রাশিয়ার একাতেরিনবার্গে ভেজাল মদপানে মৃত্যু ১৮

আগের সংবাদ

মরুর বুকে গতির ঝড় অব্যাহত

পরের সংবাদ

সাম্প্রদায়িক দানব রুখতে জাগ্রত বিবেক ও মানবতা : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘দেখতে তুমি আমার মতোই তোমার মতোই আমি/ তবুও কেন পরস্পরের যুদ্ধে আমরা নামি?/… তোমার আমার সূর্য একই একই আঁধার-আলো/ তবুও কারা হানাহানির বিষের কৌটা ঢালো?/…একই রকম আমরা দু’জন বাংলা মায়ের ছেলে/ অবিনাশী সম্প্রীতির এই প্রদীপ রাখি জে¦লে।’ মানুষ কাঁদছে। মানুষ পুড়ছে। আগুন জ¦লছে। দাউ দাউ লেলিহান শিখায় পুড়ছে ঘর, পুড়ছে মন, পুড়ছে হৃদয়, পুড়ছে সর্বস্ব। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেগেছে বিবেক, জেগেছে মন। রাজধানীর যে শাহবাগে একদিন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আওয়াজ উঠেছিল, আজ সেখানে আওয়াজ উঠেছে, সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের। ৭ দফা দাবি পূরণে সরকারকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে ২৪ ঘণ্টা। প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানেও। হামলাকারীদের শাস্তিসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি উঠেছে। এদিকে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে তার সরকার।
শাহবাগ সমাবেশে ৭ দাবি : দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলায় জড়িদের গ্রেপ্তার করে ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ এবং হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়াসহ সাত দফা দাবি এসেছে শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমের ভক্তদের এই কর্মসূচি থেকে এসব দাবি পূরণের জন্য সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগে মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন হলের কয়েকশ শিক্ষার্থী এবং ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমের ভক্তরা। টানা তিন ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর পর দুপুর সোয়া ২টার দিকে সাত দফা দাবি ঘোষণা করে তারা শাহবাগ ত্যাগ করেন। কর্মসূচিতে সাত দফা দাবি ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক ও আন্দোলনের সমন্বয়ক জয়দীপ দত্ত। দাবিগুলো হলো- সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার মন্দিরগুলোর সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে আইন করে মন্দির ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হবে, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আধুনিকায়ন করে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, জাতীয় বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে।
জয়দীপ দত্ত বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ দাবিগুলো যদি মেনে নেয়া না হয় অথবা সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করেন, তাহলে আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) বিকালে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি

