ওবায়দুল কাদের : ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু শিগগিরই

আগের সংবাদ

মহামারিতে মেগা প্রকল্পে স্থবিরতা

পরের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : রাজধানীর অলিগলিসহ প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নাজেহাল অবস্থা নগরবাসীর। তেজগাঁও, মতিঝিল, বংশাল, ফকিরাপুল, এলিফেন্ট রোড, আগাসাদেক লেন, ফুলবাড়িয়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে দেখা দিয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। সংকট নিরসনে সিটি করপোরেশনসহ সেবা সংস্থাগুলোকে রাতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানীবাসী।
সরজমিন রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় দেখা গেছে, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার চারটি প্রধান সড়কের প্রত্যেকটিতে কাটা ও খোঁড়া হয়েছে। যার ফলে এই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী প্রতিটি মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। সামান্য জায়গা দিয়ে রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও প্রাইভেটকার পার হতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। খোঁড়াখুঁড়ির ফলে রাস্তাটির চারভাগের দুই ভাগেই বন্ধ হয়ে আছে। আর একটি অংশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে পার হতে হচ্ছে এসব যানবাহনকে। ফলে ৫ মিনিটের রাস্তা পারাপার হতে সময় লাগছে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। কারণ, রাস্তার মাঝখানে কাটা হয়েছে। বিপরীত দিক থেকে একটি প্রাইভেট কারও যদি আসে, তাহলে পুরো রাস্তায় যানবাহন আটকা পড়ে থাকছে। এমনকি পেছন থেকে কোনো গাড়ি সজোরে এলে, ধাক্কা খেয়ে রিকশা উল্টে পড়ার মতো অবস্থা। এতে যাত্রীরাও আহত হচ্ছেন। আহত হচ্ছেন রিকশা চালকও।
তেজগাঁওয়ের এই এলাকায় আছে নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট এবং শমরিতা হাসপাতাল। হাসপাতালে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা যাতায়াত করে থাকেন। তাদেরও পড়তে হচ্ছে বেশ ভোগান্তিতে। ফলে যারা এসব হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছেন, তাদের পাশাপাশি এসব হাসপাতালে করোনার ভ্যাকসিন নিতে আসারাও পড়ছেন ভোগান্তিতে। রাস্তায়ই দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। নির্দিষ্ট সময় কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারছে না অনেকেই।
স্থানীয় বাসিন্দা সাজাহান মিয়া জানান, কিছুদিন আগেও যখন লকডাউন চলছিল, তখন সময় ছিল। অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। মানুষজনও খুব একটা বের হতো না। রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। তখনই যদি সড়কের উন্নয়ন কাজগুলো করা হতো, তাহলে এখন এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না। তখন কিন্তু কাজগুলো করা হয়নি। ফলে এখন কাজ করায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখন যেহেতু কাজগুলো শুরু হয়েছে। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কাজেই সেগুলো দিনের বেলা না করে রাতে করলে ভোগান্তিটা কম হতো। এছাড়া একসঙ্গে চারটি রাস্তায় কাজ না করে, আগে দুটির কাজ শেষ করে, পরে বাকি দুটির কাজ করলেও এই ভোগান্তি পোহাতে হবে না। আগামী মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে এই যানজট আরো বাড়বে। আর অলিগলিতে খোঁড়াখুঁড়ির প্রভাব পড়ছে প্রধান সড়কগুলোতেও। সেখানে তৈরি হচ্ছে ভয়াবহ

