অশ্রুডানায় সূর্য খোঁজার পালা

আগের সংবাদ

শূন্য অর্থনীতি থেকে উন্নয়নের রোল মডেল

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সলিল কুমার বিশ্বাস মিঠু, গোপালগঞ্জ থেকে : জাতির জনকের স্মৃতিসৌধ নিয়ে লিখতে গিয়ে পান্না বালা সৈয়দ ফখরুদ্দিন মাহমুদের ৩৩ লাইনের কবিতা ‘একটি অমর সমাধি’র প্রথম দুই লাইন দিয়ে শুরু করেছেন এভাবে-
‘যথার্থ বাঙালি, যদি তুমি হও ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধিস্থলে…’
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের এক নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে পাথরে খোদাই করা কবিতাটি। প্রশস্ত পথের দুই পাশে রয়েছে ফুলের বাগান ও কৃত্রিম পাহাড়। এসবের মাঝেই পাঠাগার ও জাদুঘর। পথ ধরে আরো এগুলে বঙ্গবন্ধুর সমাধি। এই সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স গোপালগঞ্জ শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গিপাড়ায়। জানা গেল, প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি প্রায় চার হাজার দর্শনার্থী আসেন এখানে। জনশ্রæতি আছে, পারস্য থেকে কয়েকজন মুসলিম সাধক এই এলাকার প্লাবিত অংশে টং বেঁধে বসবাস করতে থাকেন। কালক্রমে ওই টং থেকেই এ এলাকার নামকরণ হয় টুঙ্গিপাড়া। এই টুঙ্গিপাড়াতেই ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে শাহাদত বরণ করেন তিনি। পরের দিন টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে মা ও বাবার পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৩৮ দশমিক ৩০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বোর্ডের পরামর্শ মতো এই সমাধিসৌধের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করছে। টুঙ্গিপাড়ার বাইগার নদের পাড়ে বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক কবরস্থান ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এ কমপ্লেক্স। লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত এ সৌধের কারুকাজে ফুটে উঠেছে বেদনার চিহ্ন। কমপ্লেক্সের সামনে, দুই পাশের উদ্যান পেরোনোর পরই বঙ্গবন্ধুর কবর। পাশে তার বাবা ও মায়ের কবর। এই তিন কবর নিয়েই গড়ে উঠেছে গোলাকার গম্বুজবিশিষ্ট মূল সমাধিসৌধ। সমাধিসৌধের উপরের দেয়ালে জাফরি কাটা। সব সময় আলোছায়ার মায়াবী খেলা সেখানে। উপরে থাকা কারুকাজ করা কাচের ভেতর দিয়েও আলো ছড়িয়ে পড়ে সমাধিতে। চারদিকে কালো, মাঝখানে সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবর বাঁধানো। উপরের অংশ ফাঁকা।
বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ : গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গীপাড়া গ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাদপুরুষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধটি অবস্থিত। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চ সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই সমাধিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সমাধিসৌধের উদ্বোধন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাইগার নদের পাড়ে প্রায় ৩৯ একর জমির ওপর প্রতœতত্ত্ব বিভাগ বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ নির্মাণ করে।
গ্রিক স্থাপত্য শিল্পরীতির ছোঁয়ায় লাল সিরামিকের ইট এবং সাদা-কালো টাইলস যেন হয়ে উঠেছ বেদনার প্রতীক। কমপ্লেক্সের সামনের উদ্যান পেরিয়ে গেলেই বঙ্গবন্ধুর কবর চোখে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর কবরের পাশেই রয়েছে তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুনের কবর। আর এই তিন কবরকে ঘিরেই মূল টম্ব নির্মাণ করা হয়েছে।
সমাধিসৌধের উপরে সাদা পাথরের তৈরি গোলাকার একটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজের দেয়াল জাফরি কাটা, আর এই জাফরি কাটা অংশ দিয়েই সমাধিস্থলে সূর্যের আলো প্রবেশ করে কাচের কারুকাজের মধ্য দিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে মসজিদ, পাঠাগার, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, বকুলতলা চত্বর, উন্মুক্ত মঞ্চ, স্যুভেনির কর্নার, ফুলের বাগান এবং কৃত্রিম পাহাড়।
পাঠাগার ও জাদুঘর : এই কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি পাঠাগার ও জাদুঘর। পাঠাগারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বইসহ প্রায় ছয় হাজার বই রয়েছে। রয়েছে গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চ, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, বকুলতলা চত্বর ও স্যুভেনির কর্নার। প্রদর্শনী কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের নানা পর্যায়ের আলোচিত্র ছাড়াও রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা শিল্পকর্ম। এছাড়া মুক্তিসংগ্রামের নানা পর্যায়ের দেশ-বিদেশ থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্র। বঙ্গবন্ধুকে যে কফিনে করে ঢাকা থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটিও সংরক্ষণ করা হয়েছে সযতেœ। দর্শনার্থীরা এখানে এসে আবেগে আপ্লæত হন। শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধুকে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সমাধিসৌধ খোলা থাকে। পাঠাগার খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাশেই টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’। সেখানেও ঘুরে আসা যায়। সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স শুধু নয়, এর আশপাশের এলাকায় আরো অনেক কিছুই দেখার রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, ছেলেবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ, শেখ বাড়ি জামে মসজিদ (স্থাপিত হয়েছে ১৮৫৪ সালে) ইত্যাদি। আছে হিজলতলা ঘাট, যেখানে বঙ্গবন্ধু ছোটবেলায় গোসল করতেন। দেখা মিলবে শেখ পরিবারের ঐতিহ্যবাহী একটি বড় ও একটি ছোট আকারের পুকুরের।
টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা গ্রামের ভ্যানচালক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের এলাকা নিয়ে গর্ব করি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসেন এই সমাধিসৌধে। বঙ্গবন্ধুর জন্য আমাদের এ গৌরব। টুঙ্গিপাড়ার এই সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য নানা স্থাপনা ঘুরেফিরে আসার সময় কবিতার সেই পঙ্?ক্তিগুলো মনে হয় বারবার।
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়