প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ ডেস্ক : গত কয়েকদিন ধরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও কিলিয়ান এমবাপ্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তাদের নতুন ঠিকানা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এ দুজনের ভবিষ্যৎই ঝুলে ছিল। তবে অবশেষে কেটে গেছে সব অনিশ্চয়তা। নতুন ঠিকানা নিশ্চিত হয়ে গেছে রোনালদো ও এমবাপ্পের। ফরাসি তারকা এমবাপ্পে যাচ্ছেন রিয়ালে, আর জুভেন্টাস ছেড়ে রোনালদো যাচ্ছেন ম্যানসিটিতে। এখন তাদের দুজনের নতুন ক্লাবে যোগ দেয়ার বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। কিলিয়ান এমবাপ্পে পিএসজি ছাড়ার জন্য অনেক আগে থেকেই উদগ্রীব হয়ে আছেন। কারণ তিনি চান একটি ক্লাবের প্রধান কাণ্ডারি হতে। তারকায় ঠাসা পিএসজিতে যা সম্ভব না। আর তার স্বপ্ন হলো রিয়াল মাদ্রিদ। সেই স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হতে চলেছে তার। এমবাপ্পে পিএসজির হয়ে নতুন মৌসুমে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। গোল করেছেন একটি। এখন সেপ্টেম্বরের আন্তর্জাতিক বিরতির পর তাকে রিয়ালের জার্সিতে দেখা যাবে। শোনা যাচ্ছে পিএসজির হয়ে মেসির অভিষেক ম্যাচটিতেও খেলবেন না তিনি। এমবাপ্পেকে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারটি নিশ্চিত করার পর এখন তাকে রাজকীয়ভাবে বরণ করে নেয়ার অপেক্ষায় আছে রিয়াল।
অপরদিকে রোনালদো জুভেন্টাস ছাড়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কারণ তুরিনের ক্লাবটির সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আবার জুভেন্টাসও রোনালদোকে উচ্চ বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে তারাও চাইছিল রোনালদো অন্য কোথাও চলে যাক।
ম্যানসিটির সঙ্গে চুক্তি প্রায় পাকাপাকি হয়ে যাওয়ার পর রোনালদো গতকাল জুভেন্টাসের সতীর্থদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছেন। ইতালির সময় অনুযায়ী সকাল ৯টার দিকে তিনি অনুশীলন কেন্দ্রে যান। সতীর্থদের সঙ্গে ৪০ মিনিটের মতো থেকে বের হয়ে যান। এর আগে লকার রুম থেকে নিজের সব জিনিসপত্রও নিয়ে যান সিআর সেভেন। তাকে ম্যানসিটি বার্ষিক ১৫ মিলিয়ন ইউরো দেয়ার জন্য রাজি হয়েছে। তবে জুভেন্টাসকে রোনালদোর জন্য কোনো টাকা দিতে চাইছে না ম্যানসিটি। যদিও এ সমস্যা খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। গতকাল আবার শোনা গেছে, রোনালদোকে পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডও। যদিও ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম সি সানসহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে ম্যানসিটির সঙ্গেই চুক্তি পাকা করে ফেলেছেন সিআরসেভেন।
এমবাপ্পের প্রস্থান নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর এখন তার জায়গায় কাকে দলে ভেড়াবে সেটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে পিএসজি কর্মকর্তারা। তাকে বিক্রির টাকায় কোন খেলোয়াড়কে নিয়ে আসবে সেটিই এখন দেখার বিষয়। ফরাসি এই তারকা ফুটবলারের জায়গায় দলটিতে আসতে পারেন পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানদোস্কি, নরওয়ের স্ট্রাইকার এরলিং হরল্যান্ড। আবার ধারণা করা হচ্ছে ব্রাজিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন সে জায়গা দখল করতে পারেন। কারণ তার জাতীয় দলের সতীর্থ ও পিএসজির স্ট্রাইকার নেইমার