যানজটের।
পুরান ঢাকার আগাসাদেক লেন এলাকার মূল সড়কটি এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। রিকশা বা প্রাইভেট কার তো দূরের কথা মানুষও চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। দেড় মাস যাবত সড়কটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। মাঝেমাঝে কাজের ঢিলেমি চলে। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়ায় সড়কের জমানো পানিতে ডিম পাড়ছে এডিস মশা। ফলে ওই এলাকার মানুষ সড়ক খোঁড়ার পাশাপাশি এডিস মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। তারা অবিলম্বে এই অবস্থার মুক্তি চায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, মার্চ মাস থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকার মানুষ খুব একটা বের হতাম না। জরুরি দোকান ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ ছিল। গাড়িরও খুব একটা চাপ ছিল না। সড়ক ফাঁকাই ছিল বলা যায়। তখন কেন সিটি করপোরেশন কাজ করল না? আর এখন সবকিছু খুলে দিয়েছে। কিছুদিন পর স্কুল-কলেজ-আদালত খুলে যাবে। সড়কে যানজট মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়বে। মাত্র দেড় মাস আগে আগাসাদেক লেনের কাজ শুরু হয়েছে। মাঝেমাঝে কাজ বন্ধ থাকে। কাজেও ধীরগতি। তার ওপর বৃষ্টির ফলে পুরো এলাকা কাদাময় হয়ে যায়। পানি জমে থাকায় এডিস মশার উৎপত্তি হচ্ছে। বর্তমান কাজের গতি দেখে মনে হচ্ছে আগামী ৬ মাসেও এই সড়কের কাজ শেষ হবে না।
রাজধানীর মতিঝিলের প্রায় বেশির ভাগ সড়কই খুঁড়ে রাখা হয়েছে। গোপীবাগ, টিকাটুলি, কে এম দাস লেন, অভয় দাস লেন, রামকৃষ্ণ মিশন রোড, ফকিরাপুল এলাকার সড়কগুলো কেটে রাখা হয়েছে। এসব সড়কের মাথায় কেটে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে ওইসব পথ দিয়ে যাতায়াতকারীরা রিকশা কিংবা প্রাইভেটকারে এসে দেখতে পান সড়ক কাটা। তখন তাদের আর সামনে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। পেছনে যাবে, তারও সুযোগ থাকে না। কারণ ততক্ষণে পেছনে একটির পর আরেকটি গাড়ি এসে জটলা লেগে যায়। এটা আরেকটি ভোগান্তি। গোপীবাগের বাসিন্দা অজিত ভট্টাচার্য ভোরের কাগজকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সিটি করপোরেশনের এই কাজগুলো ভালো। কিন্তু যেসব এলাকায় রাস্তা কাটা হচ্ছে, ওইসব এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলররা যদি আগে থেকেই নাগরিকদের জানিয়ে দেন, যে ড্রেনেজ নির্মাণের জন্য এ সড়কগুলো খোঁড়াখুঁড়ি করা হবে। উন্নয়ন কাজ করা হবে। আপনারা আপাতত বিকল্প সড়কগুলো ব্যবহার করুন। তাহলে মানুষ হিসেবে আমরাও সচেতন থাকব। বিকল্প পথ ব্যবহার করব। ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। তবে দ্রুত কাজ শেষ করারও দাবি জানান তিনি। এই পথ দিয়ে যাতায়াতকারী হেলেনা বেগম জানান, সড়কগুলো কাটার পর একপাশ যদি সরুও থাকতো। তাহলেও মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ড্রেনের কাজগুলো করতে গিয়ে পিচ্ছিল মাটিগুলো সড়কের পাশেই ফেলে রাখা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি পেয়ে সেগুলো আরো পিচ্ছিল হয়ে পড়ছে। ফলে এলাকার মুরুব্বিরা চলাচল করতে পারছেন না। কারণ, পিচ্ছিল সড়ক হওয়ায় মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেও কষ্ট হচ্ছে।
এলিফেন্ট রোড এলাকার বাসিন্দা জেরিন জাহান বলেন, এ এলাকাতেও গত কয়েক দিন ধরে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে রাখার ফলে আমাদের চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে। বর্ষাকালে এসব কাজ না করাই ভালো। তাহলে আমাদের ভোগন্তিতে পড়তে হবে না।
নিয়মানুযায়ী, মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল থাকায় সিটি করপোরেশন উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ থাকবে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত বর্ষা মৌসুম হওয়ায় মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বন্ধ রাখা হয়। তবে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব যেসব কাজ আমরা করে থাকি। এতে খুব একটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। কিন্তু অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোকে এই সময়ে কাজ করতে দেয়া হয় না জরুরি কোনো কাজ ছাড়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়