বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স

আগের সংবাদ

তালেবান আতঙ্কে বিশৃঙ্খলা > আফগানদের দেশ ছাড়ার হিড়িক : উড়ন্ত বিমান থেকে খসে পড়ল তিনজন

পরের সংবাদ

বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতির পিতা স্মরণ : তদন্ত কমিশনে ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উন্মোচনের প্রত্যয়

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করেছে স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের খুঁজে বের করে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে এবারের শোক দিবসে। সেই সঙ্গে দাবি উঠেছে, তদন্ত কমিশন গঠন করে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের উন্মোচন ও শ্বেতপত্র প্রকাশের। গণদাবির সঙ্গে একাত্ম পোষণ করে সরকারপক্ষ বলছে, শিগগিরই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।
নানা কর্মসূচিতে গতকাল রবিবার জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে জাতি। দিনটির শুরুতে ভোর সাড়ে ৬টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটিতে ঢুকে সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন, যেখানে ৪৬ বছর আগে ইতিহাসের এক বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ সাধিত হয় এবং পরে বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে বনানী কবরস্থানে যান। যেখানে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের শহীদরা শায়িত রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের কবরে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দেন। সেখানে তিনি সুরা ফাতেহা পাঠ করেন এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা ও দোয়া করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবমহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ,

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সংগঠন। অন্যদিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
এছাড়া দিনব্যাপী কুরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, কালো ব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশের মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
তদন্ত কমিশন করে কুশীলবদের স্বরূপ উন্মোচন করা উচিত : আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে কুশীলবরা জড়িত ছিল তদন্ত কমিশন করে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা উচিত। এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা প্রতিরোধ করতে না পারায় তৎকালীন নেতৃত্বের ভূমিকা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রতিরোধ করতে না পারায় সে সময়ের নেতৃত্বের ভূমিকা খতিয়ে দেখে তা জাতির সামনে তুলে ধরা উচিত। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ইতিহাসের এই কুখ্যাত কুশীলবদের স্বরূপ উন্মোচন করা উচিত। সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারার যে ব্যর্থতা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী নেতৃত্বের, সেটাও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ আলাদাভাবে শ্রদ্ধা জানান।
পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বনানীর কবরস্থানে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মোনাজাত করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
মন্ত্রীরা যা বলছেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক পাঁচ খুনির মধ্যে এ এম রাশেদ চৌধুরী ও এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ছাড়া বাকি তিনজনের অবস্থানের ব্যাপারে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। এই তিন খুনির ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে পারলে পুরস্কার দেয়া হবে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আব্দুল মোমেন।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা ছিল তাদের খুঁজে বের করতে, তাদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন করা হবে। গতকাল জাতীয় শোক দিবসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বলেছেন- যারা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল, তাদের চিহ্নিত করে বাংলার মানুষের কাছে সাক্ষ্যপ্রমাণসহ মুখোশ উন্মোচন করার জন্য একটি কমিশন হওয়া প্রয়োজন। আরো আগেই হয়তো কমিশন গঠন হয়ে যেত। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এটা একটু দেরি হচ্ছে। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে এলে কমিশন গঠন করব।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক চার খুনিকে শিগগিরই দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রাজধানীর ধোলাইপাড়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্মরণসভা ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা জানান। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে দেশ কয়েক দশক পিছিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় মন্ত্রী বলেন, যে পিতা আমাদের শৃঙ্খলমুক্ত করল সেই পিতাকে আমরা হত্যা করলাম। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা অপরাধবোধের মধ্যে রয়েছি। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, আজকে আমরা যে পর্যায়ে এসেছি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তা অনেক আগেই অর্জন হতো। বঙ্গবন্ধু মানবিক ছিলেন, শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে তিনি সব সময় কাজ করে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হত্যা করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতো।
সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগ : সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিবসহ নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা জেলা যুবলীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আবু আহমেদ তৌফিক প্রবালের নেতৃত্বে দোয়া মাহফিল এবং কয়েক হাজার লোকের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় দোয়া মাহফিল। এছাড়া আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফারুক হাসান তুহিনের উদ্যোগে এলাহী কমিউনিটি সেন্টারে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
এছাড়া ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহর নির্দেশে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে কুরআনখানি এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ভোররাতে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ঘাতকের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল, বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি; বঙ্গবন্ধুর ভাগনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, আবদুল নাঈম খান রিন্টু, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়