মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

ঝুঁকিতে উদারপন্থি ও নারীরা : শরিয়া আইনে দেশ চালানোর ঘোষণা তালেবান প্রশাসনের, তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ বিভিন্ন শহরে

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দখলকারী তালেবানরা ঘোষণা দিয়েছে, শরিয়া আইনের ভিত্তিতে দেশটি শাসন করা হবে। কাবুল দখলের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তাদের মুখপাত্র বলেছেন, শরিয়া আইনের আওতার মধ্যেই ‘গণমাধ্যম ও নারী অধিকার’-এর মতো বিষয়গুলোর মর্যাদা রক্ষা হবে। তবে বাস্তবে তার প্রায়োগিক রূপটি কী হবে, সে বিষয়টি খোলাসা করেননি তিনি।
তালেবানদের এই ঘোষণার পর আফগান নারীরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে বিপদ বাড়বে উদার চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ও আধুনিক জীবনা-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠা আফগান নাগরিকদের, আশঙ্কা তাদের।
নারীশিক্ষার অগ্রণী সেনা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শরিয়া আইনের তালেবানি ব্যাখ্যা আফগান নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিবিসিকে তিনি জানান, তালেবানি শাসনে লাখ লাখ আফগান নারী তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন আফগান নারীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে আমার। সামনের দিনগুলো কেমন হতে যাচ্ছে, সে ভাবনায় গভীর উদ্বেগে রয়েছেন তারা। তাদের অনেকের মনে আছে ১৯৯৬-২০০১ সালের তালেবানি শাসনের কথা, যখন শরিয়া আইনের অজুহাতে তাদের অধিকার সুরক্ষা ও স্কুলে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এই আইনের কঠোর প্রয়োগ হিসেবে তখন, বিশেষত খুনি ও ব্যভিচারীদের মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি প্রকাশ্যেই কার্যকর করে তালেবানরা।
কাবুল দখলের এক মাস আগে থেকেই গজনি দখল করে তালেবানরা। সেখান থেকে পালিয়ে কাবুলে আসা এক নারী জানান, গজনিতে আমরা ঘরের পুরুষ যেমন- বাবা, স্বামী বা ভাইয়ের সঙ্গছাড়া ঘরের বাইরে আসতে পারতাম না। কাবুলে আশ্রয় নেয়া অন্য এক নারী বলেন, আমি ঘরের বাইরে পা রাখি না। কেনাকাটা বা কফিশপে যাওয়াও

বন্ধ। আমার শিক্ষা, চাকরি সব শেষ। এখন প্রাণ বাঁচাতে আমাকে বোরকার জীবন বেছে নিতে হবে। যেসব মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তাদের উৎকণ্ঠিত অভিভাবকরা বলছেন, তখনই বিয়েটা করে নিতে বলেছিলাম! এখন যদি তালেবানরা এসে বলে, বাড়িতে কুমারী মেয়ে থাকলে আমাদের হাতে তুলে দাও, তখন কী করব? তালেবানরা বলেছে, ১২ বছরের বেশি বয়সের কোনো মেয়ে স্কুলে যেতে পারবে না। বিয়ে ছাড়া যে নারী-পুরুষ সম্পর্ক গড়বে, তাদের পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে। চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কাটা হবে! বিবিসির প্রতিবেদনে ছদ্মনামের অন্য এক নারী বলেন, আমি আর জোরে হাসতে পারছি না, আমার প্রিয় গান শুনতে পারছি না, পছন্দের ক্যাফেতে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। আমার প্রিয় হলুদ রঙের পোশাক পরতে বা গোলাপি লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারছি না। আমি আর আমার চাকরিতে যেতে পারব না। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করতে আমি বছরের পর বছর ধরে কাজ করছি, তা আর শেষ করতে পারব না।
প্রসঙ্গত, শরিয়া হচ্ছে মূলত ইসলাম ধর্মের আইনি পদ্ধতি। ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন এবং হাদিসের আলোকে এর বিধি-বিধানগুলো প্রণীত। শরিয়া হচ্ছে জীবনাচরণের সেই পদ্ধতি যা সব মুসলিমকে মেনে চলতে হয়; এর মধ্যে রয়েছে নামাজ, রোজা এবং জাকাতের মতো বিষয়গুলো। শরিয়া আইনের অপরাধগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো ‘হাদ্দ’ অপরাধ বা মারাত্মক অপরাধ এবং যেগুলোর জন্য রযেছে সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান। অন্যটি হলো ‘তাজির’ অপরাধ, যেখানে শাস্তির বিষয়টি বিচারকের বিবেচনা বোধের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। যেমন চুরি হচ্ছে হাদ্দ অপরাধ, যার সাজা হিসেবে চোরের হাত কাটার বিধান রয়েছে; ব্যভিচার জাতীয় অপরাধের সাজা হিসেবে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে। ইসলামি বিচারকরা এ জাতীয় নির্দেশনা ও বিধান দিয়ে থাকেন। যেসব নির্দেশনা আইনিভাবে আনুষ্ঠানিক হিসেবে গণ্য করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় ফতোয়া।
তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ বিভিন্ন শহরে : রাজধানী কাবুলসহ দেশটির বিভিন্ন শহর থেকে তালেবানবিরোধী পতাকা বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এর আগে জালালাবাদ শহরে তালেবান বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালালে বেশ কয়েকজন নিহত হন। সামাজিক নেটওয়ার্কে আসা ভিডিওতে দেখা গেছে, কাবুলে একদল নারী ও পুরুষ কালো, লাল ও সবুজ রঙের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন- ‘আমাদের পতাকা আমাদের পরিচয়।’ এক নারী নিজের কাঁধে পতাকা মুড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে আফগানিস্তান। দেশটিতে ১৯ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এদিকে কুনার প্রদেশের রাজধানী আসাদাবাদে বেশ কয়েকজন মানুষ একটি মিছিলের সময় নিহত হন। মোহাম্মদ সেলিম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কয়েক হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসে। শুরুতে আমি ভয়ে ছিলাম এবং মিছিলে যোগ দিতে চাইনি। কিন্তু যখন দেখলাম এক প্রতিবেশী যোগ দিচ্ছেন, আমিও বাড়ি থেকে পতাকা হাতে মিশে গেলাম মিছিলে। তিনি আরো বলেন, তালেবানের গুলি ও পদদলিত হয়ে মিছিলের অনেকের মৃত্যু ঘটেছে। তালেবানবিরোধী অবস্থান নেয়া সদ্য গদিচ্যুত সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তিনি নিজেকে আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে বিলম্ব হতে পারে : এদিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে বিলম্ব হতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগান ভূখণ্ড থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। তবে তালেবানরা কাবুল দখল করে নেয়ায় এখন দেশটিতে থাকা প্রায় ১৫ হাজার মার্কিন নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে অবস্থান করবে। এ মুহূর্তে সামরিক বিমানে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। কিন্তু তালেবানরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে কাবুল বিমানবন্দরমুখী মানুষদের বাধা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাড়ে চার হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন। বাইডেন জানান, ১০ থেকে ১৫ হাজার আমেরিকান নাগরিককে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। এরপর মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুবাদক হিসেবে কাজ করা ৫০ থেকে ৬৫ হাজার আফগান নাগরিককেও সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। অথচ এখন পর্যন্ত ছয় হাজার মানুষকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়