ডুপ্লেক্স বাসায় অগ্নিকাণ্ডে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

পরের সংবাদ

ডেল্টার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সুরক্ষা! টিকা ও বিধিনিষেধে কমছে শনাক্ত-মৃত্যু >> নতুন ভ্যারিয়েন্ট না এলে সংক্রমণ কমবে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেশে করোনা সংক্রমণের পর মৃত্যু ও শনাক্তের দিক থেকে ভয়াবহ মাস ছিলো জুলাই। চলতি আগস্টের শুরুতে করোনার ভাইরাস কিছুটা চোখ রাঙ্গালেও মধ্য আগস্টেই তা কমতে শুরু করে। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হারে নি¤œœমুখী প্রবণতার পাশাপাশি মৃত্যুও কমছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জুনের শেষ দিক থেকে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তা ২০-এর ওপরেই ছিল। এর মধ্যে বেশ কিছুদিন শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি ছিল। এখন রোগী শনাক্তের হার ১৬ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ঈদের আগেপরে আরোপ করা কঠোর বিধিনিষেধের ফলে আগস্টের প্রথম দিক থেকে সংক্রমণ নিম্নমুখী হচ্ছে। নতুন রোগী কমতে থাকায় মৃত্যুও কমছে। তাছাড়া টিকার প্রভাবও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। তবে শঙ্কা কিছুতেই কাটছে না। কারণ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড় বাড়ছে, তাতে আগামী মাসের শুরুতে গিয়ে আবার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমতির ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে তা হবে খুব ধীর গতিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য ভোরের কাগজকে বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমবে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তা আরো কমবে। এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, যে সময়টার কথা বলছি তখন আমাদের দেশে শীতকাল। এই সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা থ্রি, রেসপিরেটরি সিনসিডিয়াল ভাইরাস এবং রায়নো ভাইরাস সংক্রমণ দেখা যায়। এসব ভাইরাসের কারণে মানুষের সর্দি-কাশি-জ্বর হয়ে থাকে। যখন এই চারটি ভাইরাসের একটি কারো শরীরে প্রবেশ করে তখন অন্য একটি ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে না। যদিও অন্য কোনো ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তাও প্রকাশ পায় না। এসব কারণে দেশে করোনার সংক্রমণ কমবে। গত বছরের অভিজ্ঞতাও তাই বলে। কী করণে সংক্রমণ কমছে তা গবেষণা করে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে আমি মনে করি, কঠোরভাবে মানা না হলেও বিধিনিষেধের নির্দেশনার ফল কিছুটা হলেও এক্ষেত্রে রয়েছে। মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে। এছাড়া টিকার প্রভাবও এক্ষেত্রে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর করোনা ভাইরাসের একটি করে মিউটেশন (রূপান্তর) হয়ে থাকে। রূপান্তর হয়ে যে ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) তৈরি করে তা সবসময় টিকে থাকে না। ফলে মিউটেশন হলেও তা মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয় না। মিউটেশনের পর যে ভ্যারিয়েন্টটা হয়ে থাকে তা বিরাজমান ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি সংক্রমণ ক্ষমতার অধিকারী হলেই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডমিন্যান্ট (প্রবল) হয়ে থাকে; যেমন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হলে পুরনোটার চেয়ে তা আরো বেশি সংক্রমণ ক্ষমতার অধিকারী হতে হয়। বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ শুরুর আগেই দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ও ইউকে ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু সেগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা ডেল্টার চেয়ে বেশি না হওয়ায় ওই দুই ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এমনকি যুক্তরাজ্যে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের (আলফা ভ্যারিয়েন্ট) উদ্ভব হলেও বর্তমানে আলফার তেমন অস্তিত্ব নেই, অথচ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বেশ প্রবল ক্ষমতায় সংক্রমণ ঘটিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হয়নি, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে- সে কারণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তার সংক্রমণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে এবং ফলে একদিন তা পুরোপুরি হারিয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী মনে করেন করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট না হলে ডেল্টা নিয়ে নতুন করে ভয়ের কিছু নেই। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে করোনা রোগী কম শনাক্তের ক্ষেত্রে কতগুলো কারণ আছে। করোনা প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। এছাড়া আংশিক হলেও বিধিনিষেধের প্রভাব রয়েছে। বিজ্ঞান বলে সামাজিক সংক্রমণ যদি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকে তাহলে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরক্ষা তৈরি হয়। যশোরে সংক্রমণ কমার ক্ষেত্রে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে এমনটা হয়েছে। শনাক্তের হার ও দৈনিক মৃতের সংখ্যা কমলেও দৈনিক মৃত্যুর যে হার তা কিন্তু এখনো অনেক বেশি। ১ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি। যা উদ্বেগের।
সংক্রমণ ও শনাক্ত রোগী কমতির ধারা দেখে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন বিশিষ্ট এই চিকিৎসাবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, মৃত্যুর এই হার প্রমাণ করে দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার সক্ষমতার দিকে আমাদের আরো বেশি নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। সর্বশেষ সংক্রমণের নি¤œগামীধারা অব্যাহত রাখতে টিকাদান কার্যক্রমের যেমন বিকল্প নেই তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মানারও বিকল্প নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম মনে করেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমার বিষয়টি নির্ভর করে মানুষের আচরণের ওপর। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সংক্রমণ কমাতে বিধিনিষেধের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল মানুষ কিছুটা হলেও তা মেনেছে। এরই প্রভাব এখন দেখা যাচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, সাবধান না থাকলে এখান থেকেই আবারো সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়