ডুপ্লেক্স বাসায় অগ্নিকাণ্ডে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

পরের সংবাদ

ফের মাঠ গরমের চেষ্টায় হেফাজত! এবার কাদিয়ানি ইস্যুতে অরাজকতার হুঙ্কার

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ভাস্কর্য ও মোদিবিরোধী ইস্যুতে ব্যর্থ হয়ে এবার ভিন্ন ইস্যুতে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটি এবার কাদিয়ানি ইস্যু সামনে এনে সরকারকে হুঙ্কার দিচ্ছে। কাদিয়ানিদের প্রতি বিষোদগার করে হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদি প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছেন, কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। আফগানিস্তানে তালেবান উত্থানের মধ্যে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতের এই হুঙ্কার বিচ্ছিন্ন কিছু নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও এর আগে বহুবার কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছিলেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।
জানা যায়, সোমবার গভীর রাতে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় হেফাজতে ইসলাম। সেখানে কাদিয়ানি সম্প্রদায় দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের সভাপতি ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে কাদিয়ানি সম্প্রদায়। তারা দেশের শীর্ষ আলেম-উলামাদের থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলদের চিঠির মাধ্যমে কাদিয়ানি হতে আহ্বান জানাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা মূলত দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।
প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হেফাজত মহাসচিব বলেন, কাদিয়ানিদের এসব ষড়যন্ত্র দ্রুত থামাতে হবে। তারা এসব অপকর্মের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে

দেশের মধ্যে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ দেশের মুসলমানরা কোনোভাবেই ‘খতমে নবুওয়াতকে অস্বীকারকারী গোস্তাখে রাসুলদের’ অপতৎপরতা মেনে নেবে না।
কাদিয়ানি স¤প্রদায় সুকৌশলে খতমে নবুওয়াতের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা (কাদিয়ানি) খতমে নবুওয়াতের মতো নির্ভেজাল একটা ঈমানি আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলন বলে অপপ্রচার চালায়। হেফাজতের এ নেতার দাবি, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশ সূচনালগ্ন থেকে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। যতদিন এই দেশে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা না হবে ও কাদিয়ানিদের অপতৎপরতা বন্ধ না হবে, ততদিন এই সংগঠন নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করে যাবে। সরকারকে দ্রুত সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের মতো কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে জোর দাবি জানান হেফাজতের মহাসচিব।
এদিকে কাদিয়ানি ইস্যু পুরনো হলেও হঠাৎ নতুন করে এই ইস্যুকে সামনে এনে হেফাজত মহাসচিবের এই হুংকারকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন করে মাঠে নামার ইস্যু খুঁজছে হেফাজত। কারণ আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলে জামায়াতে ইসলামীসহ বাংলাদেশের ইসলামপন্থি দলগুলো বেশ উচ্ছ¡সিত। যদিও তারা প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
সূত্র জানায়, সা¤প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানের ঘটনাবলি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। দলটির মজলিসে শুরার সদস্যদের মধ্যে এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি বিলি করা হয়। এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা ইসলামের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। দখলদাররা যে চিরদিন ক্ষমতা দখল করে থাকতে পারে না তার প্রমাণ হয়েছে আফগানিস্তান। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলে ইসলামের একটি নবজাগরণের সূচনা হতে পারে। সারাবিশ্বে যে মুসলিম নিপীড়ন এবং নির্যাতন তার পরিপ্রেক্ষিতে তালেবানদের এই বিজয় একটি শক্ত প্রতিবাদ বলেও এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তালেবানদের সাফল্যের ওপর এই অঞ্চলে ইসলামী বিকাশ নির্ভরশীল মন্তব্য করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানদের ধীরস্থিরভাবে দেশ পরিচালনা করতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা এবং আন্তর্জাতিক নানামুখী ষড়যন্ত্র হবে। এসব ষড়যন্ত্রকে সামাল দিয়ে ইসলামী বিপ্লব এবং শরিয়া শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেখানে (আফগানিস্তানে) তালেবানরা যদি সফল হয় তাহলে সিরিয়া, ইরাকসহ সংগ্রামরত বেশ কিছু দেশে ইসলামী শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সুযোগ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে বেশ উচ্ছ¡াস প্রকাশ করছে। এছাড়া তালেবানের উত্থানে বাংলাদেশে জঙ্গি-মৌলবাদী-সন্ত্রাসী রাজনীতিকে নতুনভাবে প্রাণ দিয়েছে। সুতরাং হেফাজতের এ ধরনের বিবৃতি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হেফাজতের নেতারা সবাই আফগানফেরত তালেবান। এরা সবাই ’৭০ এর দশকে আফগানিস্তানে জিহাদ করতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে প্রথমে হরকাতুল জিহাদ, পরে হেফাজতে ইসলাম গঠন করে। এরপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে, সংবিধানের বিরুদ্ধে ও দেশের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। হেফাজত-জামায়াতের সঙ্গে বিএনপিও এক হয়েছে উল্লেখ করে শাহরিয়ার কবীর বলেন, তাদের সবার লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশকে মোল্লা ওমরের আফগানিস্তান বানাতে হবে। এ এজেন্ডা নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন কৌশলে দেশকে অস্থিশীল করার চেষ্টা করবে। তাদের পেছনে পাকিস্তানের মদত আছে। এটা তো স্পষ্ট। আমরা আগেও হেফাজতের বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করেছি। এখনো করছি। এসব ইস্যুতে সরকারকে সাবধান হতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়