নলডাঙ্গা : আ.লীগ-বিএনপি নেতাসহ আটক ১১ জুয়াড়ি

আগের সংবাদ

উন্নয়নের ভোগান্তি আর কত : কোনো প্রকল্পই শেষ হয় না নির্ধারিত সময়ে, বছরজুড়েই চলে সেবা সংস্থাগুলোর খোঁড়াখুঁড়ি

পরের সংবাদ

শাল্লার ঝুমন দাশের পরিবারে উদ্বেগ : পুত্রের নিরাপত্তা ও খাদ্যসংস্থান নিয়ে চিন্তিত মা নিভা রানী দাশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : জামিনে মুক্তি পেয়ে প্রিয় সন্তান সৌম্যকে নিয়ে ব্যস্ত ঝুমন দাশ। কিন্তু তার নিরাপত্তা ও পরিবারের খাদ্যসংস্থান নিয়ে চিন্তিত তার মা। তিনি ছেলের নিরাপত্তার সঙ্গে সংসার পরিচালনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিকে ঝুমন দাশ জানিয়েছেন যে তিনটি অভিযোগে তিনি সাড়ে ৬ মাসের অধিক জেল খেটেছেন সেই অপরাধ তিনি করেননি।
ফেসবুকে হেফাজতের সাবেক নেতা কারাবন্দি মামুনুল হকের সমালোচনার অভিযোগে গত ১৬ মার্চ গ্রেপ্তার হন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার দুর্গম নোয়াগাঁও গ্রামের যুবক ঝুমন দাশ। সাড়ে ৬ মাসের অধিক জেল খেটে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরেছেন মায়ের কোলে। দাড়াইন ও ভান্ডাবিল হাওরঘেরা তার গ্রামটিতে গত ১৭ মার্চ তাণ্ডব চালিয়েছিল হেফাজত অনুসারীরা। সেই আতঙ্ক কাটেনি গ্রামবাসী এমনকি ঝুমনের পরিবারের। এখন ঝুমন কারামুক্ত হওয়ায় তার পরিবার আনন্দিত হলেও তার নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত।
ঝুমন দাশ বললেন, আমি যখন জেলে তখনো ১৫-১৬টি আইডি আমার নামে সচল ছিল। আমি জেলে থাকার পর কীভাবে আমার নামের এই আইডিগুলো সচল থাকে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। যে পোস্টের কারণে আমার নামে মামলা হয়েছে সেরকম কোনো পোস্ট দেইনি। মামলায় ৩টি পোস্টের কথা উল্লেখ আছে। সত্যিকার অর্থে সর্বশেষ যে পোস্টটি সেটা আমি দিয়েছি। সে পোস্টে মামুনুল হকের সমালোচনা করা হয়েছে। বাকী যে ২টি পোস্ট অশ্লীল কথা লিখে দেয়া হয়েছে সেগুলো আমি দেইনি। কেউ আমার প্রোফাইলের স্ক্রিনশর্ট নিয়ে এডিট করে আমার নামে চালিয়ে দিয়েছে।
তারা পরিবারের খাদ্যসংস্থান নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছে ঝুমন। কারণ এই ঝুমন দাশই ছিলেন পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এ বিষয়ে ঝুমন দাশ আরো বললেন, বিগত ১০ বছর ধরে আমি সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট মৌলভীবাজারের রাজনগর, শমসেরনগরে, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও ধর্মপাশায় মার্কেটিংয়ে স্কয়ারে কাজ করেছি। এভাবেই আমার পরিবারের খরচ চালিয়েছি। চলতি বছরের প্রথম দিকে আমার ভাই ব্যবসা করবার জন্য কিছু টাকা দেন। সে টাকায় ব্যবসা শুরু করার পরই এ ঘটনা। জেলে থাকার ৬ মাসের সময়ে আমার পরিবার অনেক ঋণ করেছে। এখন আমার কিছু করতে হবে। বুঝতে পারছি না কী করব।
ঝুমনের মা নিভা রানী দাশ তার প্রিয় সন্তানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি গত দুদিন ধরে চোখে চোখে রাখছেন ঝুমনকে। আড়াল হতে দিচ্ছেন না। সন্তানের নিরাপত্তার সঙ্গে পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও তিনি উদ্বিগ্ন।
নিভা রানী দাশ বললেন, এখন আমার ছেলে ঝুমন দাশ জেল থেকে বের হয়ে বাড়িতে আসছে। আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ঝুমন। এতদিন সে জেলে থাকায় ধারকর্জ করে পরিবার চালিয়েছি। আগে সে মার্কেটিংয়ে চাকরি করে পরিবারের খরচ চালিয়েছে। এখন আমার

পরিবার চলবে কীভাবে, খাব কী সে চিন্তাই করছি এখন। একদম নিরুপায় অবস্থায় আমার পুরো পরিবার।
ঝুমন দাশের স্ত্রী সুইটি রানী দাশ বললেন, মিথ্যা অভিযোগে তার স্বামী জেল খেটেছেন। তিনি জেল খাটার মতো কোনো অপরাধ করেননি। এই মামলা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি চান স্বামী ঝুমন দাশের।
এদিকে ১৭ মার্চের নারকীয় হামলার কথা ভুলতে পারেননি এলাকাবাসী। তারা শত বছর ধরে যেভাবে শান্তি ও সম্প্রীতি নিয়ে অবস্থান করতেন সেই ধারাবাহিকতায় গ্রামে শান্তিতে বসবাস করতে চান। একই সঙ্গে যারা তাদের গ্রামে হামলা করেছিল তাদের বিচার দাবি করেন গ্রামবাসী।
নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা চন্দন দাশ বললেন, আমরা শত বছর ধরে শান্তি সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছি। আমাদের বাপ-দাদারা এখানে বসবাস করেছেন মিলেমিশে। কোনোদিন এ রকম ঘটনা হয়নি। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারী গুজব ছড়িয়ে আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র দাশ বললেন, আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট হয়েছে। আমরা মামলা করেছিলাম, এ মামলার সব আসামি জামিনে বের হয়ে এসেছে। আমার বয়স অনেক হয়েছে। আর কতদিন বাঁচব জানি না। মৃত্যুর আগে দোষীদের শাস্তি দেখে যেতে চাই।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানালেন নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ গ্রাম ও ঝুমনের নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়