ডুপ্লেক্স বাসায় অগ্নিকাণ্ডে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

পরের সংবাদ

সুযোগ পেলেই ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা : জড়াচ্ছে ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে, পালাচ্ছে বিদেশেও

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নানাভাবে পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকলেও তারা একস্থানে থাকতে চাইছে না। নির্ধারিত ক্যাম্প থেকে সুযোগ পেলেই তারা পালাচ্ছে। কাজের খোঁজে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। টেকনাফ উখিয়ার ক্যাম্প ছাড়াও ভাষানচর থেকেও তারা পালাচ্ছে। পালাতে গিয়ে প্রায়ই তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। আটক রোহিঙ্গাদের ফের পাঠানো হচ্ছে ক্যাম্পে। তবুও তারা পালানোর চেষ্টা করেই চলছে। আবার ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে ইয়াবা ব্যবসাসহ নানাবিধ অপরাধে জড়াচ্ছে। খুন অপহরণের ঘটনায়ও তাদের নাম আসছে। দালাল চক্রের সহায়তায় জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট তৈরির অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এভাবে অনেকে বাংলাদেশি পরিচয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। গত দুই বছরে দুই হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, রোহিঙ্গা পালানো ঠেকাতে ক্যাম্পগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বেড়া নির্মাণ হলে এর চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হবে। এতে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার সুযোগ কমবে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, পাঁচজন রোহিঙ্গা পালিয়ে মিয়ানমার যাওয়ার পথে বিজিবির হাতে ধরা পড়েছে। এছাড়া স্বাধীনভাবে কাজের সুবিধার্থে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে বলে তিনি ধারণা করছেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে আটকে রাখতে সরকার সব রকম উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যেও যারা পালাচ্ছে তারা ধরা পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

প্রণয় চাকমা জানান, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, মূলত কাজের খোঁজে এসব রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়াসহ বিভিন্নস্থানে পাড়ি জমাচ্ছে। এসব রোহিঙ্গারা দলবেঁধে নয়, বিচ্ছিন্ন রাস্তা পাড়ি দেন। করোনার কারণে ‘লকডাউন’ বাস্তবায়নে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোর কারণে ধরা পড়ছে। দুদিনে ২১৫ জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এরা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সনজুর মুর্শেদ বলেছেন, দালালের খপ্পরে পরে রাতের অন্ধকারে রোহিঙ্গারা পালানোর চেষ্টা করছে। কাজের খোঁজে তারা কাম্পের বাইরে বের হচ্ছে। তবে পুলিশি তৎপরতায় সুবিধা করতে পারছে না।
জানা গেছ, গত ২৯ জুলাই কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় শিশুসহ একই পরিবারের সাতজনসহ নয় রোহিঙ্গাকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলার ধলডাঙ্গা সীমান্ত এলাকা থেকে আসার সময় তাদের আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হচ্ছেন- উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ফইয়া সালাম (২৭), ইসমাইল হোসেন (১৮), সাবিকা খাতুন (৫০), সাবিকার সন্তান নাছিম (১৫), রিয়াজ (১০), আছমিরা খাতুন (১৮), তাছমিনারা খাতুন (৭), রুমাজান খাতুন (৫) ও ইসমাইল হোসেন (৩)।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের কাচুর মোড়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে নয় রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। সলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত যাওয়ার জন্য দুদিন আগে ভুরুঙ্গামারী এসেছিল। আটকের পর তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। ভুরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তারা এসেছিল। সীমান্ত পার হতে না পেরে ফেরত যাচ্ছিল। আটক সবাইকে সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, গত ১৭ জুলাই মৌলভীবাজার শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে নারী ও শিশুসহ ২১ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক জানান, কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সকাল ১০টার দিকে শ্রীমঙ্গল সড়কের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ওই ২১ জন রোহিঙ্গার ঘুরাফেরা ও কথাবার্তায় সন্দেহ হলে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। আটক রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাতজন শিশু, আটজন নারী ও ছয়জন পুরুষ। তারা ২০১৮ সালে মিয়ানমার থেকে ভারতে প্রবেশ করে। এর আগে, গত ২৮ জুন মৌলভীবাজার শহরের চুবরা এলাকা থেকে ১৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা ১৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। ২২ জুন দুপুরে মিরসরাই উপজেলার বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর হোসেন মামুন জানিয়েছেন, আটক ১৪ রোহিঙ্গারা হলেন- মোহাম্মদ রফিক (২৫), জোহার (২৫), সাইমা (৬), হাসিনা (২৬), রমজান আলি (১২), কাশ্মিন আক্তার (৯), দেলোয়ার হোসেন (৭), জেসমিন (৩), মো. রফিক (১৯), ছানোয়ারা বেগম (১৮), রবি আলম (১৯), আজিজা (১৮), শওকত আরা (১৯) ও মো. জোবায়ের (২)।
নূর হোসেন মামুন বলেন, আটক রোহিঙ্গারা ভাসানচর থেকে ট্রলারে করে মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে আসেন। সেখানে তাদের দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ তাদের আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মিরসরাই হয়ে টেকনাফের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, রোহিঙ্গা শিবির থেকে পালানোর সময় কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়ানালা এলাকা থেকে ১৩৯ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২৬ জুলাই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কয়েক দফায় জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ‘লকডাউন’ বাস্তবায়নে বসানো তল্লাশি চৌকিতে এসব রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়। এর আগে ২৫ জুলাই একই স্থানে তিন দফায় ৭৮ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এর আগে ৭ জুলাই রামু হাসপাতাল গেট থেকে পাঁচ রোহিঙ্গাকে আটক করে এক মাসের কারাদণ্ড দেন রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও রাজবাড়ি, সীতাকুণ্ড মানিকগঞ্জের সিংগাইরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রোহিঙ্গা আটকের খবর পাওয়া গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়