বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স

আগের সংবাদ

তালেবান আতঙ্কে বিশৃঙ্খলা > আফগানদের দেশ ছাড়ার হিড়িক : উড়ন্ত বিমান থেকে খসে পড়ল তিনজন

পরের সংবাদ

কাবুলে কায়েম তালেবানরাজ : আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়া শুরু >> দেশ ছাড়লেন প্রেসিডেন্ট গনি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : শেষপর্যন্ত বিনা রক্তপাতে অনিবার্য পতন ঘটল কাবুলের। গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানীর চারদিক ঘিরে অবস্থান করছিল হাজার হাজার তালেবান যোদ্ধা। গতকাল সকালে তালেবান নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আফগান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেয়ার পরপরই যোদ্ধারা বানের জলের মতো ঢুকতে শুরু করে কাবুলে। সিএনএন জানায়, উৎকণ্ঠায় থম থম করছে কাবুল। রাজপথে একটানা সাইরেনের শব্দ। থেকে থেকে গুলির আওয়াজ। মাথার ওপর অনবরত চক্কর দিচ্ছে হেলিকপ্টার। ২০ বছর পর যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখছে কাবুল।
আগের রাতটা ছিল টানটান উত্তেজনার। কী হয়, কী না হয়! কিন্তু সকাল হতেই বিনাযুদ্ধে পতন ঘটল কাবুলের। তালেবান নেতাদের সঙ্গে ৪৫ মিনিটের বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিলেন আশরাফ গনি। আসন্ন তালেবান সরকারে এ পদে আসতে পারেন আরেক গনি, আফগানিস্তানের বর্তমান তালেবান প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বরদার। জানা গেছে, কাবুলে হামলা করা হবে না- এটাই ছিল আফগান সরকার ও তালেবান নেতৃত্বের মধ্যকার সমঝোতার প্রধান শর্ত। পাশাপাশি ক্ষমতা হস্তান্তর এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। তালেবান নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, বিদেশিরা চাইলে কাবুল ছাড়তে পারেন। তবে আগামী দিনে কাবুলে থাকতে হলে তালেবান প্রশাসনের কাছে সব নথিপত্র জমা দিতে হবে।
এর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা তালেবানের দখলে চলে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ নিরাপত্তার আশায় কাবুলে এসে আশ্রয় নিচ্ছিল গত কয়েক দিন ধরে। এখন তারা মরিয়া হয়ে ফের কাবুল ছাড়ার চেষ্টা করছেন। দেশটির ফারজানা কোচাই নামের এক নারী এমপি বলেন, আমি জানি তারা আসলে কোথাও যেতে পারবে না, কোথাও যাওয়ার জায়গা তো তাদের নেই। সব ফ্লাইট পূর্ণ। ফলে কাবুল ছাড়ার চেষ্টা যারা করছেন, তাদের আসলে শহরেই আটকে থাকতে হচ্ছে।
বিজিত শক্তির কারো কোনো ক্ষতি করা হবে না- তালেবানরা বারবার আশ্বাস দেয়ার পরও আশ্বাস যে কাজে দেয়নি, তা বোঝা যাচ্ছে গত এক সপ্তাহ ধরে কাবুলে বাড়তে থাকা উদ্বাস্তুদের ভিড় দেখে। রাজধানীতে আসা অসংখ্য আফগানকে গত রবিবারও ট্যাক্সি থেকে মালপত্র নামাতে দেখা গেছে। অসংখ্য পরিবারকে দেখা গেছে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে। অসংখ্য মানুষকে খোলা আকাশের নিচে, রাস্তার ধারে বা গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় তাঁবুতে গাদাগাদি করে ঘুমাতে দেখা যাচ্ছে। তাদের চোখেমুখে খেলা করছে অনিশ্চয়তার আতঙ্ক।
এদিকে তালেবান যোদ্ধারা কাবুলে ঢুকছে- এ খবর পাওয়া মাত্রই গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলে মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরা। রবিবার সকালেই দূতাবাসে নির্দেশ আসে, যত দ্রুত সম্ভব গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল নথি নষ্ট করে ফেলতে হবে। নির্দেশ আসার পর এক মুহূর্ত দেরি করেননি কর্মীরা। আগেই প্রস্তুত রাখা ছিল একটি চিনুক উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার। তাতে চাপিয়েই উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় দূতাবাসের বেশির ভাগ কর্মীকে। এর আগে দূতাবাস কর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে আফগানিস্তানে অতিরিক্ত এক হাজার সেনা প্রেরণের নতুন নির্দেশ জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তালেবানদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কারো ওপর হামলা হলে ত্বরিৎ ও কড়া জবাব দেয়া হবে। অন্যদিকে আফগানিস্তান নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে রাশিয়ার দাবি, গোটা বিষয়টাই সাজানো, পরিকল্পিত।
গত শনিবার রাতে উত্তরের মাজার-ই-শরিফ দখলের পর থেকেই কাবুলের পতনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। রবিবার সকালে জালালাবাদ দখল করে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। এরপর দলে দলে কাবুলে ঢুকতে শুরু করে তারা, যদিও দোহায় চলমান শান্তি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় নির্দেশে কাবুলে ঢোকার মুখে থমকে যেতে হয় তাদের। নেতারা বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে হিংসার বলি না হন, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে আফগান সরকার ও মার্কিন নেতৃত্বকে তারা জানিয়ে দেন, গায়ের জোরে কাবুল দখল করতে চান না তারা। চান শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর। এরপরই মার্কিন ও ন্যাটো সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আশরাফ গনি। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় তালেবান নেতাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গড়ে তোলা অস্ত্র লোকবলে বহুগুণ শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তুলনামূলক দুর্বল তালেবান যোদ্ধাদের কাছে হার মানতে বাধ্য হলো আফগান সরকার। প্রায় ৩ লাখের ওপর প্রশিক্ষিত সেনা রয়েছে আফগান বাহিনীতে। অন্যদিকে দেশটিতে এ মুহূর্তে সক্রিয় তালেবান যোদ্ধার সংখ্যা সাকুল্যে হবে ৭৫-৮০ হাজার। তথাপি মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ শুরু করার মাত্র দেড় মাসের মাথায় ফের নিজেদের রাজত্ব কায়েম করল তালেবানরা। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের ৩৪টি প্রদেশের ১৮টি তাদের হাতে ছিল। কিন্তু এরপর ঝড়ের গতিতে এগোতে শুরু করে তারা। একে একে হেরাট, আয়বাক, গজনি, কান্দাহার, তালিকান, কুন্দুজ দখল করে। কাবুলের প্রবেশপথ মাজার-ই-শরিফের দখল নেয় একদিনে। গত রবিবার সকালে দখলে নেয় দক্ষিণের জালালাবাদ। এদিন সকাল পর্যন্ত মোট ২৬টি প্রদেশ দখলে ছিল তালেবান যোদ্ধাদের।
দেশ ছেড়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট : এদিকে ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের’ প্রক্রিয়ার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির দেশ ছাড়ার খবর এসেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আশরাফ গনি এরই মধ্যে তাজিকিস্তানের উদ্দেশে কাবুল ত্যাগ করেছেন।
রয়টার্স লিখেছে, এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য তারা প্রেসিডেন্টের দপ্তরে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে বলা হয়েছে, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ আশরাফ গনির গতিবিধি সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়া তাদের পক্ষে ‘সম্ভব না’।
তালেবানের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, আশরাফ গনি এখন কোথায়, তারা সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। অন্যদিকে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও কাবুল ত্যাগ করেছেন বলে অন্তত দুটি সূত্র তাদের নিশ্চিত করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়