সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মানববন্ধন

আগের সংবাদ

ঝুঁকিতে উদারপন্থি ও নারীরা : শরিয়া আইনে দেশ চালানোর ঘোষণা তালেবান প্রশাসনের, তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ বিভিন্ন শহরে

পরের সংবাদ

দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন গবেষকরা : দেশীয় উদ্ভাবন অনুমোদন নিয়ে এত জটিলতা!

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাশেদ আলী : বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দেশে বিভিন্ন উদ্ভাবনের কথা শোনা গেলেও বুয়েটের ‘অক্সিজেট’ ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনোটিরই অনুমোদন মেলেনি। মহামারির এই সময়ে পাবনার স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে পেশাদার গবেষক, অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। কম খরচে নিজ দেশে ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, টিকা, কিট বা চিকিৎসা সহায়ক যন্ত্রপাতি তৈরি করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। অনেক অর্থ খরচ হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গতানুগতিক জটিলতায় আটকে আছে সব। এ জট কবে, কীভাবে খুলবে- জানা নেই কারো।
গত দেড় বছরে বিশ্বের অনেক দেশ নিজস্ব প্রযুক্তিতে এসব উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। জরুরি বিবেচনায় উদ্ভাবনগুলোকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। কোথাও নিয়মকানুনের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ছাড়া স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, বাণিজ্য বা সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয়ের এসব নিয়ে আগ্রহ দেখা যায়নি। যেখানে উদ্যোগগুলোকে পরিচর্যা ও সহায়তা করার কথা, সেখানে গবেষকরা ঘুরছেন দপ্তর দপ্তরে। ১৫-২০টি জটিল ধাপ পেরিয়ে উৎপাদনের অনুমোদন জোগাড় করা কারো পক্ষেই আর সম্ভব হচ্ছে না।
অক্সিজেন কনসেনট্রেটর : অক্সিজেনের অভাবে প্রায় এক বছর আগে পাবনার ঈশ্বরদীর স্কুলছাত্র তাহের মাহমুদ তারিফের বাবা মারা যান। এরপরই সে স্বল্প খরচে বাতাস থেকে অক্সিজেন উৎপাদনের যন্ত্র বা অক্সিজেন কনসেনট্রেটর তৈরির কাজে নামে। গত ৯ জুন ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদে তার যন্ত্রটি তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে। দেখা যায়, বাজারের নামিদামি ব্র্যান্ডের অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের মতোই এটি কার্যকর। পরে পাবনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদের সহায়তায় যন্ত্রটি পাঠানো হয় সরকারের আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন ল্যাবে। সেখানেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল আসে। তবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালসহ নানা ধাপ উৎরাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব অনুমতি ও শর্ত পূরণ প্রয়োজন, সেগুলো করা ওই স্কুলছাত্রের পক্ষে আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
একই অবস্থা বগুড়ার মাহমুদুন্নবী বিপ্লবের অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের। গত ১৭ জুন যন্ত্রটি ইনোভেশন ল্যাবের প্রদর্শনীতে প্রশংসা অর্জন করে। বাতাস থেকে নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন আলাদা করে ৯৮ শতাংশ বিশুদ্ধ অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারা এ কনসেনট্রেটরে মিনিটে ১০ লিটার অক্সিজেন তৈরি হয়। নিরবচ্ছিন্নভাবে ২৪ ঘণ্টা চলার জন্য

