‘ভীষণ এক্সাইটেড ও নার্ভাস’

আগের সংবাদ

নির্বাচন ঘিরে বারবার নির্যাতন : ইস্যু যাই হোক হামলার লক্ষ্যবস্তু ‘সংখ্যালঘু’, স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ধর্ম’

পরের সংবাদ

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ‘মেটা’

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফেসবুকের নাম বদলের ব্যাপারটি অনেকটা গুগলের রিব্র্যান্ডিং কৌশলের মতো। সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টটি ‘অ্যালফাবেট’ নামের মূল প্রতিষ্ঠান গঠন করে গুগলসহ সব সেবা এর অধীন আনে ২০১৫ সালে। ফেসবুকও একই ধরনের নীতি অনুসরণ করে ‘ফেসবুক’ নামে মাতৃপ্রতিষ্ঠান গঠন করেছিল ২০১৯ সালে। এবার সেটার নাম বদলে ‘মেটা’ করা হলো। তবে এর অধীন হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, অকুলাস ও মূল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মতো সেবাগুলো আগের মতোই পরিচালিত হবে। আর নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী সেবাগুলো ক্রমে মেটাভার্সের ভার্চ্যুয়াল জগতে যুক্ত হবে- নাজমুল হক ইমন
ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম এখন ‘মেটা’। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ বৃহস্পতিবার রাতে এক ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির সেবাগুলো ‘মেটাভার্স’ নামের ভার্চ্যুয়াল জগতে রূপান্তরের পরিকল্পনা থেকেই নামটি গ্রহণ করা হয়। মেটাভার্সে ফেসবুকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেবা পাওয়া যাবে ভার্চ্যুয়াল জগতে, যে জগতে ব্যবহারকারীরা যুক্ত হয়ে বাস্তব দুনিয়ার মতো একে অপরের সঙ্গে কথোপকথন চালাতে পারবেন, একসঙ্গে কিছু কাজও হয়তো করতে পারবেন। ভার্চ্যুয়াল আর বাস্তব জগতের মিশেল বলা যেতে পারে, যা অগমেন্টেড ও ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির সাহায্যে সম্ভব হবে। নতুন ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যাদের মূল কাজ হবে মেটাভার্স তৈরি। নাম পরিবর্তনের খবরটি এমন সময়ে এল, ফেসবুক যখন তীব্র সমালোচনার মুখে। বাজারে একাধিপত্য, মিথ্যা তথ্যের প্রসার, তথ্য ফাঁসসহ নানা কেলেঙ্কারিতে বিশ্বের নানা দেশে নীতিনির্ধারকদের চাপের মুখে আছে প্রতিষ্ঠানটি। তা ছাড়া সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন সংবাদমাধ্যমে অভ্যন্তরীণ অনেক তথ্য ফাঁস করেছেন স¤প্রতি। মার্কিন কংগ্রেসে তিনি বলেছেন, ফেসবুক সব সময় মানুষের ভালোর চেয়ে মুনাফায় গুরুত্ব দিয়েছে। এদিকে ব্রিটিশ সংসদে গত সোমবার তিনি বলেছেন, ফেসবুকে সবচেয়ে সহজে ছড়ায় ক্রোধ ও ঘৃণা। সিইও মার্ক জাকারবার্গ অনলাইনে অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সম্মেলনে বলেন, নতুন নামটি তাদের মেটাভার্স তৈরির লক্ষ্যের প্রতিফলন, জনপ্রিয় মূল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেবার নয়। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের ব্র্যান্ড কেবল একটি পণ্যের সঙ্গে এমনভাবে সম্পৃক্ত যে তা হয়তো আমরা এখন যা করছি, তার পুরোটাই উপস্থাপন করতে পারছে না, ভবিষ্যতের কথা বাদই দিলাম।’ মার্ক জাকারবার্গ ও তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানের দাতব্য সংস্থা চ্যান জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে মেটা নামের একটি প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই বিজ্ঞান গবেষণাপত্র নিয়ে কাজ শুরু করে। সে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ঠিকানা মেটা ডট অর্গ। আগে মেটা ডটকমে প্রবেশ করলেও সরাসরি মেটা ডট অর্গে চলে যেত, এখন নতুন একটি ওয়েবপেজ দেখায়। এই প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত মেটা ডট অর্গ ওয়েবসাইটটিও সচল আছে। জাকারবার্গ বলেছেন, গ্রিক শব্দ ‘মেটা’র ইংরেজি অর্থ ‘বিয়ন্ড’-এর সঙ্গে তাদের লক্ষ্যও মিলে যায়। অর্থাৎ সবকিছুর পরও নতুন কিছু তৈরির সুযোগ থাকল তাদের। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, ভবিষ্যতে মেটার অন্যান্য সেবার উল্লেখের সময় আর মানুষকে ‘ফেসবুক’ ব্যবহার করতে হবে না। যেমন ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ফেসবুক নয়, বরং মেটা।

