খুলনায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর : সম্প্রীতি পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

আগের সংবাদ

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা >> টিকার সুফল কিছুটা হলেও মিলবে : আশা বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি হটিয়ে খুলল সবই

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** সড়কপথে যানজটের ভোগান্তি ** শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলছে ট্রেন ** যাত্রীতে ঠাসা লঞ্চ **
কাগজ প্রতিবেদক : করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ শেষে গতকাল বুধবার অনেকটাই চিরচেনা রূপে ফিরেছে রাজধানী ঢাকা। গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকেছেন মানুষ। লঞ্চ, ফেরি, ট্রেনেও ছিল ঢাকামুখী মানুষের ভিড়। ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। দোকানপাট, অফিস-আদালত খুললেও লোকজনের উপস্থিতি তেমন ছিল না। দীর্ঘ ১৯ দিন পর কর্মব্যস্ত হওয়া অনেকের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। মাস্ক না পরেই চলাচল করতে দেখা গেছে অনেককে। এতে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল খুব ভোর থেকেই রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, মহাখালী, মালিবাগ, সায়েদাবাদ, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার বাসগুলোকে যাত্রী নামাতে দেখা যায়। উবার-পাঠাওসহ অন্যান্য রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ায় কাউন্টারের সামনে থেকে মোটরসাইকেল ও কারে যাত্রী তুলতে দেখা যায় চালকদের। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন রুটের বাসগুলো রাস্তায় নেমে আসে। বাড়তে থাকে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলও। সকাল ৯টার পর আসাদগেট, আদাবর, তেজগাঁও, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, পল্টন, মিরপুর, মহাখালী, বনানী ও গুলিস্তান এলাকায় বেশ যানজট দেখা যায়।
তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গতকাল রাজধানীতে বাস কম চলাচল করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটে বলাকা পরিবহনের বাস চালক ইসমাইল হোসেন জানান, সব আসনে যাত্রী নিয়ে অর্ধেক সংখ্যক বাস চলার কথা। সে জন্য অনেক মালিক সব বাস রাস্তায় নামান নি। তার চেয়ে বড় কথা, এখনো অনেক বাস চালক ও হেল্পার ঢাকায় ফেরেনি। তিনি জানান, প্রথম দিনে তেমন যাত্রী নেই। সকালে অফিসগামী যাত্রীর কিছুটা চাপ ছিল। কিন্তু পরে আর বেশি যাত্রী পাওয়া যায়নি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
এদিকে রাজধানীর ভেতরে যানজটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে

