কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল দুই নারীর

আগের সংবাদ

শাড়িতেই এবার পকেট

পরের সংবাদ

২২ মার্চ : ইয়াহিয়ার বুকে তীর

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কি ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। সম্প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।
দিনাজপুরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার একটি কুশপুত্তলিকা নিয়ে এক জঙ্গি মিছিল বের করে। কুশপুত্তলিকাটির বুকে তীর বসানো ছিল। সিলেটের কয়েকটি চা বাগানে হিন্দুস্থানি অস্ত্রশস্ত্র এনে রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
২৩ মার্চ : সশস্ত্র মার্চপাস্ট
পাকিস্তান দিবসের নাম পরিবর্তন করে ‘প্রতিরোধ’ দিবস করা হয়। ঢাকা এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য শহরে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি ভবনের চূড়ায় পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে বাংলাদেশের নয়া পতাকা উড়তে দেখা যায়। মুক্তিফ্রন্টের আধা সামরিক বাহিনী এবং অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মচারীদের মার্চপাস্ট এবং কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা টেলিভিশন এই দিন পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে এসব জায়গায় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। শেখ মুজিবুর রহমান তার বাসভবনে এক সশস্ত্র মার্চপাস্টে সালাম গ্রহণ করেন। এখানেও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। সশস্ত্র জনতা ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে বহির্গামী যাত্রীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তাদের হয়রানি করে।
২৪ মার্চ : গেরিলাযুদ্ধের প্রস্তুতি নিন
যুদ্ধংদেহী ছাত্র এবং শ্রমিকরা জনগণকে হিংসাত্মক কাজের উসকানি দিয়ে প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় হাতে লেখা এবং সাইক্লোস্টাইল করা প্রচারপত্র বিলি করে। পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের জেলা কমিটি এ

ধরনের একটি প্রচারপত্র বিলি করে যাতে লেখা ছিল-
‘পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তি আন্দোলন এগিয়ে চলছে। এই দাবানলকে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিন। দেশপ্রেমিক বিপবী জনগণ হাতিয়ার তুলে নিন। শত্রæ সৈন্যকে বাধা দিন এবং তাদের নির্মূল করুন। সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে মুক্ত এলাকাগুলো রক্ষা করুন।
দেশবাসী বন্ধুগণ। হাতের কাছে যে অস্ত্র পান তাই হাতে তুলে নিন এবং শত্রæদের অগ্রগতি বন্ধ করুন। যেসব জায়গা শত্রæদের নিয়ন্ত্রণে, সেসব জায়গায় সড়ক-সেতু-রেল যোগাযোগ প্রভৃতি বিচ্ছিন্ন করে দিন। ঘরে ঘরে হাতবোমা ও মালোটোভ বোমা প্রস্তুত রাখুন। যদি আমাদের আত্মসমর্পণ করতে হয় কিংবা যদি আমরা শত্রæ কর্তৃক সরাসরি আক্রান্ত হয়ে পড়ি তাহলে আমাদের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করতে হবে।
মনে রাখবেন, পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তি কেবল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে, যার জন্য দীর্ঘ সময়েরও প্রয়োজন হতে পারে। কাজেই গেরিলাযুদ্ধ কৌশল ছাড়া শত্রæদের প্রতিহত করতে সক্ষম হব না। যে কোনো মূল্যে মুক্ত এলাকাগুলো রক্ষা করতে প্রস্তুত থাকুন।
পূর্ব বাংলার দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়নি, বরং এটাই কেবল শুরু। আমাদের দুর্বল করার জন্য শত্রæরা অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টি করতে পারে। পূর্ব বাংলার জয় অবশ্যম্ভাবী। আমরা পাকিস্তানি উপনিবেশবাদের জিঞ্জির ছিঁড়ে ফেলব। স্বাধীন পূর্ব বাংলা জিন্দাবাদ।’
রংপুর ও সৈয়দপুরের গোলাহাট থেকে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। লাঠি সড়কি এবং অন্যান্য অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত আট হাজার লোকের একদল উন্মত্ত জনতা সৈয়দপুর অভিমুখে যাত্রা করে সেখানকার অধিবাসীদের ওপর আক্রমণ করার জন্য। ৫০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে
‘২৫ মার্চ : সশস্ত্র প্রস্তুতি’
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এ ছাড়া নযড়ৎবৎশধমড়লঢ়ৎড়শধংযধহ.পড়স থেকেও সংগ্রহ করা যাবে।
 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়