জাসদের পাল্টা প্রশ্ন : ১৫ আগস্ট সেলিম মার্কিন দূতাবাসে কী করছিলেন

আগের সংবাদ

কারা এই আইএস-কে? আফগানিস্তানে সক্রিয় নৃশংসতম জঙ্গিগোষ্ঠীর কাবুলে হামলার দায় স্বীকার

পরের সংবাদ

চন্দ্রিমায় জিয়ার লাশ নেই খালেদাও তা জানেন > মোশতাকের শক্তির মূল উৎস ছিল জিয়া : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেখানে জিয়াউর রহমানের কবর বা কবরে তার লাশ নেই। সেটা খালেদা জিয়া-তারেক রহমান ও বিএনপির নেতাকর্মীরা ভালোভাবেই জানেন। তারপরেও সেখানে গিয়ে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলো? তাদের কেন এই নাটক?
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ৭৫’র ১৫ আগস্ট নিহত শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে গিয়েও যে মারামারি করল বিএনপি…। বিএনপি জানে না যে, সেখানে জিয়ার কবর নাই? জিয়া নাই ওখানে? জিয়ার লাশও নাই! তারা তো ভালোই জানে। তাহলে এতো নাটক করে কেন? তিনি বলেন, খালেদা জিয়াও ভালোভাবে জানেন। তারেক জিয়া কি বলতে পারবে যে, সে তার বাবার লাশ দেখেছে? গুলি খাওয়া লাশ তো দেখাই যায়। তারা কী দেখেছে কখনো? বা কোনো একটা ছবি দেখেছে কেউ? দেখেনি। কারণ, ওখানে কোনো লাশ ছিল না। একটা বাক্স আনা হয়েছিল। আর সেখানে ওই বাক্সের ফাঁক থেকে যারা দেখেছে একটু… সেই এরশাদের মুখ থেকেই শোনা, কমব্যাট ড্রেস পরা ছিল। কারণ জিয়াউর রহমান তো তখন প্রেসিডেন্ট। তখন তো সে কমব্যাট ড্রেস পরে না। এটা কি বিএনপির লোকেরা জানে না? তাদের সেখানে গিয়ে মারামারি, ধস্তাধস্তি করার চরিত্র তো এখনো যায়নি।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সহসভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাদের খান, দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামাল ও উত্তরের যুগ্ম

সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন ও উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া- যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশের কোনো উন্নতি করেনি। তাদের শাসনামলে বিশেষ করে, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া এবং দেশটাকে একেবারে শেষ করে দেয়ার চক্রান্ত হয়েছিল। ওই সময় আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, অত্যাচার, নির্যাতন করা হয়েছিল। আর প্রচার করেছে সে (জিয়াউর রহমান), নাকি গণতন্ত্র দিয়েছে। যে দেশে প্রতি রাতে কারফিউ থাকে সেটা আবার গণতন্ত্র হয় কীভাবে? ভোট চুরি থেকে শুরু করে সবকিছুই কিন্তু এই জিয়াউর রহমান শুরু করেছেন। সংবিধান লঙ্ঘন করাও সে করেছে। আমাদের সৌভাগ্য যে, হাইকোর্টের একটা রায়ে জিয়ার ক্ষমতা দখল, এরশাদের ক্ষমতা দখল, মার্শাল ল’ দিয়ে ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মোশতাক জিয়াউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্ত করেছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া ছিল মোশতাকের মূল শক্তির উৎস। কারণ ক্ষমতা যদি এভাবে দখল করতে হয়, হত্যাকাণ্ড যদি চালাতে হয় তাহলে সামরিক বাহিনীর নিশ্চয়ই কিছু সহযোগিতা তার দরকার ছিল। সেই মোশতাক-জিয়া মিলেই এই চক্রান্ত করেছিল। মোশতাক জিয়ার ওপর নির্ভর করে যে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল সে কতদিন থাকতে পেরেছিল? থাকতে কিন্তু পারে নাই। মীরজাফরও পারে নাই। মীরজাফর সিরাজউদদৌলার সঙ্গে বেঈমানি করে নবাব হয়েছিল। কিন্তু তিন মাসও পূর্ণ করতে পারে নাই। কারণ বেঈমানদের ব্যবহার করে সবাই। কিন্তু তাদেরকে বিশ্বাস করে না কেউ। ঠিক জিয়াউর রহমান সেই কাজটি করেছিল। মোশতাকও কিন্তু তিন মাস পূর্ণ করতে পারে নাই। তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। জেলখানায় যে হত্যাকাণ্ড হয় সেটাও জিয়াউর রহমানের নির্দেশে হয়েছে। সে-ই করেছে। কারণ সে তখন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সে এতই মোশতাকের আস্থাভাজন ছিল যে, মোশতাক নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিয়াউর রহমানকেই সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তিনিই সীমিত সম্পদ দিয়ে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এনেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা খাদ্য না থাকা, মুদ্রা জমা না থাকা ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা না থাকা দেশটিকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা অর্জন করা ভুল ছিল এবং সেজন্যই দেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পরপরই ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। আর সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করতে তারা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় উত্তরাঞ্চলে (কুড়িগ্রামের চিলমারী) প্রতিবন্ধী নারী বাসন্তীকে মাছ ধরার জাল পরিয়ে বিশ্বব্যাপী তার সেই ছবি প্রচার করেছিল। অথচ সেই সময় মাছ ধরার একটি জালের দাম ছিল ১৫০ টাকা, আর একটি শাড়ির দাম ছিল ৬ থেকে ৭ টাকা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার আগে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত হচ্ছে এটা শোনা গেলেও বঙ্গবন্ধু কখনই তা বিশ্বাস করতেন না। তিনি তো বাংলাদেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তাকে অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এমনকি, ইন্দিরা গান্ধী নিজেও বলেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর একটাই কথা ছিল- ‘ওরা আমার ছেলে, আমার সন্তানের মতো। ওরা আমাকে কেন মারবে’? উনার একটা অন্ধ বিশ্বাস ছিল, এদেশের কোনো মানুষ উনার গায়ে কেউ হাত দেবে না, কেউ মারবে না। কিন্তু যারা ঘরের, সেখান থেকেই ষড়যন্ত্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়