নাকি ক্লাবটির কাছে আবেদন জানিয়েছেন রিচার্লিসনকে নেয়ার ব্যাপারে। এদিকে এমবাপ্পেকে আনতে ১৮০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করছে রিয়াল মাদ্রিদ। অথচ কয়েকদিন আগেই তারা বলেছিল তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। আর এ কারণে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নামে একটি টুর্নামেন্ট শুরু করতে চেয়েছিলেন রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। যার মাধ্যমে টাকা আয় করে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন বলে দাবি করেছিলেন তিনি। ফলে প্রশ্ন উঠছে আর্থিক সমস্যার মধ্যে থাকা রিয়াল কিভাবে এমবাপ্পেকে আনতে এত টাকা খরচ করছেন। ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট গোলডটকমের স্প্যানিশ লিগের প্রতিবেদক রিক শর্মা সেটি ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি তার ব্যাখ্যায় জানান অনেক বছর ধরেই এমবাপ্পেকে অনুসরণ করে আসছেন পেরেজ এবং সবসময় তার কণ্ঠে ফরাসি স্ট্রাইকারের প্রশংসাই শোনা যায়। এমবাপ্পেকে দলে টানার কথা কয়েক মৌসুম ধরেই ভাবছে রিয়াল। আর এমবাপ্পেও রিয়ালে নাম লেখানোর স্বপ্ন দেখে আসছেন আগে থেকেই। কিন্তু ফিফার আর্থিক সংগতির নীতি এখানে একটা বিষয়। এজন্য পেরেজ আগে থেকেই এমন কিছুর জন্য রিয়ালকে তৈরি করে রেখেছেন। এ মৌসুমে ক্লাবটি একমাত্র ডেভিড আলাবাকেই দলে টেনেছে। সেটিও কোনো দলবদল ফি ছাড়াই। মাঝে ২০১৯-২০ মৌসুমে এডেন হ্যাজার্ড, লুকা জোভিককে কেনা বাদ দিলে গত কয়েক মৌসুমে পেরেজ বড় কোনো কিছুর জন্য অর্থ জমা করে রেখেছেন কম খরচে তুলনামূলক তরুণ ফুটবলার দলে ভিড়িয়ে। অন্যদিকে বার্সেলোনার দিকে তাকালে দেখবেন, তারকার পর তারকা দলে টেনে ৪৫ কোটি ১০ লাখ ঋণাত্মক ব্যালেন্স তৈরি করেছে। আর রিয়ালের মূল্যমান এখন ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ইউরো।
২০১৪ সালে হামেস রদ্রিগেজের পর রিয়ালের বড় অঙ্কের চুক্তি বলতে শুধু এডেন হ্যাজার্ডকে দলে টানা। বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডকে ২০১৯ সালে দলে টানতে ১০ কোটি ইউরো খরচ করেছে রিয়াল। হ্যাজার্ডের বাজে পারফরম্যান্স আর মহামারিসৃষ্ট আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে পেরেজ এর মধ্যে বড় কোনো চুক্তি করেননি। তবে এমবাপ্পেকে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। লিওনেল মেসিকে হারিয়ে দুর্বল হয়ে বার্সেলোনাকে আরো চাপে ফেলতে এমবাপ্পের দিকে বেশি করে ঝুঁকছে রিয়াল। রিয়াল সাম্প্রতিক সময়ে খেলোয়াড় কেনাবেচার মাধ্যমে আর্থিক একটা ভারসাম্য তৈরি করে ফেলেছে। ২০১৬ সালে তারা আলভারো মোরাতাকে জুভেন্টাস থেকে মাত্র ৩ কোটি ইউরোতে কিনেছিল। সে বছরই তারা খেলোয়াড় বিক্রি করে আয় করে ৩ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। আর ২০১৭ সালে মোরাতাকে আবার চেলসির কাছে বিক্রি করেছে ৬ কোটি ৬০ লাখ ইউরোতে। আরো খেলোয়াড় বিক্রি করে সব মিলিয়ে ১৩ কোটি ২০ লাখ ইউরো আয় করে রিয়াল। আর সব মিলিয়ে খেলোয়াড় কেনায় ব্যয় করেছে মাত্র ৪ কোটি ইউরো। ফলে এমবাপ্পেকে নিজেদের ক্লাবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে কিনলেও রিয়ালকে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। উল্টো ক্লাব আরো সমৃদ্ধ হবে বলে বিশ্বাস তাদের। কারণ এমবাপ্পে আসলে রিয়ালের প্রতি ও লা লিগার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।