মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : বৃহত্তর নোয়াখালীসহ (নোয়াখালী, ফেনী ও ল²ীপুর) কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের ৫০ লাখের অধিক মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন জননেতা নুরুল হক মিয়া আধুনিক হাসপাতাল। ২০১৮ সালে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে পাস হলেও অদ্যাবধি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর জননেতা নুরুল হক মিয়া ৫০০ শয্যার হাসপাতালটির উন্নয়ন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জোরালো হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জটিলতা দেখা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপেই হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে।
উপকারভোগী বাসিন্দারা বলেন, বৃহত্তর নোয়াখালীসহ কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের অর্ধ কোটি মানুষের আধুনিক চিকিৎসার জন্য স্বপ্নের হাসপাতাল হচ্ছে জননেতা নুরুল হক মিয়া আধুনিক হাসপাতাল। নোয়াখালী, ফেনী, ল²ীপুর, চাঁদপুর ও লাকসাম অঞ্চলে কোনো আধুনিক হাসপাতাল নেই। করোনা মহামারিতে অধিক বেড সম্পন্ন আধুনিক হাসপাতালের অভাবে এ অঞ্চলে অকালে বহু প্রাণ ঝরে পড়ছে। তাই দ্রুত সময়ে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ শয্যা সংবলিত আধুনিক এই হাসপাতাল বাস্তবায়ন করলে মানুষের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।
আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌরাস্তায় ২০ একর ভূমির ওপর মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ। প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ২০১৮ সালে কলেজের ভেতরে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর জননেতা নুরুল হক মিয়া আধুনিক হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
হাসপাতালটি দ্রুত নির্মাণের জন্য একনেকে প্রকল্পও পাস হয়েছে। একনেকে হাসপাতাল নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের শেষের দিকে প্রকল্পের কাজ শুরুর নির্দেশনাও দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু অদ্যাবধি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অর্থায়নে শুধু নোয়াখালী জেলায় নয়, নোয়াখালীসহ যশোর, পাবনা ও কক্সবাজার জেলায় ৫০০ বেডের হাসপাতাল এন্ড অ্যানসিলারি বিল্ডিং নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং এতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে লেটার অব ক্রেডিড (এনাওসি) ফান্ড থেকে ১ হাজার ৪৪০ কোটি এবং জিওবি ফান্ড ছিল ৬৬৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরার কথা ছিল।
পরবর্তীতে দুদেশের সরকার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াল ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবং প্রকল্প ব্যয় বাড়াল ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে জিওবি ২ হাজার কোটি টাকা এবং এনাওসি ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি একনেকে প্রথম পাস হয় ২০১৮ সালের ২২ মে।
২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর (আর-ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখায় জমা দিয়েছে ৪টি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে ৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য একজন পিডি নিয়োগ দেয়া হলেও পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ৪ জন পিডি নিয়োগের সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, এলওসির সুদের হার কম হলেও বড় অসুবিধা হচ্ছে অর্থ ছাড়ে ৪ স্তরে ভারতীয় সরকারের অনুমোদন লাগে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগছে। এছাড়া ভারত সরকারের প্রতিশ্রæতি মোতাবেক অর্থ ছাড়ের পরিমাণ অত্যন্ত কম। এনওসির আরেকটি বড় অসুবিধার শর্ত হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দ্রব্যাদি যেমন- ইট, বালু, পাথর, সিমেন্ট, রড ইত্যাদি ভারত থেকে আনতে হবে। এই সব শর্তের বেড়াজালের কারণে ৪টি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দ্রুত সময়ে নির্মাণের সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নোয়াখালীর সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, এক সঙ্গে ৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণকাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য ভাতার অর্থ জিওবির অর্থ ছাড়ে সমস্যা না থাকলেও এলওসির অর্থ ছাড়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর দ্রুত উন্নয়ন আলোর মুখ দেখতে সময় লাগবে অনেক।
নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আবদুছ সালাম বলেন, মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ বেডের হাসপাতালগুলো নির্মাণের দায়িত্বভার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে সরকার। কিন্তু জনস্বার্থে তা দ্রুত নির্মাণের জন্য এলওসির প্রতিশ্রæতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প অন্য যে কোনো মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অধীনে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন প্রধান নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ।
নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ বলেন, জননেতা নুরুল হক মিয়া ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক। অর্থ ছাড়ের জটিলতায় হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু করতে কিছুটা সময় লাগছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। অচিরেই হাসপাতালটি নির্মাণ কাজের জটিলতা নিরসন হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।