ম্যান ইউতে ফিরলেন রোনালদো

আগের সংবাদ

চেনা উইকেটে অচেনা নিউজিল্যান্ড

পরের সংবাদ

সাবিত আল হাসান দুর্ঘটনা : পাঁচ মাসেও দুর্যোগ তহবিলের টাকা পাননি নিহতের স্বজনরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জে কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ সাবিত আল হাসানের নিহত যাত্রীর স্বজনরা ৫ মাসেও দুর্যোগ তহবিলের টাকা পাননি। গত ৪ এপ্রিল ওই দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের করুণ মৃত্যু ঘটে। দুর্ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই নিহত সবার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। তবু এখন পর্যন্ত উত্তরাধিকারের তালিকা প্রস্তুত করে বিআইডব্লিউটিএতে পাঠায়নি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রসাশন। অথচ এরই মধ্যে জামিনে মুক্ত হয়েছেন অভিযুক্তরা। কার্গো এস কে এল-৩ জাহাজটিকেও ছেড়ে দেয়া হয়েছে অনেক আগে।
নৌদুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের জন্য বিআইডব্লিউটিএর নৌদুর্যোগ তহবিল থেকে দেড়

লাখ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। আগে এ সহায়তার অংক কম ছিল। এ তহবিলটি সংগ্রহ করা হয় ঢাকা নদীবন্দর দিয়ে প্রবেশকারী যাত্রীদের টিকেটের ওপর বাড়তি ২ টাকা যোগ করে। আর লঞ্চ মালিকরা বছরে যাত্রী প্রতি ২০ টাকা দেন এ তহবিলে। ২০০৩ সালের ২১ এপ্রিল বুড়িগঙ্গায় এমভি মিতালী এবং একই বছরের ৮ জুলাই চাঁদপুরের ডাকাতিয়া মোহনায় এমভি নাসরিন-১ ডুবির পর নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। ওই দুই দুর্ঘটনায় প্রায় ১ হাজার যাত্রী মারা যায়। তখন তীব্র সামাজিক চাপের মুখে পড়ে সরকার ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে। বিআইডব্লিটিএর হিসেব মতে, গত ১০ বছরে বিভিন্ন নৌদুর্ঘটনায় নিহত ৪১০ জনের পরিবারকে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষে গত বছরের ২৯ জুন বুড়িগঙ্গায় ডুবে যাওয়া মর্নিংবার্ড লঞ্চের ৩৪ যাত্রীর জন্য ৫১ লাখ টাকা দেয়া হয়। এরপর আর কোনো অর্থ সহায়তা দেয়া হয়নি।
ওই তহবিলের স্ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব বিআইডব্লিউটিএর হিসাব বিভাগের পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল জানান, নিয়ম অনুযায়ী নিহতদের উত্তরাধিকারীরা নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেন। আবেদনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সুপারিশ করেন। এরপর দুর্ঘটনাস্থল এলাকার জেলা প্রসাশক তা যাচাই করে বিআইডব্লিউটিএতে পাঠান। ওই তালিকা ধরেই চেক ইস্যু ও বিতরণ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রসাশক তালিকাটি পাঠাননি। এ নিয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি নিজেও কথা বলেছি। করোনাসংক্রান্ত ব্যস্ততার কারণে এখনো তালিকা চূড়ান্ত হয়নি বলে তাকে জানানো হয়েছে। তালিকা পেলে দ্রুতই চেক বিতরণ করা হবে।
দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তরা সহায়তা না পেলেও ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়েছেন সবাই। কার্গো জাহাজটিও আর আটক নেই। জাহাজটির মালিক বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসকে লজিস্টিকস। মামলার তদন্তকারী নৌপুলিশের কর্মকর্তা মো. ইউনুস জানান, কোস্ট গার্ড অভিযান চালিয়ে ৪ দিন পর মেঘনা নদী থেকে এসকেএল-৩ নামের কার্গো জাহাজটি ১৪ জন শ্রমিকসহ আটক করে নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। কিছুদিন পর আদালত থেকে জাহাজ ও শ্রমিকরা জামিন পান। তবে জাহাজটি এখন চলছে কিনা সে খোঁজ তার জানা নেই। তিনি জানান, মামলার তদন্ত প্রায় শেষ। দ্রুত চার্জশিট দেয়া হবে।
দুর্ঘটনার পর বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আর মামলার বাদী হন নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বাবু লাল বৈদ্য। প্রথমে তিনি কার্গো ও আসামিদের নাম অজ্ঞাত বলে উল্লেখ করলেও পরে একটি তদন্ত প্রতিবেদন যুক্ত করেন মামলার সঙ্গে। এতে এসকেএল-৩ এর নাম উল্লেখ করা বলা হয়, কার্গোটি দুর্ঘটনার সময় থামানোর কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। এর চালক ব্যাক গিয়ার না দিয়ে বরং আরো গতি বাড়িয়ে দুর্ঘটনা স্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে রং পরিবর্তন করে অপরাধ গোপনের চেষ্টা চালায়। ওই জাহাজটি চলাচলের বৈধতা ছিল না বলেও উঠে আসে প্রতিবেদনে।
এ প্রসঙ্গে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতের স্বজনদের কার্যত সরকার কোনো ক্ষতিপূরণ দেয় না। বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চ মালিকদের যৌথ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত যাত্রী কল?্যাণ ট্রাস্ট থেকে সামান্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয় মাত্র। ট্রাস্টের তহবিল গঠিত হয় লঞ্চমালিক এবং ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল ব?্যবহারকারী সাধারণ যাত্রীদের অর্থে। তাই কোনো লঞ্চ দুর্ঘটনার পর যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ টাকা তুলে দেয়া জরুরি। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা কিছুটা সান্ত¡না পাবেন। আইনি মারপ্যাঁচ কিংবা অন্য কোনো ওজর-আপত্তিতে এ দেরি গ্রহণযোগ্য নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়