করোনা আপডেট : মৃত্যু বেড়েছে শনাক্ত কমছে

আগের সংবাদ

নৌকা বেহাত, আছে বিদ্রোহীও

পরের সংবাদ

মুজিবনগর সরকারের পদক্ষেপ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কী ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। স¤প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের নিকট প্রায় প্রতিটি সেক্টর হতেই প্রতিনিয়ত পরস্পরবিরোধী, বলতে গেলে যুদ্ধের ডিমরালাইজিং খবরাখবর আসতে থাকে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের পক্ষে এ বিষয়ে কর্নেল ওসমানীকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। নাক উঁচু করা, উন্নাসিক প্রকৃতির এই সামরিক নেতৃত্ব কথায় কথায় পদত্যাগের হুমকি দিতেন। জুলাই মাস পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে সামরিক বাহিনীকে সুসংগঠিত করে, কার্যকর করতেও তিনি সমর্থ হননি।
এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ অগোছালো, বিপর্যস্ত, অসংগঠিত সেনাবাহিনীকে সুসংগঠিত এবং সুসমন্বিত করার লক্ষ্যে সেক্টর কমান্ডারদের এক বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ১১ জুলাই হতে ১৭ জুলাই পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওসমানীর পদত্যাগ : বিরাজমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, ওয়ার প্ল্যান, টেকটিক্যাল এবং লজিস্টিক সাপোর্ট ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল।
২৬ মার্চের পর হতে যে স্বতঃস্ফূর্ত সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের জোয়ার শুরু হয়েছিল বাস্তব অবস্থায় ৭ সপ্তাহের মধ্যেই তা ক্রমাগত শুকিয়ে আসছিল। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সমন্বিত তৎপরতা, আক্রমণ চালনার দক্ষতা, পরিচ্ছন্ন ও নির্ভুল টার্গেট অর্জনে লক্ষ্যবদ্ধতা অচিরেই বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকা থেকে বাঙালি সেনাবাহিনীকে সীমান্তের ওপারে ভারতে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়। এ কাজটি করতে তাদের সময় লেগেছিল মাত্র তিন সপ্তাহ।
ভারতে তাড়িত বাঙালি সেনা সদস্যদের সংখ্যাল্পতা, বিপর্যস্ত মানসিকতা এবং অশেষ দৈহিক ক্লেশের চাপে হঠাৎ মনে হল বাংলাদেশের যুদ্ধ যেন থেমে গেছে! বাংলাদেশের ভেতরেও এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে থাকে যে, পাকিস্তান বাহিনীর এ বিজয় যেন চিরস্থায়ী; বাঙালি সেনাবাহিনী, যুব-তরুণ এবং দেশপ্রেমিক

রাজনীতিবিদদের ‘দালাই লামার’ মতো আমৃত্যু ভারতের মাটিতেই যেন থেকে যেত হবে। অবস্থার এই নাজুকতায় বিভিন্ন সেক্টর কমান্ডারগণ প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানীর দক্ষতা এবং ক্ষমতার ওপর প্রশ্নবোধক চিহ্ন অঙ্কনে কুণ্ঠিত হননি।
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ও রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম কর্তৃক রণক্লান্ত সৈনিকদের মনোবল এবং ভবিষ্যৎ যুদ্ধ পরিকল্পনা, রণকৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার উদ্যোগকে প্রধান সেনাপতি প্রসন্ন চিত্তে গ্রহণ করেননি। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক যিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তার কর্তৃক সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠক আহ্বানকে তিনি তার ব্যক্তিগত সম্মানের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগপত্র পেশ করেন। এই বৈঠকের দিনগুলোর মধ্যেই কলকাতার পার্কস্ট্রিটে একটি বাসায় কতিপয় সেক্টরের অধিনায়কগণ বেশ কয়েকটি বৈঠকে বসে তাদের সমন্বয়ে একটি ‘যুদ্ধ কাউন্সিল’ গঠনের ও প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানীকে ‘দেশরক্ষামন্ত্রী’ পদে অধিষ্ঠিত করার প্রস্তাব বিবেচনা করেন। অধিনায়কদের সমন্বয়ে উক্ত যুদ্ধ কাউন্সিল গঠন পূর্বক মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কাউন্সিলের ওপর দেয়া হোক- এই প্রস্তাব সরাসরি বৈঠকে উত্থাপিত হয়। ‘যুদ্ধ কাউন্সিল’ গঠনের এই প্রস্তাবের পেছনে ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের এই পদক্ষেপের পেছনে মুজিব বাহিনীর নেতৃবৃন্দের মনোভাব একসূত্রে গ্রোথিত ছিল। সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলে সামরিক নেতৃত্বের দ্বিধাবিভক্তির পরিণামে ‘যুদ্ধ কাউন্সিল’ গঠনের ঐ প্রস্তাবটি তেমন ‘জোর’ পায়নি। ১১-১৭ জুলাই পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত কর্নেল ওসমানী তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। কর্নেল ওসমানী তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে দ্বিতীয় দিন হতে অধিবেশনে যোগদান করেন। এই বৈঠকেই যুদ্ধের খুঁটিনাটি দিক, সমস্যাসমূহ, ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই বৈঠকে লে. কর্নেল এম এ রবকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ, গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল তার মধ্যে-
ক. বিভিন্ন সেক্টরের সীমানা নির্ধারণ;
খ. গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা;
গ. নিয়মিত বাহিনীকে ব্যাটালিয়ন, ফোর্স ও সেক্টর ট্রুপসের ভিত্তিতে সংগঠিত করা।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে
‘সেক্টর কমান্ডারদের
বিলম্বিত শপথ গ্রহণ’
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এ ছাড়া নযড়ৎবৎশধমড়লঢ়ৎড়শধংযধহ.পড়স থেকেও সংগ্রহ করা যাবে।
 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়