জাসদের পাল্টা প্রশ্ন : ১৫ আগস্ট সেলিম মার্কিন দূতাবাসে কী করছিলেন

আগের সংবাদ

কারা এই আইএস-কে? আফগানিস্তানে সক্রিয় নৃশংসতম জঙ্গিগোষ্ঠীর কাবুলে হামলার দায় স্বীকার

পরের সংবাদ

কাবুলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** নিহত ৬০ জনের মধ্যে ১২ মার্কিন সেনা ** আহত দেড় শতাধিক ** হামলার পেছনে আইএস : পেন্টাগন **
কাগজ প্রতিবেদক : তালেবানের দখলে থাকা আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে ভয়ংকর জোড়া বিস্ফোরণে মার্কিন সেনাসহ ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিস্ফোরণের এ ঘটনায় কমপক্ষে দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদকে উদ্ধৃত করে বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ খবর জানায়।
নিহতদের মধ্যে ১২ মার্কিন সেনা ও বেশ কয়েকজন তালেবান সেনাও রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিস্ফোরণটি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আত্মঘাতী হামলা হতে পারে। তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার পর প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় অনেক নাগরিক দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে কাবুল বিমানবন্দর এলাকার ভেতরে ও বাহিরে ভিড় করছে। বিমানবন্দরে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ন্যাটো জোটের সেনা, তাদের স্থানীয় সহযোগী এবং সমর্থকরা। এ পরিস্থিতির মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন। সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা জারির পর বন্ধ হয়ে যাওয়া বিমানবন্দরের অ্যাবি গেটে এই বিস্ফোরণ ঘটে। এ প্রবেশ পথে ব্রিটিশ সৈন্যরা জড়ো হয়েছিল এবং সেখানে নিরাপত্তা দেখভাল করছিল।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলার আশঙ্কা রয়েছে জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন মার্কিন নাগরিক ও আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েছেন। কাবুল বিমানবন্দরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘ভয়াবহ’ হামলা হতে পারে বলে যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনীবিষয়কমন্ত্রী জেমস হ্যাপির আশঙ্কা প্রকাশের পরই এ হামলার খবর সামনে এলো। এদিকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর বিমানবন্দরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে আরম্ভ করে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা। বিমানবন্দর চত্বরে মার্কিন সেনাদের ঘিরে থাকা যে এলাকায় আফগানিস্তান ছাড়তে চেয়ে ভিড় জমিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ, সেখানেই এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে ‘আত্মঘাতী’ হামলার সময় সেখানে বিদেশি নাগরিকসহ অন্তত চারশ থেকে পাঁচশ মানুষ ছিল বলে দাবি করেছেন ঘটনাস্থলে থাকা একজন প্রত্যক্ষদর্শী। সেখানে ‘শক্তিশালী’ বিস্ফোরণই হয়েছে বলে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমরা আহতদের স্ট্রেচারে সরিয়ে নিয়েছি। আমার কাপড় রক্তে একদম ভিজে গেছে।

এদিকে আফগানিস্তানের সংবাদ মাধ্যম টোলো নিউজ টুইটারে বিস্ফোরণের স্থান থেকে আহতদের ঠেলাগাড়িতে সরিয়ে নেয়ার বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছে। সেখানে দেখা যায়, রক্তমাখা কাপড়ে আহত কয়েকজনকে ঠেলাগাড়িতে করে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। নারী ও শিশুসহ বহু মানুষকে নিজেদের মাথায় কাপড়ের ব্যান্ডেজ বেঁধে পালাতে দেখা গেছে।
কাবুলের একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের জরুরি বিভাগে অন্তত ৩০ আহত ব্যক্তি এসেছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন পথেই মারা গেছে। এদিকে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে ‘আত্মঘাতী’ হামলার স্থানে ‘লাশের স্তূপ’ দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন বিবিসির সাংবাদিক সেকান্দার কেরমানি। তিনি বলেন, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে লাশের স্তূপ দেখা গেছে। তাই ওই বিস্ফোরণে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
এর আগে একই দিনে কাবুল বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের সেখানে ভ্রমণ না করার জন্য সতর্ক করা হয়। যারা এর মধ্যে বিমানবন্দরের বাইরে রয়েছেন তাদের অবিলম্বে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার একটি অত্যন্ত উচ্চ হুমকি রয়েছে বলে জানান অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস পেইন।
তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পর গত ১১ দিনে ৮৮ হাজারেরও বেশি মানুষকে দেশটি থেকে বিমানে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখনো হাজার হাজার আফগান দেশ ছাড়ার জন্য বিমানবন্দরের বাইরে ও ভেতরে অপেক্ষা করছে। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রত্যাহার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দ্রুত কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলো।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, ৩১ আগস্টের নির্ধারিত সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি তালেবান নাকচ করে দিলেও এ সময়ের পর দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিক ও আফগানদের দেশত্যাগে বাধা দেবে না তারা। আগের দিন বুধবার এক নিরাপত্তাবিষয়ক সতর্কবার্তায় জানানো হয়, আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাবি গেট, পূর্ব গেট এবং উত্তর গেটে অপেক্ষারত মানুষকে অবিলম্বে সরে যেতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এর আগে একই ধরনের পৃথক একটি নির্দেশনায় যুক্তরাজ্য সরকারও সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে পরামর্শ দেয়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ এবং যে কোনো সময় সেখানে সন্ত্রাসী হামলার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কি ধরনের নিরাপত্তা হুমকির আশঙ্কা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়