তেজগাঁওয়ে বাসায় রহস্যজনক বিস্ফোরণে দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ

আগের সংবাদ

১৫ সদস্যের দলে আট নতুন মুখ : আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে টাইগাররা

পরের সংবাদ

উন্নয়নের ভোগান্তি আর কত : কোনো প্রকল্পই শেষ হয় না নির্ধারিত সময়ে, বছরজুড়েই চলে সেবা সংস্থাগুলোর খোঁড়াখুঁড়ি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট রুট-বিআরটি, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে ঢাকায়। কিন্তু কোনো প্রকল্পের কাজই সময়মতো শেষ হচ্ছে না। বাড়তেই থাকছে প্রকল্পের মেয়াদ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অর্থ ব্যয়ও। সেই সঙ্গে বাড়ছে জনভোগান্তি। যাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। মেগা প্রকল্প ছাড়াও কোনো না কোনো অজুহাতে প্রতিনিয়তই কাটা হচ্ছে ঢাকার সড়ক-মহাসড়ক ও অলিগলি। এর ফলে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে নগরীর যানজট। যা চলে গেছে অসহনীয় মাত্রায়।
এই মুহূর্তে ঢাকায় চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। রাজধানীর উত্তরা থেকে শুরু করে মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন ও মতিঝিল এলাকার অবস্থা ভয়াবহ। করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি অফিস-আদালত, যানবাহন ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা সীমিত পরিসরে চালু থাকায় মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমই ছিল। ফলে উন্নয়নের ভোগান্তি মানুষকে খুব একটা পোহাতে হয়নি। সম্প্রতি অফিস-আদালত সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহন চালু হয়েছে। ঢাকার সড়কে বেড়েছে যানবাহন। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। এমনিতেই ঢাকার রাস্তার প্রশস্ততা অনেক কম। এর মধ্যে চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। ফলে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি বন্ধ হয়ে আছে। তার ওপর চলছে ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি। একেবারেই সরু হয়ে এসেছে রাস্তা। ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে তিন থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা।
মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান। একটি বেসরকারি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় কর্মরত। শুক্র-শনিবার বাদে প্রতিদিনই মিরপুর থেকে তাকে অফিসে আসতে হয়। লকডাউন চলাকালীন ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছাতেন। এখন সেখানে বাসে চড়ে যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। বিশেষ করে বিকাল ৫টায় অফিস থেকে বের হয়ে বাসে উঠলে রাত ৮টায় বাসায় পৌঁছান

তিনি। গতকাল ভোরের কাগজকে আনিসুর রহমান বলেন, প্রতিদিন আমার বাড়তি ৫ ঘণ্টার বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে। এভাবে আর ভালো লাগে না। আমরাও চাই উন্নয়ন হোক। কিন্তু যানজটের বিষয়টা মাথায় রেখেই যেন উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো নেয়া হয়। কাজগুলোও যেন দ্রুত সময় শেষ করা যায়, সে পদক্ষেপ নেয়াটা খুবই জরুরি। তাছাড়া যারা কাজ করছেন, তারাও এসব বিষয়ে উদাসীন।
উত্তরার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঢাকায় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নিলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। তার ওপর সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, ডেসার কাজ চলে সারা বছর। যখন তখন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এর ফলে মহাদুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা আমরা টের পাচ্ছি। সরকার বড় বড় প্রকল্পগুলো নিচ্ছে, এর সুফল আমরা পাবো। কিন্তু তিন বছরের প্রকল্প শেষ হতে কেন ৬ থেকে ৮ বছর লাগবে? এটার তদন্ত হওয়া উচিত। মনিটরিং বাড়ানো উচিত। নইলে আগামীতে যেসব প্রকল্প নেয়া হবে, তাতে মানুষের ভোগান্তি তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
নগরবিদরা বলেছেন, পৃথিবীর কোনো দেশে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে এমন সমন্বয়হীনতা দেখা যায় না। উন্নত বিশ্বে একটি প্রকল্পের মেয়াদ যে সময় ধরা হয়, তার আগেই কাজ শেষ করা হয়। আর আমাদের দেশে সম্পূর্ণ উল্টো। প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর ধরলে তা শেষ করতে ৮ থেকে ১০ বছর লাগিয়ে দেয়া হয়। এই যে এতদিন ধরে প্রকল্পের কাজ চলতে থাকে, এতে এক জেনারেশনের মানুষ যেমন চলে যায়, তেমনি জনগণের বিপুল অর্থের অপচয় হয়। তাদের ভোগান্তির সীমা-পরিসীমা থাকে না। সাধারণত যে কোনো প্রকল্পের কাজ ধরার আগে এর কারণে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং তা কিভাবে সমাধান করা হবে, তার পরিকল্পনা থাকা জরুরি।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ও নগরবিদ আদিল মোহাম্মদ খান এ প্রসঙ্গে বলেন, জনগণের সুবিধার জন্যই সরকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। তার জন্য কিছুটা কষ্ট হলেও মানুষ তা মেনে নেয়। কিন্তু সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী পরিকল্পনার অভাবে উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে সাধারণ মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘমেয়াদে দুর্ভোগ এড়ানো সম্ভব।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্র্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, জনগণের স্বার্থেই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে হয়। প্রকল্প শেষ হলে এর সুফল তো নগরবাসীই পাবেন। তাই সাময়িক এই দুর্ভোগ মেনে নিতেই হবে। তবে আমরা সবসময় চেষ্টা করি মানুষকে যাতে কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আমরা তাগাদা দিচ্ছি। অল্প কিছুদিনের দুর্ভোগের অবসান হবে বলে আশা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়