গণপরিবহন চালু, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শঙ্কা : লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি হটিয়ে খুলল সবই

পরের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** স্বাস্থ্যবিধি ও টিকায় সমাধান খুঁজছে সরকার ** পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে ফের লকডাউন **
সেবিকা দেবনাথ : চলমান লকডাউনের মধ্যে ঈদের আগে বিধিনিষেধ শিথিলে সমর্থন ছিল না স্বাস্থ্য বিভাগসহ জনস্বাস্থ্যবিদদের। আজ বুধবার থেকে সব কিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তটিও সরকারকে পুনরায় বিবেচনা করার পরামর্শ দেন তারা। কিন্তু তা আমলে নেয়া হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে লকডাউন তুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা এ হার নির্ধারণ করেছেন ১০ শতাংশ। বর্তমানে শনাক্তের হার ২৪-৩০ শতাংশের মধ্যে ওঠা-নামা করছে। দৈনিক মৃতের সংখ্যাও দুই শতাধিক। এমন পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ পুরোপুরি তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই আরো বাড়বে। এদিকে গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা আক্রান্তদের ৯৮ শতাংশই করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট খুব কম সময়ে অধিক সংখ্যক মানুষকে আক্রান্ত করে। ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলেই আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। ধাপে ধাপে তা আরো বাড়ানো হয়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবার ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের সুপারিশে ৫ আগস্ট থেকে তা আরো ৫ দিন বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমরা কিন্তু এখনো ঝুঁকির মধ্যেই আছি। সরকার বাস্তবতার কারণেই কঠোর বিধিনিষেধ অনেকটাই তুলে দিচ্ছে। কিন্তু পুরোটা তুলছে না। তাই এখন অবশ্যই প্রশাসনের জায়গা থেকে আরো দায়িত্বশীলভাবেই মানুষের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে জোর দিতে হবে। পরিবহন থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই নজরদারি রাখতে হবে জোরালোভাবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোর থাকতে হবে এবং সবাইকে টিকা দিতে হবে। টিকার

ক্ষেত্রে আরো শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় নজর দিতে হবে।
২ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়ী নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হলো স্বাস্থ্যসেবা দেয়া, যেটা আমরা হাসপাতালে দিচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব টিকা দেয়া, আমরা টিকা দেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছি এবং যতটুকু সম্ভব পালন করে যাব। যেখানে পালিত হচ্ছে না, সে বিষয়ে আপনারা (গণমাধ্যম) তাদের প্রশ্ন করুন।
মন্ত্রী আরো বলেন, আপনারা ফেরিতে দেখেন কীভাবে লোক আসে, দোকানপাটে কীভাবে লোক চলাফেরা করে, মাস্ক পরে না এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে না, যার ফলে সংক্রমণ বেড়ে চলছে। কিন্তু ওখানে তো আমাদের কেউ নেই। ডাক্তার-নার্সরা তো আর ফেরি কন্ট্রোল করে না, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি কন্ট্রোল করে না। সেটা কন্ট্রোল করার দায়িত্ব অন্য বিভাগের রয়েছে।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিকল্পনা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমাদের পরামর্শ দেই। কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় উপর মহলের নির্দেশে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পর আগামী ৭-১০ দিন পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। যদি বড় ধরনের অবনতি হয় তাহলে আবারো লকডাউনের মধ্যেই সমাধান খোঁজার প্রয়োজন হতে পারে। আর যদি পরিস্থিতি এমনই থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মানা অর্থাৎ মাস্ক ব্যবহার ও গণটিকা দিয়ে অবস্থার উন্নতির চিন্তা করছে সরকার।
তবে সরকার ঘোষিত লকডাউন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতপার্থক্য রয়েছে। তারা বলছেন, দেশে যে প্রক্রিয়ায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। আবার যখন ইচ্ছা হলে বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হচ্ছে। এমন অবৈজ্ঞানিক লকডাউন দেয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা। লকডাউন মানার ক্ষেত্রে সরকার রাস্তায় পুলিশ প্রশাসন নামিয়ে দেয় কিন্তু মাস্কের ব্যবহার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। অথচ মাস্ক পরা করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে খুবই জরুরি।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়া হলে এখন এভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হতো না। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, গত বছর দীর্ঘদিন লকডাউন ছিল দেশে। তবু করোনার সংক্রমণ কমানো যায়নি। মানুষ অনেক ক্ষতির শিকার হয়েছে কিন্তু লাভ হয়নি। পরিস্থিতি যেমন চলছে তাতে করোনার সংক্রমণ আবারো বাড়ার আশঙ্কা আছে। সময়মতো উদ্যোগ নেয়া হলে এত দিন এত কিছু বন্ধ রাখতে হতো না।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, জনস্বাস্থ্যবিদদের পরামর্শ সরকার কিছু মানে, আবার কিছু মানে না। তাই সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে না এবং করোনা থেকেও দ্রুত মুক্তি নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়