হাসেম ফুডে অগ্নিকাণ্ড : ৩ মাস পর দগ্ধ ছেলের মরদেহ পেলেন বাবা

আগের সংবাদ

রোহিঙ্গাদের অস্ত্র-অর্থের উৎস কী

পরের সংবাদ

মুহিবুল্লাহ হত্যা : আরসা-ইয়াকিনের দিকে অভিযোগের আঙুল

প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার ও উখিয়া প্রতিনিধি : রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আল ইয়াকিন নামের দুটি সন্ত্রাসী সংগঠনের দিকে আঙুল তুলেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, বেশ কিছুদিন থেকেই এরা মুহিবুল্লাহকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিল। তারাই পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মুহিবুল্লাহকে কারা হত্যা করেছে এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো এখনো সুস্পষ্ট কোনো তথ্য না দিলেও তারা বলেছে, জনপ্রিয়তার কারণে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরাই তাকে হত্যা করেছে। হত্যাকারীরা তার পরিচিত।
এদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গারা তাদের ঘর থেকে তেমন একটা বাইরে বের হননি। বন্ধ ছিল অধিকাংশ এনজিওর কার্যক্রমও।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত হামলাকারীরা কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) কার্যালয়ে ঢুকে মুহিবুল্লাহকে লক্ষ্য করে ৫টি গুলি ছোড়ে। এতে আরএসপিএইচ চেয়ারম্যান ৪৮ বছর বয়সি মুহিবুল্লাহ নিহত হন। তার বুকে ৩টি গুলি লেগেছিল। মুহিবুল্লাহকে হত্যার পর তার সংগঠনের অন্য সদস্যরাও জীবন নিয়ে ভয়ে আছেন।
মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই মাওলানা হাবিবুল্লাহ গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে কাজ করতেন। মাদকসহ সব ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধেও কঠিন অবস্থানে ছিলেন তিনি। তাই সাধারণ রোহিঙ্গারা তাকে নেতা মানত। তার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে ক্যাম্পকেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তার করার জন্য আরসার নেতা মাস্টার আবদুর রহিম, লালু, মুর্শিদসহ সংঘবদ্ধ চক্র তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। অন্যদের নাম জানি না তবে মুখ দেখলে চিনতে পারব। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আল ইয়াকিনের সন্ত্রাসীরাও জড়িত থাকতে পারে।
মুহিবুল্লাহর চাচাতো ভাই নুরুল আমিনও এই দুই সংগঠনের দিকে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আরসা ও আল ইয়াকিনের সন্ত্রাসীরা নামে-বেনামে ইউটিউব চ্যানেলে ও হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছুদিন থেকে মুহিবুল্লাহকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিল। তারা সেই হুমকি বাস্তবায়ন করায় এখন আমরাও খুব ভয়ে আছি।
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, তাদের নেতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে মানুষটি রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের চেষ্টা করেছিলেন, সেই মানুষটিকে হত্যা করায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহতের পর থেকে ক্যাম্পে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে ক্যাম্পের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকাল ৪টার দিকে মুহিবুল্লাহর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। কক্সবাজার সদর থানার ওসি মুনীর উল গিয়াস জানান, নিহতের ভাই হাবিবুল্লাহর কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর পুলিশি পাহারায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সেখানে জানাজা শেষে মুহিবুল্লাহকে দাফন করা হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর প্রতিটি ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে মামলা রুজু করা হবে। আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ না পেলেও হামলাকারীদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। এ কারণে তিনি রোহিঙ্গাদের কাছে মাস্টার মুহিবুল্লাহ নামে সুপরিচিত। তার স্ত্রী, তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তান আছে বলে জানা গেছে। তিনি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বক্তব্য দেয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৭ জুলাই তিনি ১৭ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ জন প্রতিনিধির সঙ্গে হোয়াইট হাউজে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খেলার মাঠে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ করে তিনি আলোচনায় আসেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়