প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

চেনা উইকেটে অচেনা নিউজিল্যান্ড

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শামসুজ্জামান শামস : দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আগামী ১ সেপ্টেম্বর মিরপুরে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে দুই দল। টাইগারদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মূল দল না পাঠিয়ে দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। নতুন মুখ নিয়ে গড়া দলটির বিপক্ষে আগে কখনো ম্যাচ খেলেননি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। চেনা উইকেটে অচেনা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাহিনী কি সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে টাইগার সমর্থকদের মনে। ঢাকায় পা দিয়েই কিইউরা জানিয়েছে তারা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে মোকাবেলা করার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের ডানহাতি পেসার ম্যাট হেনরি জানিয়েছেন, আমরা লিংকনে ধীরগতির উইকেটে বেশ ভালো অনুশীলন করেছি। আসন্ন সিরিজে অনেক কিছুই পরিবর্তন ঘটবে। বিশেষ করে ভিন্নভাবে বোলিং করা হবে। এসব কন্ডিশনে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। করোনা আক্রান্ত ব্যাটসম্যান ফিন অ্যালেনের জায়গায় কিউইরা ম্যাট হেনরিকে দলভুক্ত করেছে। আজ বাংলাদেশের উদ্দেশে নিউজিল্যান্ড থেকে রওনা হবেন তিনি। ২০০৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন জেমি সিডন্স।
এই সিডন্সের অধীনে ২০১২-১৩ মৌসুমে কাজ করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধান কোচ হয়ে বাংলাদেশে আসা গেøন পোকনাল। বাংলাদেশের কন্ডিশন ও উইকেট সম্পর্কে সিডন্সের থেকে ধারণা পেয়েছেন গেøন। শুধু সিডন্স নয়, এ সফরের আগে বাংলাদেশের আরেক প্রাক্তন কোচ থিলান সামারাবিরাকেও নিয়োগ দিয়েছে কিউইরা। ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ দুই কোচের পরামর্শ বেশ ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছেন গেøন। কিউই কোচ বলেন, জেমির সঙ্গে তিন বছর কাজ করেছি। তার এ কন্ডিশনের সঙ্গে ধারণা আছে। থিলানেরও অভিজ্ঞতা আছে। আমি যেটা করেছি, তাদের থেকে তথ্য নিয়ে ক্রিকেটারদের যতটুকু জানানো দরকার, সেটা জানিয়েছি। দিন শেষে আমাদেরকে অপ্রত্যাশিত কিছুর জন্যই অপেক্ষায় থাকতে হবে। উইকেট ও কন্ডিশন পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে এগুলোর পরিবর্তন হয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে কন্ডিশন যেমন ছিল, আমি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজেও তেমন কন্ডিশনই আশা করছি।
স্লো ও লো ট্র্যাকে মোস্তাফিজের স্লোয়ার, কাটার, শরিফুলের স্লোয়ার এবং তিন স্পিনার সাকিব, নাসুম আর মাহদির ঘূর্ণি বলে ‘চোখে শর্ষে ফুল’ দেখেছেন অসি ব্যাটসম্যানরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেও কি ওই স্লো ও লো পিচেই খেলা হবে।
কিউই বধে কি হোম অব ক্রিকেটে আবারো সেই মন্থর গতির নিচু বাউন্স এবং খানিক টার্নিং উইকেটে খেলা হবে? ব্ল্যাক ক্যাপসদের ঘায়েল করতে ঘরের মাঠে নিজেদের সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ কৌশলটাই কি বেছে নেবে স্বাগতিকরা, এটাই স্বাভাবিক। গতকাল তৃতীয় দিনের অনুশীলনের সূচি ছিল নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের। সকাল ১০টা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এদিন অনুশীলন আসেনি তারা। পরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, এদিনের সূচি বাতিল করেছে সফরকারীরা। হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করে তারা।
এমনিতে অনুশীলন বাতিল করলে সেটি আগেই জানিয়ে দেয়া হয়। তবে গতকাল অনুশীলনের সময়ে মাঠে দেখা যায়নি কিউই দলকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে কোনো বিপত্তি তৈরি হলো কি? পরে নিউজিল্যান্ড দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এদিনের অনুশীলন সূচি বাতিল করা হয়েছে। ফলে মাঠে আসবে না তারা। প্রায় ৮ বছর পর বাংলাদেশে এসেছে কিউরা। তবে জৈব সুরক্ষাজনিত কারণে এবারের সফরে কোনো অনুশীলন ম্যাচ খেলবে না ব্ল্যাকক্যাপসরা।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর হবে প্রথম ম্যাচ। সিরিজের বাকি ৪টি খেলা হবে ৩, ৫, ৮ ও ১০ সেপ্টেম্বর। প্রতিটি ম্যাচ হবে বিকাল ৪টায় মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে মিডিয়াম পেসে পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দেয়া খালেদ মাহমুদ সুজন ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে খেলেছেন এবং ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্রিকেটীয় অলরাউন্ডার দক্ষতার জন্য তিনি তার সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ সম্পর্কে গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, চেনা উইকেটে অচেনা নিউজিল্যান্ডকে জানতে হলে আমাদের প্রথম ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রথম ম্যাচটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিউইদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে প্রথম ম্যাচের পর। ঘরের মাঠে আমরা বরাবরই ফেভারিট। