গণপরিবহন চালু, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শঙ্কা : লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি হটিয়ে খুলল সবই

পরের সংবাদ

বিলীনের পথে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের এক বিদ্যালয় : ভাঙন আতঙ্কে রাত কাটান ৩ গ্রামের ৫শ পরিবার

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১:০৭ পূর্বাহ্ণ

হোসাইন আহমদ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকে : পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির প্রভাবে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি। এতে নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙন। ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের একটি অংশ। আশপাশের ৩ গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার নদীভাঙনের কবলে আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে।
সুরমা নদী ভাঙনকবলিত অনেক মানুষ কোনো প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের সর্দারপুর-ধনপুর ও আমরিয়া গ্রামের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় সুরমা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ভাঙনের কবলে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ১৪নং ধনপুর সর্দারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ও নতুন ভবন। বিদ্যালয়টি ১৯৩৫ সালে নির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড পাকা ভবনের অর্ধেক ও বিদ্যালয়ের মাঠের একটি অংশ সুরমা নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের দুই পাশে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আশপাশের বসতবাড়িতেও ভাঙন শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বসতবাড়ির বাসিন্দা জয়নাল মিয়া, জসিম উদ্দিন, সাদু আলী, মহর উদ্দিন, জুনা বেগম ও দিলা হোসেনদের বসতবাড়ির অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদীভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
তারা জানান, নদীভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে শিগগিরই এসব গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৩ গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের সহ¯্রাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে।
ধনপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরমা নদীর ভাঙনের কবলে পড়া জয়নাল মিয়া জানান, কেউ আমাদের খোঁজখবর নেননি। আমাদের বসতবাড়ি রক্ষায় কোনো সরকারি উদ্যোগ নেই।
পাশের বিদ্যালয়টিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। সরকার ইচ্ছা করলে সবই পারে। নদীতে এখন প্রবল ¯্রােত, যে কোনো সময় আমার বসতবাড়ির সামনেও ভেঙে যাবে। এখন আর রাতে ঘুম আসে না। কবে সরকার আমাদের দিকে মুখ ফেরাবে।
ধনপুর গ্রামের গৃহবধূ জুনা বেগম জানান, স্বামীর বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেলে কোথায় গিয়ে থাকব। ভেবে কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছি না। সরকার যদি নদীভাঙন আটকায়, তাহলে আমাদের জানমাল বেঁচে যায়। বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেলে আমরা কীভাবে বাঁচব। আমাগো কান্নায় কারো কিছু আসে যায় না।
শিমুলবাক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জিতু জানান, ধনপুর-সর্দারপুর ও আমরিয়ার একটি অংশ সুরমা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। ধনপুর-সর্দারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে স্থানান্তরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নদীভাঙন-কবলিত পরিবারের ভিটেমাটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগযোগ করেছি এবং নদীভাঙনের বিষয়টি অবগত করেছি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার-উজ জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। শিগগিরই নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুদ্দোহা জানান, বিষয়টি আমার এ মুহূর্তে জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। সরেজমিন শিমুলবাক ইউনিয়নের ধনপুর-আমরিয়া-সর্দারপুর গ্রামের সুরমা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়