কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল দুই নারীর

আগের সংবাদ

শাড়িতেই এবার পকেট

পরের সংবাদ

শেষ স্মৃতিটুকুও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে : কাশিমপুর রাজবাড়ি এখন গোয়ালঘর!

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) থেকে : রাণীনগর উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর পাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কাশিমপুর রাজবাড়ি। উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত এই রাজবাড়ি। এদিকে দায়িত্বশীল মহলের অবহেলায় এখন রাজবাড়িটি গোয়াল ঘরে পরিণত হয়েছে। কাশিমপুর রাজবাড়ি পাগলা রাজার বাড়ি বলে এলাকায় বেশি পরিচিত।
বর্তমানে রাজবাড়ির শেষ অংশটুকুও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আর কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মন্দিরের কিছু অংশ। এখনো সেই স্মৃতিটুকু অনেকেই দেখতে আসেন। ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাটির সংস্কার করা হলে রাজবাড়িটি ঘিরে গড়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দর্শনীয় স্থান বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাশিমপুর রাজবাড়ির পাগলা রাজা ছিলেন নাটোরের রাজার বংশধর। শ্রী: অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী বাহাদুর ছিলেন এই রাজত্বের শেষ রাজা। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজবংশের সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান। শুধু ছোট রাজা শ্রী: শক্তি প্রসন্ন লাহিড়ী বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কাশিমপুর রাজবাড়িতে বসবাস করতেন। সময়ের বিবর্তনে সেও এক সময় রাজবাড়ির স্টেটের অঢেল সম্পদ রেখে ভারতে চলে যান। ২ একর ১৯ শতক জমির ওপর অবস্থিত কাশিমপুর রাজবাড়ি। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়িটির নিদর্শনসমূহ দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সব কারুকার্য ধ্বংস প্রায়। রাজবাড়ির মূল ভবনের সামনের চারটি গম্বুজ, উত্তর পাশে হাওয়া খানা ও পশ্চিম পাশে একটি দুর্গা মন্দির ছিল। প্রতিনিয়ত মন্দিরে পূজা ও সন্ধ্যায় জ¦ালানো হতো প্রদীপ, শোনা যেত শঙ্খ ও উল্লুর ধনি। তা বর্তমানে আর দেখা যায় না। মন্দিরের পাশে ছিল একটি রাজবাড়ির বৈঠকখানা, পুকুর ও নদীর ধারে একটি কাঁচের ঘরের তৈরি বালিকা বিদ্যালয়। বর্তমানে রাজার জায়গার কিছু অংশ এখন কাশিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে কশিমপুর রাজার শত শত বিঘা জমি ও পুকুর স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিভিন্ন কায়দা কৈউশলে দখলে রেখেছে। রাজার সম্পত্তিগুলো স্থানীয় মানুষদের অত্যাচারে সবই এখন প্রায় বেদখল। রাজবাড়ির বেশির ভাগ জায়গা স্থানীয়রা অবৈধ ভাবে দখলে নিয়ে বিভিন্ন পন্থায় উপজেলা ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে চাতাল তৈরি করে ব্যবসা করছে। আর দায়িত্বশীল মহল নজরে না নেয়ায় কাশিমপুর রাজবাড়িটি দিন দিন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে চাতাল, মিল, কলকারখানা, বসতবাড়ি। এছাড়া উঁচু জমি কেটে সমতল করে ধান চাষ করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বশীল মহল রাজবাড়ি ও রাজার সম্পদগুলোর ওপর নজর না দেয়ার কারণে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মখলেছুর রহমান বাবু বলেন, স্বাধীনতার পর ও আগে কাশিমপুর রাজার বংশধররা কয়েক দফায় সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান। তারা চলে যাওয়ায় স্থানীয় কিছু ব্যক্তিরা ইচ্ছে মতো রাজার এই বিশাল সম্পত্তি দখলে নেয়। এক সময় বিভিন্ন কায়দায় লিজ নেয়ার কথা আমি শুনেছি। এমনকি বড় বড় দালানকোটা ঘেরা প্রাচীর ও রাজার প্রাসাদের ইট খুলে প্রকাশ্যে দিবালোকে রাতে আধারে স্থানীয়রা লুটপাট করে বিক্রয় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
দায়িত্বশীল মহল এসবে নজরে না নেয়ায় রাজার বাড়ি মৃত প্রায়। যতটুকু নির্মাণশৈলী কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে তাযদি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করলে সেখানে এখানও গড়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দর্শনীয় স্থান।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে রাজবাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা হবে। আর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জায়গা লিজ দেয়া আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়