এতে আলাদা পাওয়ার ব্যাকআপের ব্যবস্থাও রয়েছে। সাধারণ করোনা রোগীর অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে যন্ত্রটি যথেষ্ট বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন। তবে সেটির অনুমোদন প্রক্রিয়াও নানা টেবিল ঘুরে আটকে আছে এখনো।
এ প্রসঙ্গে আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন ল্যাবপ্রধান ফারুক আহমেদ জুয়েল জানান, এবার ৬টি উদ্ভাবনকে অনুমোদন পাইয়ে দিতে তারা চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ওই ২টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরও রয়েছে। এটুআইয়ের ইনোভেশন ফান্ড থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমআরসি, ওষুধ প্রশাসনসহ যে যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন, তারা সেটিও করবেন।
বুয়েটের সি-প্যাপ-অক্সিজেট : করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের উচ্চ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হলেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) অনুমোদন পাচ্ছিল না। পরে তা গত ৫ জুলাই উচ্চ আদালতের নজরে আনেন এক আইনজীবী। এর শুনানীতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন। এরপর গত ২৮ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে ২০০টি অক্সিজেট তৈরির অনুমোদন মেলে।
প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানকারী বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান জানান, অক্সিজেট সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর স্বল্প মূল্যের একটি যন্ত্র যা সাধারণ ওয়ার্ডেই উচ্চগতির অক্সিজেন দিতে পারে। অক্সিজেট একটি সূ² ভেঞ্চুরি ভালবের মাধ্যমে বাতাস ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণ তৈরি করে অন্তত ৬০ লিটার প্রতি মিনিট গতিতে সরবরাহ করে।
তিনি জানান, যন্ত্রটি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদন নিয়ে ক্লিনিকেল ট্রায়ালের প্রথম, দ্বিতীয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও সফল হয়। কিন্তু কোনো কারখানায় উৎপাদন করা হয়নি বলে এর অনুমতি দিচ্ছিল না ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বঙ্গসেফ ওরো-ন্যাজাল স্প্রে : করোনা ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে এমন এক ধরনের নাকের স্প্রে উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিকেল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম)। গত ১২ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. মালা খান দাবি করেন, বিশ্বে এ ধরনের স্প্রে এটাই প্রথম। সীমিত পরিসরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ২০০ জন করোনা রোগীর মধ্যে স্প্রের ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ চালিয়ে ৮০ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। আরো বেশিসংখ্যক মানুষের ওপর পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে এবং পেটেন্টের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার কথাও জানান তিনি। তবে এখন পর্যন্ত এটির অনুমোদন ও বাজারে আসার খবর পাওয়া যায়নি।
ভেন্টিলেটর : করোনা মহামারি দেখা দেয়ার পর জরুরিভাবে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটর মেশিন তৈরিতে উঠেপড়ে লাগে গোটা বিশ্ব। ভারত এখন প্রতি মাসে দেড় হাজার ও পাকিস্তান ৩০০ ভেন্টিলেটর তৈরি করছে। আর সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসেও ভেন্টিলেটরও তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের তিনটি মডেলের ভেন্টিলেটরের প্রটোটাইপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উদ্বোধন করেন। সে সময় আরো অন্তত ১৮টি উদ্যোগ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে ছিল। এর মধ্যে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), মিনিস্টার হাইটেক পার্ক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ শিল্পকারিগরি সহায়তা কেন্দ্র, বিটাকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তির তৈরি প্রটোটাইপ কারিগরি বিবেচনায় সফল হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুমোদন না পাওয়ায় কেউ-ই উৎপাদনে যেতে পারেনি।
গণস্বাস্থ্যের কিট : করোনাভাইরাস সংকটের শুরুর দিকেই দেশীয় প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষে বৈজ্ঞানিক বিজন কুমার শীল এক ধরনের এন্টিবডি টেস্ট কিট উদ্ভাবনে কথা জানান। তিনি দাবি করেন, জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট কিট দিয়ে ৫ মিনিটে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে, খরচ হবে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
এরপর চীন থেকে কাঁচামাল (রি-এজেন্ট) এনে কিটের শ্যাম্পল তৈরির কাজ শুরু হয়। অনেক নাটকীয়তার পর গত ২৬ জুন এই কিট ‘মানসম্মত নয়’ বলে অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। যদিও গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে অনেক আগেই অনাগ্রহ-অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন।
এর আগে ১৩ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গণস্বাস্থ্য তাদের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য জমা দেয়। ১৭ জুন বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই কিট এন্টিবডি চিনলেও প্রথমভাগের ভাইরাস শনাক্তে কার্যকর নয়। অন্যদিকে, গণস্বাস্থের পক্ষে বলা হয়, মূলত এন্টিবড়ি শনাক্ত করতেই এ কিট। করোনা আক্রান্তদের শরীরে তৈরি হওয়া এন্টিবডি শনাক্ত করা গেলে এর বিস্তার রোধ ও চিকিৎসার খরচ কম ও সহজ হতো বলে তাদের দাবি।
ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স : দেশে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করে আলোচনায় আসে ওষুধ প্রস্তুতকারী গেøাব ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান গেøাব বায়োটেক। গত বছরের ২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ কথা জানায়। তারা খরগোশ ও ইঁদুরের ওপর এর সফল প্রয়োগের দাবি করে। গেøাবের উদ্ভাবিত তিনটি সম্ভাব্য টিকা পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। শুরুতে গেøাব বায়োটেক তাদের টিকার নাম দেয় ‘ব্যানকোভিড’। পরে নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ রাখা হয়।
সম্ভাব্য টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের নীতিগত অনুমোদন চেয়ে গত জানুয়ারিতে বিএমআরসিতে আবেদন করে গেøাব। বিএমআরসির অনুমোদনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের শর্তজুড়ে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে, ফেজ ওয়ান ট্রায়ালের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির ওপর টিকাটি পরীক্ষা করে এর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সমস্ত কাগজপত্র বিএমআরসিতে জমা দিতে হবে। এরপর গত ৪ জুলাই রাতে গাজীপুরের বনে বানর ধরতে গিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয় গেøাব বায়োটেক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বানর বা শিম্পাঞ্জির ওপর ট্রায়াল দেয়ার অনেক জটিলতা আছে। টিকা প্রয়োগের পর এর কার্যকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য জানতে বিশেষ ল্যাব প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে নেই। আর বিদেশ থেকে এমন পরীক্ষা করাতে হলে সরকারের সহযোগিতা দরকার।
কেন আটকে যাচ্ছে সব : বর্তমান নিয়মকানুন অনুসরণ করে সাধারণ উদ্ভাবকের পক্ষে কোনো মেডিকেল যন্ত্রের অনুমোদন পাওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী, উদ্ভাবককে প্রথমে ৮-১০টি প্রটোটাইপ বা নমুনা তৈরি করতে হয়। এরপর সেগুলো ‘উপযুক্ত’ কোনো ল্যাবরেটরিতে কারিগরি পরীক্ষা করিয়ে মতামত নিতে হয়। যদিও এমন উপযুক্ত ল্যাবের তালিকা নির্ধারণ করেনি বিএমআরসি বা ওষুধ প্রশাসন। ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পরীক্ষার জন্য গ্যাসফ্লো এনালাইজরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি থাকায় গবেষকদের সাধারণত মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ল্যাবরেটরিতে প্রটোটাইপ পরীক্ষা করাতে হয়। এরপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক ছাড়পত্রের জন্য বিএমআরসিতে আবেদন করতে হয়। সেখানে কনট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিআরও) নিয়োগ করে যন্ত্রটির প্রটোকল তৈরি করতে হয়। বিএমআরসি ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদিত নিরীক্ষক দলও এ কাজটি করতে পারে। এসব কাজের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ফি দিতে হয় বিএমআরসিতে। এরপর নৈতিক ছাড়পত্র পাওয়া গেলে গবেষককে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আবেদন করতে হয়। অনুমতি পাওয়া গেলে নির্ধারিত হাসপাতালের নির্ধারিত সংখ্যক রোগীর ওপর যন্ত্রগুলো পরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেকটি ধাপে ডাটা বা পর্যবেক্ষণগুলো নির্ধারিত ছকে সংরক্ষণ করে সিআরও বা ওই নিরীক্ষক দল। যে হাসপাতালে ট্রায়াল হয়, সেখানে ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন সুবিধা ব্যবহারের জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয় উদ্ভাবককে। ট্রায়াল শেষে পারফরম্যান্স টেস্ট রিপোর্টটি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কারিগরি নিরূপণ কমিটিতে জমা দিতে হয়। সব ঠিক থাকলে জরুরি, অস্থায়ী, স্থায়ী বা পর্যবেক্ষণসহ অনুমোদন দেয় ওষুধ প্রশাসন।
এখানেই শেষ নয়। উৎপাদনে যেতে হলে আবারো নির্ধারিত গাইডলাইন মেনে প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। ২০১৯ সালের প্রস্তাবিত মেডিকেল ডিভাইস ম্যানুফেকচারিং গাইডলাইন অনুযায়ী, উৎপাদকের কমপক্ষে ৫ হাজার স্কয়ার ফুটের কারখানা থাকতে হয়। সেখানে থাকতে হয় মেডিকেল যন্ত্রপাতি তৈরির উপযুক্ত মানের পরিবেশ। ওষুধ প্রশাসনের লোকজন সরেজমিন পরিদর্শন শেষে উৎপাদনের অনুমতি দেয়। বাজারজাতের আগে উৎপাদিত পণ্যের মান যাচাইও করতে হয়।
বিশাল এ যাত্রায় পদে পদে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সমন্বয়হীনতা। এ প্রসঙ্গে মিনিস্টার হাইটেক পার্কের পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুল হাসান স্বপন বলেন, আমরা ভেন্টিলেটর তৈরিতে অনেক দূর এগিয়েছিলাম। টানা ৭ দিন প্রোটোটাইপগুলো চালিয়ে ভালো ফল পাই। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের ঠিক করে দেয়া হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দিতে গিয়ে আটকে যাই। কীভাবে, কাদের ওপর ট্রায়াল দেয়া হবে, এসব ঠিক করে দেয়া হয়নি। অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়াও মনে হয় জানে না তারা। অনেক বিনিয়োগ সত্ত্বেও নানা জটিলতা দেখে এক পর্যায়ে হাল ছাড়ি আমরা।
ওয়ালটনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী জানান, তাদের ভেন্টিলেটরগুলো শতভাগ আইসিইউর ভেন্টিলেটরের মতো করে ডিজাইন করা নয়। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য এমন ভেন্টিলেটর যথেষ্ট। বিশ্বের অনেক দেশই এ রকম যন্ত্র তৈরি করছে। কিন্তু আমাদের দেশে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সব শর্ত পূরণ করে আসতে বলছে।
তিনি বলেন, বিশ্বখ্যাত মেডিকেল সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিক্সের উন্মুক্ত ডিজাইনে করা পিবি-৫৬০ মডেলের যন্ত্রটিরও অনুমোদন দিতে রাজি নয় তারা। বিষয়টি আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ ছাড়া এ জট খুলবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়