বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স

আগের সংবাদ

তালেবান আতঙ্কে বিশৃঙ্খলা > আফগানদের দেশ ছাড়ার হিড়িক : উড়ন্ত বিমান থেকে খসে পড়ল তিনজন

পরের সংবাদ

তিলে তিলে হেরেছে মার্কিন সেনারা : আফগানিস্তান

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে রাতের অন্ধকারে- প্রায় চুপিসারে- যখন মার্কিন সেনাদের শেষ দলটি কাবুলের নিকটবর্তী বাগরাম বিমানঘাঁটি ত্যাগ করে- তার মাত্র ৬ সপ্তাহ পার হতে না হতেই আফগানিস্তানের দখল নিল তালেবানরা। মার্কিন রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৭৫ সালে যেভাবে ভিয়েতনামের সায়গন থেকে যেভাবে আমেরিকানদের হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, ২০২১ সালের কাবুলে ফের সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে কিনা, সেটাই অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে। অনেকে একে আমেরিকার ‘পরাজয়’ ও ‘পশ্চাদপসরণ’ বলেও অভিহিত করছেন। এমন একসময় মার্কিন বাহিনী বিদায় নিচ্ছে যখন তাদের অর্জনের খাতা শূন্য। আলকায়েদা উৎখাতের কথা বলে এ অভিযান শুরু হয়েছিল। তারা এখন নিষ্ক্রিয়, ওসামা বিন লাদেনও নিহত- কিন্তু প্রবলভাবে ফিরে এসেছে তাদের আশ্রয়দাতা তালেবানরা। খবর বিবিসি।
এখন তালেবানের হাতে কাবুলের পতনে মার্কিন রিপাবলিকান সেনেটর মিচ ম্যাককনেল বলছেন, বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে এক লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলছে। বাইডেনের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে ১৯৭৫ সালের সায়গনের অপমানজনক পতনের চাইতেও খারাপ অবস্থায় নিয়ে গেছে। অনেকে এও বলছেন, প্রত্যাহার নয়, বরং কাবুলকে রক্ষা করতে এখন আবার মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের আফগানিস্তানে পাঠানো উচিত। এখন আফগান সৈন্যদের সাহায্য না করলে আলকায়েদা ও তালেবান মিলে কাবুলে আমাদের দূতাবাস পুড়িয়ে দিয়ে এবার ১১ সেপ্টেম্বরের বার্ষিকী পালন করবে। বিশ বছরের এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারি হিসাবমতে ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। এতে নিহত হয়েছে তাদের ২,৩১২ জন সৈন্য, জখম হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। পাশাপাশি আফগান সৈন্য ও পুলিশ নিহত হয়েছে আনুমানিক ৬৪,০০০ এবং বেসামরিক আফগান নিহতের

সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজারের বেশি।
ঘটনাপ্রবাহ দেখে মার্কিন বিশ্লেষকরাও বলছেন, এ ‘পরাজয়’ আকস্মিক কিছু নয়; এটা ঘটেছে বহু বছর ধরেই- একটু একটু করে। সিএনএনের কাছে ফরিদ জাকারিয়া বলেন, গত ১০-১৫ বছর ধরেই তালেবানের ধীরে ধীরে শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছিল। বিপুল পরিমাণ বিদেশি সৈন্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও তালেবানরা আবার সংগঠিত হয়; নানা অঞ্চলে আবার তাদের প্রভাব বিস্তার করে। দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে তারা বিপজ্জনক করে তোলে। অব্যাহত থাকে তাদের চোরাগোপ্তা বা আত্মঘাতী আক্রমণ, ঘরে তৈরি বোমা বিস্ফোরণ ও সহিংসতা। কাবুলে তারা বহু হামলা চালায়। বিবিসির ২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা যায়, দেশের বেশ কয়েকটি জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবানরা। আফগানিস্তানে মাদক ব্যবসার জন্য পপি চাষ হয় এমন বহু এলাকা তালেবানরা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ থেকে তাদের প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার আয় হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক এবং আফগান রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আসিম ইউসুফজাই বিবিসিকে বলেন, আমেরিকানদের কৌশল ছিল আফগানিস্তানের প্রধান শহরগুলোকে কব্জায় রাখা। কিন্তু এটি করতে গিয়ে শহরের বাইরে গ্রামগঞ্জ তালেবানের নিয়ন্ত্রণেই রয়ে যায়। যদিও মার্কিন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব তা স্বীকার করতে চাননি। ২০১৯ সালে এক সাড়া জাগানো রিপোর্ট করেন ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ক্রেগ হুইটলক। তিনি জানান, মার্কিন কর্মকর্তারা মুখে যতই বলুন না কেন, তারা আফগানিস্তানের পরিস্থিতির অগ্রগতি ঘটাচ্ছেন, তা আসলে সঠিক নয়। হুইটলক ব্যাখ্যা করে দেখান, বহু অপ্রকাশিত দলিলপত্র ও সাক্ষাৎকার থেকে এটা বোঝা যায় যে, তিন প্রেসিডেন্ট, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনগুলো দুই দশক ধরে এ সত্যকে লুকিয়ে রাখে। যে যুদ্ধের প্রতি একসময় আমেরিকানদের বিপুল সমর্থন ছিল, সে যুদ্ধে তারা ধীরে ধীরে হেরে যাচ্ছিল। কিন্তু এটা স্বীকার না করে বরং সামরিক ও রাজনৈতিক নেতারা তাদের ভুলগুলো লুকানোর বিকল্পটিই বেছে নেন, এবং যুদ্ধটিকে এভাবে হাতছাড়া হয়ে যেতে দেন।
সবচেয়ে রক্তাক্ত বছর ছিল ২০১৪ সাল। বারাক ওবামা ঘোষণা দেন, আফগানিস্তানে কমব্যাট মিশন শেষ হচ্ছে। যদিও যুদ্ধের আদৌ সমাপ্তি হয়নি তখন। এর পরের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর গলায় বিদেশে মার্কিন বাহিনীর ব্যয়বহুল যুদ্ধের বিরুদ্ধে সরব হন। কিন্তু তিনিও বিমান হামলা বাড়িয়ে দেন, যার ফলে প্রাণহানি ৩৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। জো বাইডেন অবশ্য ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ঘোষণা করেন তিনি ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব মার্কিন সৈন্য দেশে ফিরিয়ে আনবেন। এখন অবশ্য তারা ব্যস্ত কীভাবে কাবুল থেকে আমেরিকানদের নিরাপদে বের করে আনা যায় তা নিয়ে। এর মধ্য দিয়ে দুই দশকের আফগান যুদ্ধের শেষ পর্ব সম্পন্ন হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়