কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল দুই নারীর

আগের সংবাদ

শাড়িতেই এবার পকেট

পরের সংবাদ

পরিত্যক্ত টয়লেটে ২০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা শংকরী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : শংকরীর স্বামী সন্তান নিয়ে একটি সাজানো-গুছানো সংসার থাকার কথা কিন্তু বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ের এক পাশে টিনশেডের পুরনো ভাঙাচুরা পরিত্যক্ত একটি টয়লেটে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় ২০ বছর ধরে এভাবে কাটছে মানসিক ভারসাম্যহীন ৪৫ বছর বয়সি শংকরীর জীবন। শংকরী নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার পৌর শহরের আমলাপাড়া এলাকার মৃত শম্ভুলাল গুহের মেয়ে। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে শংকরী ছিলেন দ্বিতীয়।
জানা যায়, লেখাপড়ায় খুব মেধাবী ছিলেন শংকরী। স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনাকালে তার বাবার মৃত্যু হয়। পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে তখন তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সংসারের কাজে মনোযোগ দেন তিনি। ২০০১ সালে হঠাৎ করে একদিন নাকের পলিপ সমস্যা দেখা দেয়। পরিবারের সদস্যরা তার অনেক চিকিৎসা করেছেন। তবুও তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়নি। এরপর থেকে অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করে শংকরীর আচরণে। একপর্যায়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তখন থেকে শুরু হয় তার বন্দি জীবন। এরপর তার মা তাকে দেখাশোনা করতেন। ২০১৩ সালের শেষের দিকে তিনিও পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। এরপর থেকে সংসারের সব দায়দায়িত্ব পড়ে তার ছোট ভাই জীবন লাল গুহের কাঁধে। সামান্য বেতনে জীবন লাল গুহ চাকরি করেন স্থানীয় একটি প্যাথলজিতে। সে টাকায় তিনবেলা সবার মুখে খাবার জোগাতেই হিমশিম খান তিনি। তার উপর শংকরীর উন্নত চিকিৎসা কেনোভাবেই করানো সম্ভব হয়নি তার। শংকরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের সম্পদ বলতে যা আছে তা হলো এটি ভাঙা ঘর। ওই ঘরে শংকরীর ছোট ভাই জীবন লাল গুহ তার স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ের একপাশে টিনে মোড়ানো পরিত্যক্ত ভাঙা টয়লেটে বসসাস করছেন শংকরী। টয়লেটে বাঁশের মাচার উপর কাঠের তক্তা পেতে বিছানা বালিশ ছাড়া শুয়ে বসে জীবনের ২০ বছর পার করছেন শংকরী। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, পয়ঃনিষ্কাশনসহ সবকিছু চলছে টয়লেটের ভেতরে তার।
বর্তমানে চিকিৎসা না হওয়ায় মানসিক অবস্থা আরো অবনতি হয়েছে শংকরীর। তবে উন্নত চিকিৎসা ও সহযোগিতা পেলে শংকরী আবারো সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন বলে মনে করছেন প্রতিবেশীরা।

প্রতিবেশী ধনেশ পত্রনবীশ বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে শংকরী মানসিক ভানসাম্য হারিয়ে এভাবে বসবাস করছে। তার ভাইয়ের সামর্থ্য নাই যে বোনকে উন্নত চিকিৎসা করাবে। কারণ সে নিজেই থাকে একটি ভাঙা ঘরে। সরকার ও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে এসে শংকরীকে উন্নত চিকিৎসা করালে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
শংকরীর ভাই জীবন লাল গুহ বলেন, ২০০১ সালে আমার বোন মানসিক ভারসাম্য হারান। এরপর বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করেছি কিন্তু টাকার অভাবে কখনো উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি বোনটিকে। আমার সামান্য বেতনে কেনো রকম সংসার চালাই। সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বোনের উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
পৌর মেয়র মো. আলাউদ্দিন বলেন, শংকরীর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। দ্রুত শংকরীকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান বলেন, শংকরীর বিষয়টি শুনে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাথমিকভাবে তার ঘর বানানোর জন্য টিন ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে সব ধরনের সরকারি সহযোগিতা করা হবে শংকরীকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়