বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স

আগের সংবাদ

তালেবান আতঙ্কে বিশৃঙ্খলা > আফগানদের দেশ ছাড়ার হিড়িক : উড়ন্ত বিমান থেকে খসে পড়ল তিনজন

পরের সংবাদ

সতর্ক ‘পর্যবেক্ষণে’ ঢাকা : আফগান নাগরিকদের আশ্রয় দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : আফগানিস্তানে তালেবান ফিরে আসার আঁচ কিছুটা হলেও পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। তবে দেশটিতে চলমান ঘটনাবলি গভীর ‘পর্যবেক্ষণে’ রেখেছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে মার্কিনিদের সহায়তাকারী আফগান নাগরিকদের আশ্রয় দেয়ার একটি প্রস্তাবও পেয়েছে ঢাকা। তবে তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অন্যদিকে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, আফগান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ। আর তালেবান সাম্প্রদায়িক শক্তি। সাম্প্রদায়িক তালেবানের ডাকে কেউ কেউ বাংলাদেশ থেকে কাবুলে পথে রওনা দিয়েছেন বলে ঢাকার পুলিশ জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের স্বার্থ নিয়ে সোচ্চার।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের কিছু ধর্মান্ধগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক। ২০ বছর আগে যখন তালেবানের রমরমা অবস্থা ছিল, তখন এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানে যোগ দিয়েছিল। একই সঙ্গে ঢাকার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সেøাগান দিয়ে বলেছিল, ‘বাংলা হবে আফগান, আমরা হব তালেবান’। তালেবান ফের আফগান মসনদে আসায় বাংলাদেশের ওই ধর্মান্ধগোষ্ঠী বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে- এমনই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। কাজেই আফগান নিয়ে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকতে হবে পরামর্শ তাদের।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মধ্য এশিয়ায় চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক বলয় বিস্তারে নতুন হাতিয়ার আফগানিস্তান। একই সঙ্গে উইঘুরকে