হয় মানুষকে। সকাল ১০টার দিকে গুলিস্তান থেকে কারওয়ান বাজার পৌঁছাতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে বলে জানান অনেক যাত্রী। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজের জন্য সিদ্দিকবাজার থেকে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং পর্যন্ত খুঁড়ে রাখায় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রামপুরা সড়কের বিভিন্ন স্থানেও বড় বড় গর্ত খুঁড়ে রাখতে দেখা যায়। সেখানেও যানবাহন চলাচল বিঘিœত হয়।
অন্যদিকে বাস কম থাকায় অনেক মানুষকে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। যাত্রী পূর্ণ হলেই বাসগুলো দরজা আটকে দেয়। ফলে বাসে গাদাগাদি করে ওঠার সুযোগ হয়নি যাত্রীদের। এতদিন ‘ভিআইপি’ সড়কগুলোতে রিকশা চললেও গতকাল সকাল থেকে সেসব সড়কে রিকশা আটকে জরিমানা করতে দেয়া যায় পুলিশকে।
সকালে দোকান আর বিপণিবিতানের কর্মীদের ধোয়া মোছায় বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। সচিবালয়সহ অন্য অফিস-আদালতেও গতকাল স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। খিলগাঁওয়ের ঢাকা বিরিয়ানি এন্ড রেস্টুরেন্টের এক কর্মী বলেন, এখন হোটেলে লোক বসিয়ে খাওয়াতে বাধা নেই। তাই তারা ফজর আজানের পর থেকেই রান্নাবান্নার কাজ শুরু করেছেন। কারণ এই হোটেলের নাস্তা অনেকেরই পছন্দ। মাস্ক ছাড়া বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও অনেক ক্রেতা মাস্ক না পড়েই ঢুকে পড়েন বলে জানান তিনি।
১৯ দিন বন্ধ থাকার পর লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে সদরঘাট থেকে। গতকাল ভোর ৬টায় সদরঘাট থেকে এমভি ইমাম হাসান নামে একটি লঞ্চ প্রথম চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপর এমভি সোনারতরী, গ্রিন লাইন সদরঘাট ত্যাগ করে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা লঞ্চগুলো যাত্রীতে ঠাসা ছিল। সদরঘাটে নামার পর দেখা যায়, যাত্রীদের অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। লঞ্চ থেকে নেমেই যে যার মতো ছুটছেন।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে বড় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় লঞ্চে যাত্রীর চাপ বাড়ে গতকাল। এ রুটে চলাচলকারী ৮৭টি লঞ্চই বাংলাবাজারঘাট থেকে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া আসে। তবে ফেরার পথে অনেকটাই যাত্রীশূন্য দেখা যায় লঞ্চগুলোকে।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের টিআই জাকির হোসেন জানান, প্রায় ৩ ঘণ্টা পর পর ছোট পাঁচটি ফেরি একের পর এক ঘাটে এসে ভিড়ছে। ঘাটে কোনো যাত্রীর চাপ নেই। ফেরিগুলো দিয়ে শুধু ছোট ছোট যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। শতাধিক পণ্যবাহী বড় ট্রাক ঘাটে থাকলেও পারাপার করা হচ্ছে না। ফেরিঘাটে কোনো যাত্রীর চাপ না থাকলেও লঞ্চঘাটে রয়েছে।
শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলছে ট্রেন : ২৩ জুলাই থেকে বন্ধ থাকার পরে গতকাল আবারো ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার স্টেশন চত্তর, ট্রেন ও ট্রেনের সিট জীবাণুমুক্ত করা হয়। গতকাল সারাদেশে ৫৮ জোড়া ট্রেন শতভাগ যাত্রী নিয়ে যাত্রা করে। তবে আন্তনগর ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও লোকাল ও কমিউটার ট্রেনগুলোতে ছিল না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়েই ছুটেছে অধিকাংশ কমিউটার ও লোকাল ট্রেন। বিশেষ করে বলাকা, তিতাস ও জামালপুর কমিউটারসহ বেশ কয়েকটি ট্রেনে গাদাগাদি করে যাত্রীদের চড়তে দেখা যায়। আবার পাশাপাশি সিটে দুজন বসে দীর্ঘ যাত্রায় করোনাকালে ভীত ও শঙ্কিত বলে জানান বেশ কয়েকজন যাত্রী।
সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। স্টেশনে ৫০ শতাংশ টিকেট ১০টি কাউন্টারে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। কেউ অগ্রিম টিকেট ও কেউ চলতি টিকেটের জন্য লাইনে অপেক্ষমাণ। সারাদেশে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ রুটের যাত্রীরা।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, গতকাল বুধবার থেকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শতভাগ যাত্রী নিয়ে সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে ২৫ জোড়া আন্তঃনগর ও ১২ জোড়া মেইল-কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। আর সারাদেশ থেকে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ও ২০ জোড়া মেইল-কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। তিনি বলেন, আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন পরিচালনা করছি। টিকেট ও মাক্স ছাড়া কাউকে স্টেশন চত্বরে প্রবেশ ও ট্রেনে উঠতে দেয়া হচ্ছে না। স্টেশন ধোয়া-মোছার কাজ প্রতিনিয়ত চলছে। সে সঙ্গে প্রতিটি ট্রেনে জীবাণুনাশক দিয়ে ভেতর ও বাইরে পরিষ্কার করা হয়েছে।
আকাশপথে যাত্রীর চাপ নেই : লকডাউন উঠে যাওয়ার প্রথমদিন আকাশপথে যাত্রীদের তেমন চাপ ছিল না বলে জানিয়েছে দেশের দুই বেসরকারি এয়ারলাইন্স। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট চালুর পর থেকে যাত্রীরা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। তবে আজকে যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই। আগের মতোই তারা চলাচল করছে। নভোএয়ারের মার্কেটিং এন্ড সেলস বিভাগের ব্যবস্থাপক মাহফুজুল আলম জানান, অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের বাড়তি চাপ নেই। দুই তিন দিন পর হয়তো চাপ বাড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়