জাকারবার্গ এখন চেয়ারম্যান :
মার্ক জাকারবার্গ তখন হার্ভার্ডে পড়েন। বন্ধুদের সঙ্গে ডরমিটরিতে ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চালু করলেন দ্য ফেসবুক ডটকম। সে নামের সামনে থেকে একসময় ‘দ্য’ বাদ পড়ল, ফেসবুকও হার্ভার্ডের গণ্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিক হয়ে উঠল, জাকারবার্গের সম্পদও তরতরিয়ে বাড়তে থাকল। তবে তিনি সেই যে ফেসবুক প্রধানের পদে আসীন হলেন, ১৭ বছরে এর আর হেরফের হলো না। এবার আসা যাক বৃহস্পতিবারের ঘোষণায়। ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে জাকারবার্গ বললেন, ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে করা হবে ‘মেটা’। মেটাভার্স নামের ভার্চ্যুয়াল জগতে মনোনিবেশ করতেই এমন নাম গ্রহণ বলেও জানালেন তিনি। এখানে বোধ হয় একটু খোলাসা করার দরকার আছে।
ফেসবুক ইনকরপোরেটেড হলো মূল প্রতিষ্ঠান। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন সে প্রতিষ্ঠানের একমাত্র সেবা ছিল ‘ফেসবুক’ নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। মুকুটে পালক যোগ হওয়ার মতো প্রতিষ্ঠানটির সেবার তালিকায় একে একে যোগ হলো ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, অকুলাস, পোর্টাল, ওয়ার্কপ্লেস। এদিকে মেসেঞ্জারও আলাদা হলো। আর শুরু থেকেই মার্ক জাকারবার্গ ছিলেন পুরো ফেসবুক ইনকরপোরেটেডের প্রধান।
যেহেতু মূল প্রতিষ্ঠান ফেসবুক ইনকরপোরেটেডের নাম বদলে মেটা করা হলো, ১৭ বছর পর মার্ক জাকারবার্গের পদেও পরিবর্তন এল। এখন তিনি মেটার সিইও ও চেয়ারম্যান। অবশ্য সবকিছু আগের মতোই আছে, প্রতিষ্ঠানেও তার নিয়ন্ত্রণ অটুট বলে নিজেই জানিয়েছেন দ্য ভার্জকে। এমনটা জানানোর কারণ হলো, ২০১৫ সালে গুগলের প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠনের সময় সব সেবাকে ‘অ্যালফাবেট’ নামের মাতৃপ্রতিষ্ঠানের অধীনে নেওয়া হয়। সে সময় গুগলের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা নতুন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ফেসবুকে তেমন কিছু হচ্ছে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নাম ফেসবুকই থাকছে:
ফেসবুকের নাম পরিবর্তনের খবরে অনেক পাঠক প্রশ্ন করেছেন, এত দিনের চেনা ফেসবুক কী তবে মেটা হয়ে যাবে? ব্যাপারটা তা নয়। ফেসবুকের করপোরেট নামে পরিবর্তন এসেছে। তবে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমরা ব্যবহার করি, সেটা ‘ফেসবুক’ নামেই থাকছে। নাম পরিবর্তনের এই ঘোষণা মার্ক জাকারবার্গ দিয়েছেন বৃহস্পতিবার এক ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে। নতুন নামটি তাদের মেটাভার্স তৈরির লক্ষ্যের প্রতিফলন, মূল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেবার নয় বলে জানান। সে সময় তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের ব্র্যান্ড কেবল একটি পণ্যের সঙ্গে এমনভাবে সম্পৃক্ত যে তা হয়তো আমরা এখন যা করছি, তারই পুরোটা উপস্থাপন করতে পারছে না, ভবিষ্যতের কথা বাদই দিলাম।’ এখানে বলে রাখা ভালো, জাকারবার্গদের তৈরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেবাটির নাম ‘ফেসবুক’, যেটা আমরা ব্যবহার করে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। আর যে প্রতিষ্ঠান সে সেবা পরিচালনা করে, সেটির নাম এত দিন ছিল ‘ফেসবুক ইনকরপোরেটেড’। এই প্রতিষ্ঠানের অন্য সেবাগুলোর মধ্য রয়েছে ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, অকুলাস, পোর্টাল, ওয়ার্কপ্লেস ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেবা এবং মূল প্রতিষ্ঠানের নাম এক হয়ে যাওয়ায় মানুষ মূল প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিসর সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পাচ্ছিল না বলে মনে করেন জাকারবার্গ। বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেবার নাম ‘ফেসবুক’ রেখে মূল প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে ‘মেটা’ করা হয়েছে বলে লাইভ ভিডিওতে তিনি জানান। আগামী এক দশকে ফেসবুককে ক্রমে মেটাভার্সের ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় রূপান্তরের স্বপ্নের কথা বলেছেন মার্ক জাকারবার্গ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়