২৩ অক্টোবর ভোট গ্রহণ : বিএফইউজের নির্বাচনে আর বাধা নেই

আগের সংবাদ

বাঙালির মাতৃপূজা দেশমাতৃকার পূজা থেকে আলাদা নয়

পরের সংবাদ

নৌকা বেহাত, আছে বিদ্রোহীও

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** কোথাও কোথাও অনুপ্রবেশকারীরা পেয়েছেন মনোনয়ন ** অর্থের বিনিময়ে নাম আসে তৃণমূল থেকে ** সব আসনেই বিদ্রোহী প্রার্থী **
মুহাম্মদ রুহুল আমিন : দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেবেন, তারা যত প্রভাবশালীই হোন না কেন কোনোভাবেই ছাড় পাবেন না। সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নৌকার বিরোধিতা করলে পরবর্তী নির্বাচনে তার ভাগ্যে কোনো দিনই জুটবে না নৌকার টিকেট। পাবেন না দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ। এমন হুঁশিয়ারি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের। এরপরও কমছে না দলটির মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা। সারাদেশে চলমান পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেখা গেছে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। ফলে বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মধ্যেই হচ্ছে মূল লড়াই। কোনো কোনো এলাকায় চার থেকে পাঁচজন হচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। বিজয়ীও হচ্ছেন কেউ কেউ।
গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। এখানে মেয়র পদে লড়েছেন মোট ৮ জন প্রার্থী। দলের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যান তিনি। বিজয়ী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক আবু। তিনি নৌকা না পেয়ে রেল ইঞ্জিন প্রতীকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। পরাজিত হয় নৌকার প্রার্থী। শুধু আবু বক্করই নন, এই পৌরসভায় মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর নেওয়াজ, অন্য দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও আকতার হোসেন নিউটন। এই চারজন প্রার্থী বিদ্রোহী হওয়ায় সেখানে নৌকার প্রার্থীকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। অবশ্য কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগ স্থানীয়ভাবে চার বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে।
গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি পৌরসভার নির্বাচন। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন। উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মনোনয়ন না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হন দলটির বড় একটি অংশ। ফলে নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান ক্ষমতাসীন দলটির দুই প্রার্থী। নৌকাকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুজ্জামান বকল। অভিযোগ আছে, উপজেলার শীর্ষ নেতারা মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন তারা। তাই পরোক্ষভাবে তারা সমর্থন দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীকে। ফলে হেরেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আগামী ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের যে নির্বাচন হবে, সেখানেও ধনবাড়ির প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকছে। ১ নং বীরতারা ও ৪ নং পাইসকা ইউনিয়নেও নৌকার প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা।
শুধু দেবীগঞ্জ বা ধনবাড়িই নয়,

বিএনপি মাঠে না থাকায় বেশির ভাগ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদধারী একাধিক নেতা। তারা দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের খুব একটা তোয়াক্কা করছেন না। কেউ কেউ নৌকাকে হারিয়ে বিজয়ী হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নৌকা হারানোর পাশাপাশি নিজেও হারছেন। ওই এলাকায় জিতছেন ‘স্বতন্ত্র’ পরিচয়ে প্রার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধনবাড়ির একজন আওয়ামী লীগ নেতা ভোরের কাগজকে জানান, পৌরসভা নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ নৌকার পক্ষে কাজ করা থেকে বিরত থেকেছে। আর এই সুযোগে ওইসব নেতার অনুসারীরা দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন। তাকে বিজয়ী করেছেন। ওই নেতার মতে, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে সবাই তাকে বিজয়ী করতে কাজ করে, এটাই স্বাভাবিক। কারো পকেটের লোককে মনোনয়ন দিলে তার বিরুদ্ধে অনেকেই নির্বাচন করে। কাজেই কেন্দ্রের উচিত ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা। তা না হলে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেয়া।
এদিকে দ্বিতীয় দফায় ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ১১ নভেম্বর। এরই মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত করে ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে গতকাল সোমবার পর্যন্ত। এরই মধ্যে ঘোষিত ইউনিয়ন পরিষদের মনোনয়নে বেশ কয়েকজন বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তির নাম এসেছে, যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। ঘোষিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়ও কম না। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা পড়েছে অসংখ্য লিখিত অভিযোগ। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অর্থের বিনিময়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতা, রাজাকারের সন্তান-নাতি, ইয়াবা ব্যবসায়ী, হত্যা মামলার আসামিসহ বিতর্কিত বিত্তশালীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে বঞ্চিত হয়েছেন সৎ, নিবেদিত ও ত্যাগী নেতারা। কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় রবিবার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে পটুয়াখালী জেলার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একটি গ্রুপ বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় তারা প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ‘বিএনপির হাতে নৌকা কেন’ স্লোগান দিতে থাকে। অনেক জায়গায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদককে মনোনয়ন না দিয়ে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত বিত্তশালীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
এদিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন ইমাদকে। রবিবার রাতে মনোনয়ন ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তার নাম দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ইকবাল হোসেন ইমাদ ২০০৬-০৭ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন। তার সময়ে সভাপতি ছিলেন আব্দুস শাকুর। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। এরপর ২০১৯ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্যপদ লাভ করেন। আওয়ামী লীগে যোগদানের মাত্র দুই বছরের মধ্যে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে গেছেন ইমাদ। ইমাদ ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জানিয়ে দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজমুল ইসলাম জানান, ইকবাল হোসেন ইমাদকে যখন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য করা হয়, তখনও আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু অর্থের প্রভাবে আমার প্রতিবাদ টেকেনি। অর্থের জোরেই এবার তিনি নৌকার প্রার্থী হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ নজমুলের।
এদিকে নানা সূত্রে জানা গেছে, ইকবাল হোসেন ইমাদ একজন বড় পাথর ব্যবসায়ী। প্রচুর টাকার মালিক তিনি। টাকার জোরেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে জায়গা করে নেন। কেন্দ্রে নাম পাঠানোর আগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভায় অর্থের বিনিময়ে ভোট কিনে নেন তিনি। ফলে শীর্ষস্থানে তার নামটি আসে কেন্দ্রে।
তবে মনোনয়ন বোর্ডের একজন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, দ্বিতীয় দফায় যে ৮৪৮টি ইউপি নির্বাচন হবে, আমরা তিন দিনে আটটি বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রথম দিন সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠক শুরু হয় চলে রাত পর্যন্ত। ওইদিন শুধু রংপুর আর রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে পেরেছি। বাকি দুদিনে অন্য ছয়টি বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। কিন্তু দুদিনে শেষ করতে পারিনি। ফলে সোমবার পর্যন্ত মনোনয়ন বোর্ডের সভা চলেছে। দীর্ঘ সময় লাগার কারণ হলো আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করছি। বিতর্কিতদের বাদ দিচ্ছি। যারা বিগত নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে, তাদের নাম ১ নম্বরে থাকলেও তাকে মনোনয়ন দিচ্ছি না। ত্রাণের চাল ও টিন চুরির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে আছে, তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না। বিএনপি ও জামায়াত পরিবারের কাউকেই দিচ্ছি না। খুব সতর্কতার সঙ্গে আমাদের দলের সভাপতি ও মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমরা মনোনয়ন যাচাই করছি। এর মধ্যে যদি কোথাও কোনো ত্রæটি থাকে, সেগুলো অভিযোগ পেলে সংশোধন করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়