ঘোষণা করব। এই কর্মসূচি আরো কঠোর হবে।
হিন্দুদের কারা দেশছাড়া করতে চায়, সরকার বের করুক : শারদীয় দুর্গোৎসবে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা এবং হতাহতের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত পথে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতারা। হামলার ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ইসকন আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে নেতারা বলেন, এ দেশ হিন্দু সম্প্রদায়েরও। কারা নানা অজুহাতে হামলা চালিয়ে হিন্দুদের দেশছাড়া করতে চায়, তা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসকনের সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, হিন্দুরা এ দেশ ছেড়ে যেতে চায় না। সরকারকে এ দেশে হিন্দুদের শান্তিতে বসবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করছে, তা শনাক্ত করা প্রয়োজন। ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও সহিংসতার ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে এ ধরনের হামলা কখনো বন্ধ হবে না। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন- ইসকনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জগদ্?গুরু দাস ব্রহ্মচারী, বিমলা প্রসাদ দাস, শুভ নিতাই দাস ব্রহ্মচারী ও সুমুখ গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন ফুড ফর লাইফের পরিচালক রূপানুগ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, জাগ্রত ছাত্রসমাজের পরিচালক দ্বীজমনি গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি এবং বাসুদেব ভক্ত ফাউন্ডেশন, ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুমন গোস্বামী পুলক।
মন্দির-মণ্ডপে হামলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত : গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখে দাঁড়াও’ শিরোনামের প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির-মণ্ডপসহ হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধ তথা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনার ওপর আঘাত করেছে একটি চক্র। এ চক্রটি দেশকে ধর্মান্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ। ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর সঞ্চালনায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুক, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, বিএফইউজের সাবেক কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী প্রমুখ।
সাংবাদিক নেতারা জানান, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার রক্তে, সবার লড়াইয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। যারা হামলার সঙ্গে জড়িত, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে সাংবাদিকরা আছেন।
অসাম্প্রদায়িকতা বজায় রাখতে আপস চলবে না : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষা ও অসাম্প্রদায়িকতা বজায় রাখার প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস বা দর কষাকষি চলবে না। গতকাল গুলিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের পূজামণ্ডপ, মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা, রাজনৈতিক অশান্তি-অস্থিতিশীলতার সৃষ্টির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ইনু বলেন, কোনো হিন্দু পূজামণ্ডপে কুরআন শরিফ রেখে নিজের ধর্মের অধর্ম করবে না। পূজামণ্ডপে কুরআন শরিফ রাখা হিন্দুদের ওপর হামলার অসিলা তৈরির একটি সাজানো ও সুপরিকল্পিত ঘটনা। হিন্দুদের ওপর হামলার অসিলা তৈরির জন্য যারা মণ্ডপে কুরআন শরিফ রেখেছিল, তারাই কুরআন শরিফের অবমাননা করেছে। কুরআনকে রাজনৈতিক এবং হিন্দুদের ওপর হামলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করাই সবচেয়ে বড় অবমাননা। তিনি জাসদ নেতাকর্মী, ১৪ দলসহ সব অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তিকে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগর জাসদের সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসীন, রোকনুজ্জামান রোকন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা প্রমুখ। মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে জাসদের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ লুটপাটের প্রতিবাদে গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
চট্টগ্রামে সমাবেশ : সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন। সমাবেশে উচ্চারিত হয়েছে- ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ, সাম্প্রদায়িকতাকে রুখিয়া দাঁড়াও’। গতকাল বিকালে নগরীর চেরাগী পাহাড় চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু বাঙালির প্রথম সংবিধান দিয়েছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই সংবিধান হিন্দুর বা মুসলমানের নয়। দেশে প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ ধর্মকে ব্যবহার করতে পারবে না। তিনি দাবি তুলে বলেন, ১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার এরশাদ যে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিলেন, তা বাদ দিতে হবে।
‘সাম্প্রদায়িকতা নিপাত যাক- মানবতা মুক্তি পাক’ এই সেøাগানে অনুষ্ঠিত সমাবেশের আয়োজন করে সর্বস্তরের সাংস্কৃতিক কর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম। আবৃত্তিকার রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের সভাপতি শৈবাল চৌধুরী, কবি-সাংবাদিক ওমর কায়সার, প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, নারী নেত্রী নূরজাহান খান, জেসমিন সুলতানা পারু, নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, উদীচী নেত্রী শীলা দাশগুপ্তা, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, সংগীত শিল্পী কল্পনা লালা, নাট্য সংগঠক সঞ্জীব বড়–য়া, ম সাইফুল, চবি নাট্যকলার শিক্ষক অসীম দাশ প্রমুখ।
রংপুরে প্রতিবাদ মিছিল : জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে রংপুর নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। এছাড়া রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা, ভাঙচুরের প্রতিবাদে উতপ্ত হয়ে রংপুর নগরীর রাজপথ। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন মন্দিরে হামলা, পূজামণ্ডপ ভাঙচুর, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ লুটপাটের প্রতিবাদে নগরীতে মিছিল সমাবেশ করে। সকালে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নারী, পুরুষ ও শিশু তাদের নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন সেøাগান দেন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও জড়িতদের বিচার না হওয়ায় তারা বীরদর্পে আবারো এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এই ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের দাবি জানান। এছাড়া বাসদ, জাসদ, ছাত্রইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন নগরীতে মিছিল-সমাবেশ করে।
শাবিতে প্রতিবাদ : কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার জেরে মণ্ডপে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশ যে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিয়েছে সেই নৈতিক অবস্থান আজ হুমকির মুখে। প্রতিনিয়ত ধর্মকে ব্যবহার করে দেশে একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা যে বিভাজনের সৃষ্টি করেছে, তার চূড়ান্ত রূপ ইসলামধর্মকে অবমাননার চক্রান্ত।
রাজশাহী : রাজশাহীতে বেলা ১১টার দিকে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর জাসদ, ইসকন ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ আরো কয়েকটি সংগঠন যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন জাসদের মহানগর শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী। বক্তব্য রাখেন- জাসদ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল কবির বাবু, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ষোঘসহ অন্য নেতারা।
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়নকে থামিয়ে দিতে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি সুপরিকল্পিতভাবে গুজব রটিয়ে হামলা চালাচ্ছে মন্দিরে। ওই অপশক্তি আগুন দিয়েছে হিন্দুদের বাড়িঘরেও। ধর্মান্ধদের অপতৎপরতার সময় অপ্রস্তুত ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের গাফিলতির জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঝরে গেছে বেশ কয়েকটি তাজা প্রাণ, যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এসব ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে ইসকন কমিটি এ দেশে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা ও নিজ নিজ ধর্ম পালনে সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করে। সকালে লালমনিরহাটে বানিয়াদীঘি শ্রীশ্রী রাধা গিরিধারী মন্দির থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহরের মিশন মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয়া হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে ইসকন সদস্যসহ সর্বস্তরের হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে লালমনিরহাট ইসকনের সভাপতি মহাকৃষ্ণ প্রেমদাস ব্রহ্মচারী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হিরালাল রায়সহ হিন্দু নেতারা বক্তব্য রাখেন।
মৌলভীবাজার : মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে মৌলভীবাজার কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীভবাজার প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মৌলভীবাজার ইসকন মন্দিরের সভাপতি অধ্যক্ষ রতেœশ্বর কৃষ্ণ দাসের সভাতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ইসকন মন্দিরের উপদেষ্টা দীগেন্দ্র চন্দ দেবনাথ, জ্যোতি, দয়াল মুকুন্দ দাস, নিতাই দাস, শ্যাম সুন্দর গোপাল দাস, হিন্দু যুব মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেব, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা প্রাণ গোপাল রায়সহ অনেকে। জেলা, সব উপজেলা ও বিভিন্ন চা বাগানের ইসকন সদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই হামলা, ভাঙচুর ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে ধর্ম পালনের জন্য সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় করার দাবি জানান।
এরপর একটি মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয় এবং জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরং স্মারকলিপি প্রদান করেন আন্দোলনকারীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়