ডুপ্লেক্স বাসায় অগ্নিকাণ্ডে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

পরের সংবাদ

প্রত্যাবাসনে বাধা চীন-রাশিয়া! বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক মহলও নিষ্ক্রিয়

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইয়াসমিন। রোহিঙ্গা ওমেন ডেভেলপমেন্ট ফোরামের নির্বাহী পরিচালক। বর্তমানে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের এই বাসিন্দা রাখাইন রাজ্য ছেড়ে স্বামী ও দুই সন্তানসহ অনেক কষ্টে বাংলাদেশের টেকনাফে এসেছিলেন ঠিক চার বছর আগে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। চার বছর ধরেই নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিজ দেশে ফের সংসার পাততে চান। তবে ফেরার উপায় কী? ওখানে মিলিটারি শাসন। অন্যদিকে নেব নেব করেও কোনো কথাই রাখছে না মিয়ানমার। তিন বছর আগে প্রত্যাবাসন চুক্তি করেও এখন পর্যন্ত একজন মানুষকে ফেরত নেয়নি তারা। কবে ফেরত নেবে, আদৌ নেবে কিনা তাও জানে না কেউ।
ইয়াসমিনের মতোই ১৩ লাখ উদ্বাস্তুর বোঝা নিয়ে রোহিঙ্গা সংকট এখন এ অঞ্চলের জন্য এক মারাত্মক বিষফোড়া। মিয়ানমারের গাফিলতিতে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম অগ্রসর হতে পারেনি। এ বিষয়ে নতুন করে আশার আলোও দেখছেন না কেউ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রত্যাবাসনের প্রধান বাধা চীন-রাশিয়া। সেই সঙ্গে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও জাপানের স্বার্থ। তারা কেউই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে না। ওই আস্কারায়ই বাংলাদেশের কথাকে আমলে নিচ্ছে না মিয়ানমার।
এ ব্যাপারে কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মুবিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, মিয়ানমারের আগ্রহ নেই। সদিচ্ছা নেই। মোটকথা তারা বিষয়টিকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। তাদের লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গা বিতাড়িত করা। এক্ষেত্রে তারা সফল। অন্যদিকে প্রত্যাবাসন নিয়ে তাদের ওপর কেউ কোনো চাপ সৃষ্টি করছে না। চীন তাদের একটি বড় শক্তি। চীন-ভারত-জাপানের কাছে তাদের গুরুত্ব রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক। ফলে এসব দেশ প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করছে না।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ শুরুর

৩ মাসের মাথায় মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে হয় দু’দেশের চুক্তি। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া। কাগজপত্র যাচাই শেষে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট দুই দফা আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরও শুরু হয়নি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। কথা ছিল প্রতি সপ্তাহে মিয়ানমারে ফিরে যাবে দেড় হাজার রোহিঙ্গা। সে হিসেবে চুক্তির দুই বছরের মধ্যে ফিরে যাবে সবাই। কিন্তু তিন বছর পর ফেরেনি একজনও।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন-রাশিয়ার মদতেই মিয়ানমার শক্তিশালী। এছাড়া জাপান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিয়ানমারের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করে না আন্তর্জাতিক মহল। জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বিশ্লেষক মোহাম্মদ জমির ভোরের কাগজকে বলেন, মিয়ানমার একটা মানুষকেও তাড়াতাড়ি নেবে না। রাশিয়া, চীন আমাদের সমর্থন করেনি। মার্কিনিরাও সক্রিয়ভাবে কিছু বলেনি। রাশিয়া-চীন আমাদের সমর্থন করলে মিয়ানমার একটু হলেও প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভাববে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে চীন-রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলা।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত ওই দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় প্রথম দফায় ৫ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। মিয়ানমারের প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরাও এই প্রস্তুতির কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। তবে শর্ত ছিল এদের সবাইকে একসঙ্গে নেয়া হবে না। প্রতিদিন ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হবে। ৩০টি রোহিঙ্গা পরিবারের ১৫০ জন সদস্যকে প্রত্যাবাসন কমিশন মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য তালিকাভুক্ত করে। কিন্তু তাদের অনিচ্ছার কারণে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের ট্রানজিট ক্যাম্পে হাজির করা যায়নি। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। আদৌ এই প্রক্রিয়া শুরু হবে কিনা- তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রত্যাবাসন দুরূহ ব্যাপার। দুই দেশের মধ্যে ‘নোট অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ হয়েছিল। এই সমঝোতার গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু ওদের সদিচ্ছা নেই। অদূর ভবিষ্যতেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়, বহুপাক্ষিকভাবে চেষ্টা করছে। জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের মাধ্যমে চেষ্টা করছে। চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থায়ী রূপ পায়নি। মিয়ানমারের সামরিক, বেসামরিক কোনো সরকারই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় না। উল্টো যে ৬ লাখ রয়েছে, তাদেরও তাড়াতে চায়। দ্বিতীয়ত, চীন-ভারত-রাশিয়া নিজ স্বার্থের জন্য মিয়ানমারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। অবশ্য একটি স্বাধীন দেশে অন্য দেশ খুব একটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে না। বলতে পারে। তবে বিশ্বের সবাই নিজ স্বার্থের বাইরে কেউ কারো জন্য কাজ করতে চায় না, এটি বাস্তবতা।
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। এখন পর্যন্ত ৬ দফায় মিয়ানমারের কাছে ৮ লাখ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু প্রয়োজন মিয়ানমারের সদিচ্ছার। জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ্ রেজওয়ান হায়াত ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। আমরা প্রস্তুত। মিয়ানমার চাইলে যে কোনো সময় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়