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই টাইগাররা ডে বাই ডে ডেভেলপ করছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বোলাররা দারুণ বল করেছে। ব্যাটসম্যানরা বড় স্কোর করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ কিউইদের বিপক্ষে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো করবে।
উইকেট সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, শুনেছি স্লো উইকেট হবে। সব দলই কন্ডিশনের সুবিধে নেয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে উইকেটে টাইগাররা সিরিজ জিতেছে, সে রকম উইকেট হলে মন্দ হয় না। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওপেনিং জুটি নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন চান খালেদ মাহমুদ সুজন। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, লিটন দাসের সঙ্গে নাঈম শেখকে ওপেনিংয়ে নামালে ভালো হবে। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ গতকাল ভোরের কাগজকে জানান, চেনা উইকেটে নিউজিল্যান্ড অচেনা হলেও অস্ট্রেলিয়া থেকে দলটি বেশ শক্তিশালী।
বাংলাদেশের আসার আগে তারা স্লো উইকেটে খেলার প্রস্তুতি নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টাইগারদের প্রতিটি ম্যাচ দেখেছে কিউইরা। লিংকনে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে বলে শুনেছি। আমার মনে হয় সিরিজটি হাড্ডাহাড্ডি হবে। তবে সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। মুশফিক ফেরায় দলের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের বোলিং শক্তি সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, আমাদের দলে মোস্তাফিজের মতো বিশ্বসেরা বোলার রয়েছে। রয়েছে সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আমাদের স্পিন বিভাগ বেশ শক্তিশালী। এ সিরিজে সাকিব মালিঙ্গার রেকর্ড গুঁড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়বে বলে আশাবাদী তিনি। ওপেনিং জুটি সম্পর্কে রাজিন সালেহ বলেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওপেনিং জুটি নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। আশা করছি এ সিরিজে তাদের আরেকবার সুযোগ দেয়া দরকার। ঘন ঘন পরিবর্তন করলে খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
অস্ট্রেলিয়ার পর এবার মিশন নিউজিল্যান্ড। এ সিরিজেও সমান পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি খেলবে টাইগাররা। এখানে কিউইদের হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে টাইগাররা র‌্যাঙ্কিংয়ের ৫ নম্বরে পৌঁছে যাবে। অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে হারানোয় র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। মিরপুরে মন্থর উইকেটে স্পিনারই মূল ভূমিকা পালন করবেন। যেখানে মেহেদীর হাতেই দেখা যেতে পারে নতুন বল। এই সিরিজের আগে সতীর্থদের প্রাপ্য কৃতিত্ব দিলেন ২৬ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে পাঁচবারই বল হাতে ইনিংস শুরু করেছেন মেহেদী। প্রথম ম্যাচের প্রথম বলেই ফিরিয়েছেন অ্যালেক্স ক্যারিকে। পরে আরো দুই ম্যাচে নতুন বল হাতে তুলেই ব্রেক-থ্রæ এনে দেন দলকে। নতুন বলে বল করার এ দায়িত্ব বেশ উপভোগ করছেন মেহেদী। তবে মাঝে মধ্যে বোলিং করতে এসে অধিক রান দিলে সেটি আর উপভোগের বিষয় থাকে না তার।
গতকাল মেহেদী জানান, নতুন বলে বল করলে উপভোগ তো করতেই হয়। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, মাঝে মধ্যে মার খেলে উপভোগটা থাকে না। যেহেতু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, অনেক চিন্তাভাবনা করে বল করতে হয়। কম সময়ের খেলা। তাৎক্ষণিক অনেক কিছু করতে হয়। সেক্ষেত্রে নতুন বলের ভূমিকাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমি সফল হতে পারি, তাহলে দলের জন্য ভালো।
সঙ্গে যোগ করেন, আপনি যদি দলের বোলিং ইউনিট দেখেন, শুরুটা ভালো করতে পারলে অন্য বোলারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। টি-টোয়েন্টি খেলায় আসলে প্রথম দু-একটি ওভার দেখলেই বোঝা যাবে, কোন দিকে ম্যাচটি যাচ্ছে।
আমাদের দলে যে বোলার আছে, তারা তাদের জায়গা থেকে খুব ভালো করছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বোলিং ইউনিট খুব ভালো একটা মেসেজ দিতে পারবে অন্য দলগুলোর জন্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়