ডুপ্লেক্স বাসায় অগ্নিকাণ্ডে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

পরের সংবাদ

আত্রাইয়ে নিজেদের উদ্যোগে ৫ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : অনেক দিন ধরে রাস্তার অবস্থা খারাপ। স্থানে স্থানে পিচ-খোয়া উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থাতে যানবাহন চলা তো দূরে থাক, হেঁটে চলাই ছিল কঠিন। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় পানি জমে বর্ষাতে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে।
এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে চলাচলের দুর্ভোগ কমাতে এলাকার লোকজন নেমেছেন রাস্তা সংস্কারের কাজে। কেউ দিচ্ছেন টাকা, কেউ শ্রম। সম্মিলিত উদ্যোগে রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন বিশা ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নের ভাঙাজাঙ্গাল-হরিপুর সড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে এ সংস্কার কাজ শুরু করেছে বিশা ফাউন্ডেশন। এর সদস্যরা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারা অর্থ ও শ্রম দিয়ে এ সংস্কার কাজে অংশ নিচ্ছেন। সম্প্রতি ভাঙাজাঙ্গাল বাজারে এক অনুষ্ঠানে সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল। এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবাদুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইফতেখারুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী, বিশা ফাউন্ডেশনের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন (তোফা) প্রমুখ।
সাংসদ আনোয়ার হোসেন বলেন, নওগাঁর আত্রাই উপজেলা একটি বন্যাকবলিত এলাকায়। প্রায় প্রতি বছরই এ উপজেলায় বন্যা হয়। বন্যায় শত শত কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সরকারের অর্থায়নে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সব রাস্তা সময় মতো সংস্কার করা সম্ভব হয় না। তবে বিশা ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন নিজেরাই রাস্তা সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এভাবে জনগণ নিজেরা এগিয়ে এলে দেশে কোনো সমস্যাই থাকত না।
ভবিষ্যতে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙাজাঙ্গাল-হরিপুর সড়কটি টেকসইভাবে সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে এলাকাবাসীকে আশ্বাস দেন সাংসদ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে আত্রাইয়ে বড় বন্যা হয়। ওই বন্যায় রাস্তাটির বিভিন্ন অংশের পিচ-খোয়া উঠে যায়। কোথাও কোথাও পুরো রাস্তাই ভেঙে যায়। ২০১৮ ও ২০২০ সালেও বন্যা হয়। তখনো রাস্তাটির কিছু কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকাবাসী রাস্তাটি কোনো রকম চলাচলের উপযোগী করতে ভাঙা অংশে মাটি ফেললেও ইট-বালু না ফেলায় বর্ষায় রাস্তাটি পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্ষায় কাদা ভরা রাস্তায় যানবাহন চলাচলের আর সুযোগ থাকে না। পায়ে চলাই মুশকিল হয়ে পড়ে। সড়কটি দিয়ে আত্রাইয়ের বিশা ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার লালোড় ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রামের মানুষ মাঠের ধান বাড়িতে তুলে এবং বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে যান। এছাড়া ওসব এলাকায় প্রচুর মাছ চাষ হয়ে থাকে। সড়কটি দিয়ে চাষ করা মাছ নিয়ে আত্রাই উপজেলা সদর, নাটোরের সিংড়া উপজেলা সদর ও নাটোর শহরে যান মৎস্যজীবীরা।
ভাঙাজাঙ্গাল গ্রামের বাসিন্দা ও বিশা ফাউন্ডেশনের সদস্য জহুরুল হক বলেন, রাস্তাটি এতটা খারাপ হয়েছে যে, যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করেন। রাস্তাটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রায় সব জায়গায় আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিশা ফাউন্ডেশনের সভাপতি নেতৃত্বে ফাউন্ডেশনের ১ হাজার ৭৭০ জন সদস্য ইট-বালু ফেলে রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন।
ফাউন্ডেশনের সদস্য ছাড়াও এলাকার অনেক মানুষ রাস্তা সংস্কারে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন।
বিশা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও বিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, রাস্তাটি উন্নয়নের জন্য স্থানীয় মানুষ নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ফায়দা হয়নি। ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাস দিলেও কোনো কাজ করেননি। অবশেষে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় বিশা ফাউন্ডেশন থেকে রাস্তাটি সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়। এলাকার সবকটি মানুষ এ কাজে যুক্ত হয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়