নিয়ে পড়তে চায় না কোনো সংকটে। তাই ২০ বছর পর মার্কিনিরা যখন আফগান ছাড়ল, তখন তালেবানদের দাওয়াত দিয়েছে বেইজিং। শুধু দাওয়াতই নয়, তালেবান প্রধানের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকও করেছেন। এদিকে তালেবানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সমীকরণ এখনো অন্ধকারে। এ তুলনায় পাকিস্তান, ইরান কিংবা মস্কোর সঙ্গে তালেবানের যোগাযোগ অত্যন্ত ভালো। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতেও, ২০ বছর পর তালেবানের এই উত্থানের পেছনে সম্পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে চীন ও রাশিয়ার। এমনকি পাকিস্তান যদি তালেবানের পাশে না থাকত তাহলে তালেবানরা এই অবিশ্বাস্য গতিতে অগ্রসর হতে পারত কিনা, এমন প্রশ্নও রয়েছে। এ কারণে ভারতের জন্য তালেবান যথেষ্ট উদ্বেগের।
এত দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি হবে- তা ছিল যাবতীয় অঙ্কের বাইরে। এর ফলে ভারত যেখানে তালেবান নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে সেখানে ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশের কী হবে- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ভোরের কাগজকে বলেন, আফগান পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা কারো পক্ষে নই। মোটামুটি নিরপেক্ষ জায়গা থেকেই আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এক্ষেত্রে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কোন গতিতে চলবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওখানে আমাদের মিশন নেই। তবে এনজিও ব্র্যাকের মাধ্যমে কিছু লোক দেশটিতে কাজ করেন। আমরা তাদের বলেছি গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কর্মজীবীকে ব্র্যাক যেন দেশটি থেকে সরিয়ে আনে। এদিকে কেউ কেউ চাচ্ছেন আফগানিস্তান সরকার ও আমেরিকাপন্থি আফগান কিছু নাগরিককে যেন ঢাকা আশ্রয় দেয়। কারণ ঢাকা রোহিঙ্গাদেরও আশ্রয় দিয়েছে। ঢাকা এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যারা আশ্রয় নিতে চায় তারা শরণার্থী না সন্ত্রাসী আমরা জানি না। এজন্য আমরা না করে দিয়েছি। তবে আফগান নাগরিকদের আশ্রয় দিতে ঢাকাকে কে অনুরোধ করেছিল এমন প্রশ্নের জবাব দেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সম্পর্ক গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেছেন, আফগানিস্তানে যা চলছে তা আদর্শের যুদ্ধ নয়। সাম্প্রদায়িক মধ্যযুগীয় চিন্তা-চেতনার সংগঠন তালেবান আপাতত ওখানে জয়ী হয়েছে। মাত্র দুসপ্তাহের মধ্যে বিস্ময়করভাবে তালেবান জয়ী হলেও এর সীমাবদ্ধতা শুধু আফগানিস্তানে থাকবে না। এদের সমর্থনে আগেও বাংলাদেশ থেকে কিছু ধর্মান্ধ আফগানিস্তানে গেছেন এবার যেন সেটির পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে যা চলছে তা ভারত, পাকিস্তানও মনে হয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। চীনও তালেবানকে চটাতে চাইছে না। এ কারণে তালেবান যাতে চীনকে শত্রæ মনে না করে সেজন্য আগেভাগেই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তালেবান প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আফগানিস্তান সার্কভুক্ত সদস্য দেশ। সার্কের প্রভাবশালী সদস্য ভারতও উদ্বেগে। কাজেই বাংলাদেশকে পুরো পরিস্থিতির দিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে।
আরেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ জমির আফগান পরিস্থিতি নিয়ে তাড়াহুড়ো করে মন্তব্য করতে রাজি নয় জানিয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশের এখন চুপ করে পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তা গভীরভাবে দেখা উচিত। কারণ বলা হচ্ছে আফগান প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার সরকারের কী হবে তা এখনো জানা যায়নি। শেষ পর্যন্ত তালেবানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে সেখানে সরকারের রূপ কী হবে তাও দেখা উচিত এবং আগামী ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে আফগান পরিস্থিতির পুরো চিত্র সামনে চলে আসবে। ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আফগান সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে এখন যারা আছেন তাদের ভূমিকা কী হবে তাও পরিষ্কার হবে। এছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আফগানের সঙ্গে সৌদি আরব, কাতার, ইরানের সঙ্গে কী সম্পর্ক হবে- এসব বিষয় না দেখে বাংলাদেশের কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলে জানান তিনি। আগামী ৩ দিন বাংলাদেশকে গভীরভাবে আফগান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মতামত দিলে ভালো হবে বলে মন্তব্য করেন এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক।
এদিকে শনিবার ঢাকার পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, তালেবানের সঙ্গে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে এরই মধ্যে কিছু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ার পর সেখানে ধরা পড়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। তার মতে, আফগানিস্তানে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য একটি আহ্বান জানানো হয়েছে তালেবানদের পক্ষ থেকে। এবং বাংলাদেশ থেকে কিছু মানুষ অলরেডি তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগদান করার জন্য হিজরত করেছে। কিছু মানুষ আমরা ধারণা করছি যে ইন্ডিয়ায় ধরা পড়েছে। আর কিছু পায়ে হেঁটে বিভিন্নভাবে আফগানিস্তানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তবে আফগানিস্তানে যাওয়ার পথে কোনো বাংলাদেশি ভারতে ধরা পড়েছে কিনা- সেটি ভারতের দিক থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উগ্রপন্থিদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এমন গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, আফগানিস্তানের পটপরিবর্তন বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবেই- তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ কারণে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। পুরনো তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয়, সে লগ্ন থেকে আফগান জিহাদের সঙ্গে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সরাসরি একটি যোগসূত্র রয়েছে। সে সময়ই আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাংলাদেশ থেকে অনেকে আফগানিস্তান গিয়েছিল। আফগানিস্তান এই অঞ্চলের দেশ হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কোনো সীমান্ত নেই। বাংলাদেশ থেকে কেউ অবৈধ পথে আফগানিস্তানে যেতে চাইলে তাকে ভারত ও পাকিস্তান পাড়ি দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়