শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি : চলতি সপ্তাহেই শতভাগ শিক্ষক টিকার আওতায়

আগের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় বিশৃঙ্খলা

পরের সংবাদ

সংক্রমণ-মৃত্যুর ভয়াবহতার মধ্যেই খুলে দেয়া হচ্ছে সব

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** গণপরিবহন চলবে ** স্বাস্থ্যবিধি ও টিকায় জোর দিল সরকার **
কাগজ প্রতিবেদক : দেশে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর মধ্যেই আগামী বুধবার থেকে শর্তসাপেক্ষে অফিস ও গণপরিবহনসহ সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দীর্ঘদিন ধরে ‘কঠোর’ বিধিনিষেধের পর এ বিষয়ে গতকাল রবিবার আদেশও জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে আগস্ট ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এছাড়াও ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ থাকবে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত।
এতে বলা হয়, গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণে এ বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ চলছে। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। যা প্রথমে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছিল। পরে তা ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ এবং মৃত্যুর মধ্যেই সবকিছু খুলে দেয়ার এই সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। যদিও সরকার মনে করছে, ব্যাপকহারে টিকাকরণের মাধ্যমেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে এবং এ কারণে সবকিছু খুলে দিলে পরিস্থিতির ততো অবনতি হবে না; তবু অনেকেই মনে করছেন সরকারের এই তাড়াহুড়ো ঠিক হয়নি। অন্তত আরো দুই সপ্তাহ কঠোর বিধিনিষেধের পর সবকিছু খুলে দিলে পরিস্থিতি অনায়াসেই আয়ত্বে আনা যেত। এখন সবকিছু খুলে দেয়ার পর যদি সংক্রমণ আরো বাড়ে, সেক্ষেত্রে আবার বিধিনিষেধে যেতে হবে। এই চালু এই বন্ধ- এমন নীতিতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। উল্লেখ্য, গতকালও দেশে করোনার সংক্রমণের হার ছিল সাড়ে ২৪ শতাংশের ওপরে এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ২৪১।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, লকডাউন দিয়ে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সাময়িক। একটা সময় সবকিছু খুলে দিতেই হবে। এ কারণে মনে হয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। তিনি আরো বলেন, এখন তো গণটিকাদান চলছে। কাজেই একদিকে টিকা অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করলে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
যেভাবে যা চলবে : সরকারের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী বুধবার থেকে খোলা থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে আসনসংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন বা যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সড়ক পথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহনসংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে। এছাড়া শপিংমল, মার্কেট ও দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। সব শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে। আর খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা যাবে। আদালতের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। গণপরিবহন, বিভিন্ন দপ্তর, মার্কেট ও বাজারসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে আজ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে ও নি¤œআয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে অফিস-আদালত কতটা জনবল দিয়ে খুলবে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যত কম করা যায়, সে রকমই থাকবে। সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পদশালীদের পক্ষে যাচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্ট কারখানা বাস্তবতার নিরিখেই খুলে দিতে হয়েছে। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করে। স্থানীয়ভাবে যারা উপস্থিত আছেন, তাদের নিয়ে কারখানা খোলার শর্তেই অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সব শ্রমিক চলে এসেছে। কাজের প্রয়োজনে যারা বাড়ির বাইরে আসছে, তাদের টিকায় অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু দোকানপাট খুলতে হবে- সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানে সেদিকে আমাদের জোর থাকবে। গতকাল থেকে গণটিকা চালু করেছি, এটি ১২ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে। আমরা চাইব সবাই যেন মাস্ক পরে। টিকা কার্যক্রমের মধ্যে যারা দোকানদার, যাদের বাইরে যেতে হয়, ইমাম-মুয়াজ্জিন, ড্রাইভার-হেল্পারদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। যারা মাস্ক পরবে না, তাদের জরিমানা করার ক্ষমতা পুলিশকে দেয়ার পরিকল্পনার অগ্রগতি জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, এ বিষয়ে গত সভায় আলোচনা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আগামীতে নির্দেশনা পাব, তার আলোকে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে, পাড়া-মহল্লা ও ওয়ার্ডে করোনা সচেতন কমিটি করব। মানুষকে বোঝানো, যেন মাস্ক পরেন, কারণ ছাড়া বাইরে না যান এবং জনসমাগম ঘটে এমন জায়গা এড়িয়ে চলেন। অধ্যাদেশ সংশোধন কী পর্যায়ে আছে এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না।
এরআগে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, বিধিনিষেধের মেয়াদ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে খুলবে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, শপিংমল। সীমিত পরিসরে চলবে গণপরিবহন। এদিকে, সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনেই রেকর্ড ২৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০ জন টিকা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রেকর্ড ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৭২ জনকে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৭৯৮ জন।
শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে : বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় আগামী বুধবার থেকে ট্রেন চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে রেলওয়ে। এবার আর অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে নয়, আসন পূর্ণ করেই সব ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে অর্ধেক টিকেট বিক্রি হবে অনলাইনে এবং বাকি অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে পাওয়া যাবে। আসন ফাঁকা না রাখলেও যাত্রীদের মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেবে রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্র বলছে, বুধবার থেকে আন্তঃনগর ও মেইল মিলিয়ে ৫৭ জোড়া ট্রেন চালানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আন্তঃনগর ৩৮ জোড়া এবং মেইল ও কমিউটার ট্রেন ১৯ জোড়া।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৫ থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। সে সময় ৫৭ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। তবে তখন অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে সব টিকেট অনলাইনে বিক্রি করা হয়েছে। কাউন্টারে কোনো টিকেট বিক্রি করা হয়নি। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এত দিন ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গণপরিবহনে এক আসন ফাঁকা রেখেই যাত্রী নেয়া হয়। এবার আর সেই বিধিনিষেধ থাকছে না। গতকাল বিকালে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে গণপরিবহনে আসনের সমান যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার এ বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ দিয়ে আসছে। এর পাশাপাশি এবার স্থানীয় প্রশাসনও বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করেছিল। কিন্তু তারপরও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহ সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ঈদের সময় আট দিনের বিরতি দিয়ে আবার কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়, যা ১০ আগস্ট শেষ হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ আরো একদিন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আগের সব নিয়ম বলবৎ থাকবে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের সময়সীমা আরো একদিন বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করেছে সরকার। এর আগে সবশেষ দফায় এই সময়সীমা ৮ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (দক্ষিণ-পূর্ব) এশিয়াবিষয়ক সচিব মাশফি বিনতে শামস বিষয়টি জানিয়ে বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ মঙ্গলবার) পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মাশফি বলেন, আমাদের কঠোর বিধিনিষেধ তো মঙ্গলবার পর্যন্ত। এ সময় পর্যন্ত স্থল সীমান্ত বন্ধেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আগের সব নিয়ম বলবৎ থাকবে। করোনার কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ। তবে পণ্য পরিবহনসহ জরুরি যাতায়াত চালু আছে। বর্তমানে ভারতে আটকেপড়াদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় দেশটি থেকে সপ্তাহে তিন দিন অর্থাৎ রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার বাংলাদেশিরা যথাযথ কাগজপত্র নিয়ে ৫টি বন্দর দিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন। এক্ষেত্রে সবাইকে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন করতে হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়