নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় বিশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ

** সাধারণ মানুষের কাছে তথ্যের ঘাটতি ছিল ** অব্যবস্থাপনায় জনভোগান্তি ** স্বাস্থ্যবিধি মানেনি কেউ **
সেবিকা দেবনাথ : করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকাতে দেশের ১৪ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা সরকারের। এ লক্ষ্যে সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেয়া হচ্ছে। শুরুতে টিকা সংকট থাকলেও এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সংকট কাটিয়ে নতুন করে টিকা আসতে থাকায় বড় পরিসরে টিকা ক্যাম্পেইন করে বিরাট জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে শুরু হয়েছে ছয় দিনের গণটিকাদান কর্মসূচি। এ কর্মসূচির প্রথম দিন গত শনিবার থেকেই টিকাকেন্দ্রগুলোয় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি জানান দিয়েছে মানুষের উৎসাহ কতটা। তবে ব্যবস্থাপনা ত্রæটির কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও।
কর্মসূচির তৃতীয় দিন গতকাল সোমবার মানুষের চাপ বাড়ায় সবাইকে টিকা দেয়া যায়নি। টিকাকেন্দ্রে আসা মানুষের তুলনায় টিকার বরাদ্দ কম থাকায় অনেককে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আবার অনেকে সরকারদলীয় নেতাকর্মী, মেম্বার চেয়ারম্যানের সুপারিশে টিকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। ভোলাসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় টিকা নিয়ে হাতাহাতি ও উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে। ভোলায় স্বেচ্ছাসেবীরা হামলার শিকার হয়েছেন। কিছু কেন্দ্রে টিকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে টিকাদান কার্যক্রম। রাজশাহী নগরীতে দুদিনেই শেষ হয়ে গেছে টিকা। ফলে ওয়ার্ড পর্যায়ে গণটিকা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) কর্তৃপক্ষ। তবে সরকার নির্ধারিত শুধু চারটি কেন্দ্রে গতকাল সকাল ৯টা থেকে টিকাদান করা হয়েছে। এটি চলমান থাকবে।
টিকাকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, প্রতিদিনের জন্য ৩০০ টিকা বরাদ্দ। এর বাইরে তারা দিতে পারেন না। কিন্তু বরাদ্দের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।
ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের টিকাকেন্দ্রে দৈনিক ৩৫০ ডোজ টিকা বরাদ্দ রয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের চাপ। সেই অনুপাতে টিকা বরাদ্দ নেই। ফলে অনেককে টিকা দেয়া সম্ভব

হচ্ছে না।
এছাড়া যে কর্মসূচিতে টিকা দেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল, সেটিও মানা হচ্ছে না। কর্মসূচি শুরুর আগের দিন অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, ৭ আগস্ট দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায়, ৮ ও ৯ আগস্ট ইউনিয়ন ও পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে এবং ৭ থেকে ৯ আগস্ট সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি চলবে। দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৮ ও ৯ আগস্ট এবং ১০ থেকে ১২ আগস্ট রেহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫৫ বছর বয়সিদের টিকা দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। প্রথম দিন যেসব কেন্দ্রে টিকা দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় দিনেও সেসব কেন্দ্রে টিকা দেয়া হয়েছে।
৬ আগস্ট গণটিকা কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা কার্যক্রমকে একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক দিনে কি পরিমাণে টিকা দিতে আমরা সক্ষম, সেটি দেখতে চাই। ওইদিন তিনি জানান, এই কর্মসূচিতে তিন শ্রেণীর জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তারা হলেন, ২৫ বছর বা তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণটিকায় ব্যাপক সাড়া মিললেও অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা পাচ্ছেন না। মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য টিকা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখানে যেভাবে মানুষ ভিড় করছে, তাতে সংক্রমণ বাড়ার একটা ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারা আগে টিকা পাবেন, এ তথ্যটি সরকার সংবাদ সম্মেলনে বললেও তা গ্রামপর্যায়ে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই অনেকে টিকাকেন্দ্রে গিয়ে ভিড় করছেন। টিকা পাচ্ছেন না। মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।
বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য গবেষক ড. মো. সরোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, টিকাকেন্দ্রগুলোয় মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি না মানার যে দৃশ্য আমরা দেখেছি, তা নিয়ে আবার নতুন ভাবনা তৈরি হয়েছে। কেননা বয়স্ক এবং অন্যান্য অসুখে যারা আক্রান্ত, তারা কেন্দ্রে যাচ্ছেন টিকা নিতে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মানায় তাদের ঝুঁকি বাড়ছে।
টিকাকেন্দ্রে ভিড় প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম রবিবার অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেন, এসএমএস না পেয়ে অনেকেই টিকাদান কেন্দ্রে ভিড় করছেন। অনেক কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। ফলে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তিনি এসএমএস না পেলে টিকাদান কেন্দ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেন।
গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, গ্রামে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা আগে কম ছিল, বয়স্করা কম পেয়েছিল। সেজন্য টিকা গ্রামে নেয়া হয়েছে। টিকা নিতে কিছু অনীহাও ছিল। সেই অনীহা কেটে গেছে। টিকার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে যে টিকা দেয়া হচ্ছে, তা চলমান আছে এবং চলমান থাকবে। এ কার্যক্রম মাঝে মাঝেই ঘোষণা দেব, টিকা হাতে এলে যে পরিমাণ লাগে ক্যাম্পেইন করতে, সেটা পেলেই এভাবে টিকা দেব।
মন্ত্রী আরো বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে ৬০০ করে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। আমরা দেখলাম যে তার থেকে অনেক বেশি লোক এসেছেন। যেসব কেন্দ্রে বেশি টিকা ছিল, তারা বেশি দিয়েও দিয়েছে। ঝড়বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় পরের দিন টিকা দেয়া হয়েছে, দুর্গম এলাকায় পরে দেয়া হয়েছে। সব জায়গায় সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে মডার্না, সিনোফার্ম, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজার বায়োএনটেকের সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ। ১৫ আগস্টের মধ্যে আরো ৫৪ লাখ টিকা দেশে আসবে বলে গতকাল জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ৫৪ লাখের মধ্যে ৩৪ লাখ ডোজ বাংলাদেশ পাবে টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে। চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের টিকার আরো ১০ লাখ ডোজ পৌঁছাবে। আরো ১০ লাখ ডোজ চীন উপহার হিসেবে দেবে। মোট ৫৪ লাখ টিকা আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে আমরা পেয়ে যাব। এতে সুবিধা হবে টিকার কার্যক্রম যে বেগে চলছে, তা বজায় রাখতে পারব। চীন এ মাসে আরো ৫০ লাখ টিকা দেবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সরকারের টিকাদান টাস্কফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা। বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে, তাতে এ বছর ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে বলে টাস্কফোর্সের অনুমান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়