ হচ্ছে। রাসুল (সা.)-এর উম্মত বলে দাবিদার এসব প্রতিষ্ঠানের সদস্য আজ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোনো বিরোধিতা করেনি বরং অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগও রয়েছে।
মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন শরিফে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে-
১. ‘ধর্ম নিয়ে কোনো জোরজবরদস্তি নেই।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত-২৫৬)।
২. ‘তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আমার ধর্ম আমার।’ (সুরা : কাফিরুন। আয়াত-৬)
৩. ‘হে কিতাবীগণ, দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করিও না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত-১৭১)
৪. ‘যখন কেউ কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যখন কেউ কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করল।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত-৩২)। এছাড়া রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করিও না, এই বাড়াবাড়ির ফলে অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছে।’ (বিশ্বনবী : গোলাম মুস্তফা, পৃ. ৩৩২)। হযরত (সা.) আরো বলেছেন, ‘বলপূর্বক তোমার ধর্ম অন্য ধর্মের অনুসারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে না।’ (শিশু বিশ্বকোষ, ৪র্থ খণ্ড)। আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) উপরে বর্ণিত বাণী নিশ্চয়ই মাদ্রাসা ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা পাঠ করেছেন। তা সত্ত্বেও আল্লাহর নির্দেশ পালনে তাদের অনীহা কেন? তাদের নীরবতা ভিন্ন বার্তা দেয়। তারা জ্ঞানপাপী। তারা মোনাফেক। তারা মুখে বলে আল্লাহকে মানি, কিন্তু আল্লাহ্র নির্দেশ তারা মানে না। মোনাফেকদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, ‘ওরা মুখে বলে বিশ্বাসী, কিন্তু মনের গভীরে সত্যকে অস্বীকার করে। ওদের অন্তরে মোহর লেগে আছে। (সুরা : মুনাফিক, আয়াত-২-৩)। পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে, ‘মুনাফেক ও সত্য অস্বীকারকারী নর-নারীর জন্য আল্লাহ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন জাহান্নামের আগুন যেখানে ওরা থাকবে চিরকাল। জাহান্নামই ওদের প্রাপ্য।’ (সুরা : তওবা, আয়াত-৬৮)।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেন। আর ১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার এরশাদ ‘ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম’ ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা সংবিধানের মাধ্যমে এখনো কার্যকর রয়েছে। দীর্ঘ ৬৬ বছরে বিশ্বসভ্যতা যত এগিয়েছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা তার চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে গিয়েছি। জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজছি হাদিস ও ফেকা চষে।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ফলে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে দেশে যতগুলো সামরিক বা অসামরিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাদের প্রত্যেকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় স্বাধীনতাবিরোধীরা হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহ্মদ বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীনদের’ উসকানি ও প্রশ্রয় ছাড়া দুনিয়ার কোথাও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয় না’ (প্রথম আলো : ১৮. ১০. ২১)।
স্বাধীনাতা-উত্তর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। যা কখনো দেশবাসীর কাম্য ছিল না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় দুই স্বৈরশাসক- জিয়া ও এরশাদের আমলে। এর প্রধান কারণ তিনটি:
১. সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি বাতিল।
২. ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ঘোষণা।
৩. বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু থাকা।
সাংবাদিক শ্যামল দত্ত বলেছেন, ‘আমরা যদি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ না করি, আমরা যদি অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করাই তাহলে এই অপরাধ (সাম্প্রদায়িক হামলা) চলতেই থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, সমাজে, রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতা বেড়েছে, উগ্রবাদ প্রকট হয়েছে, শিক্ষা-সংস্কৃতির অধঃপতন ঘটেছে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বেড়েছে।’ (ভোরের কাগজ- ২২.১০.২১)
এড. সুলতান কামাল বলেছেন, দাঙ্গা হয় দুপক্ষের মধ্যে, হামলা হয় একতরফা, পৃথিবীর সর্বত্র সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারাই নির্যাতিত হয়। সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য উপদ্রুত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দায় নিতে হবে। সরকার তথা দেশবাসীর সুরক্ষাই তাদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ কারণে তাদের জন্য দেশবাসীর করের টাকার একটি বিরাট অংশ ব্যয় হয়।
কিছু মানুষের চরিত্রে দুটো প্রাণীর প্রভাব দৃশ্যমান। একটি বিড়াল, অপরটি সাপ। ভরাপেট থাকলেও বিড়াল যেমন চুরির অভ্যাস ছাড়তে পারে না, তেমনি কিছু মানুষ অভাব না থাকলেও ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে। সাপকে দুধ কলা দিয়ে পুষলেও সে ছোবল মারবেই। খোন্দকার মোশতাক যার জ¦লন্ত দৃষ্টান্ত। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ওই শ্রেণির প্রাণী, যার সঙ্গে আপস করে কোনো লাভ হবে না। প্রবাদ আছে, ‘চোর না শুনে ধর্ম কথা।’ ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি বাসগৃহ পেয়েছি, কিন্তু উপযুক্ত বাসিন্দা পাইনি। (বঙ্গবন্ধু দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি।’) বঙ্গবন্ধু সে বাসিন্দা তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। শয়তানের বংশধররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তার সে উদ্যোগ নস্যাৎ করে দেয়। অপসংস্কৃতির হাত থেকে আমাদের মুক্তির এখন একটাই পথ, বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার’ সফল বাস্তবায়ন- সে পথ যতই কন্টকময় হোক, তার বিকল্প নেই।

শাহ্জাহান কিবরিয়া : শিশু সাহিত্যিক, সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়