শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি : চলতি সপ্তাহেই শতভাগ শিক্ষক টিকার আওতায়

আগের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় বিশৃঙ্খলা

পরের সংবাদ

তালিকায় হাইপ্রোফাইলদের নাম

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** জিজ্ঞাসাবাদে ১৪ ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা জানিয়েছেন পরীমনি, পিয়াসা, মৌ ও রাজ **
কাগজ প্রতিবেদক : পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির হেফাজতে রিমান্ডে থাকা কথিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ, চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার ওরফে পরীমনি, মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ জিজ্ঞাসাবাদে তাদের জলসার অতিথিদের নাম জানিয়েছেন। সমাজের প্রতিষ্ঠিত এসব ব্যক্তিদের নাম শুনে তদন্তসংশ্লিষ্টদের চোখ চড়কগাছ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে রয়েছে ব্ল্যাকমেইলের হাতিয়ার বেশকিছু ভিডিও এবং অডিও কল রেকর্ড। গোপনে ধারণকৃত এসব রেকর্ডের কারণে অনেকেই ছিলেন তাদের কবজায়। ওই সব রেকর্ডের কারণে এদের জিম্মি করে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা ও নামিদামি উপহার। রয়েছে এসএমএসও। পরীমনি, পিয়াসা ও মৌ চক্রে জড়িয়ে যাওয়া ১৪ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই করছে সিআইডি।
জানা গেছে, সিআইডির উত্তর জোনের বিশেষ সুপার খালেদুল হক হাওলাদার এবং দক্ষিণ জোনের বিশেষ সুপার শামসুন্নাহারের নেতৃত্বে দুটি টিম পৃথকভাবে এদের মামলার তদন্ত করছে। পরে সমন্বয় করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তদন্তে সহায়ক অনেক তথ্য মিলেছে। অভিযানে র‌্যাবের কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণও নিয়েছে তারা। র‌্যাব ও ডিবির যারা এসব ঘটনায় তদন্তসংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের সঙ্গেও কথা বলবেন সিআইডি কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে, পরীমনি, পিয়াসা ও মৌয়ের কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণ থেকে দুটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি, একটি জুয়েলারি দোকানের মালিক (নামের আদ্যক্ষর ‘দ’), ভারতীয় এক ব্যবসায়ী, ঢাকার একটি অভিজাত সোশ্যাল ক্লাবের প্রেসিডেন্ট (নামের আদ্যক্ষর ‘র’), একটি স্বনামধন্য ফার্নিচার কোম্পানির মালিকপুত্র (তার নামের আদ্যক্ষর ‘র’) ও একটি মিডিয়া হাউস মালিক এবং একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যানের আপত্তিকর অবস্থার প্রমাণ রয়েছে। একাধিক ফোনকল রেকর্ডে রয়েছে অপকর্মের ইঙ্গিত। নজরুল রাজের কাছে রয়েছে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা নায়িকা, অভিনেত্রী এবং মডেল ছাড়াও ধনাঢ্যদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও। তার বাসা ও অফিসে রাতের পার্টি ও জলসার পাশাপাশি অনেকে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত কাটাতেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানতে পেরে তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন।
এদিকে গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে

আলাপকালে অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, শনিবার একসঙ্গে ৬ জন মূল আসামির বাসায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে কিছু আলামত ও ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। ল্যাপটপ-ডেস্কটপ, পাসপোর্ট, মোবাইল, হার্ডডিস্ক ও ফেরারি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে এই তল্লাশি অভিযান উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরীমনি, পিয়াসা, মৌ, রাজসহ প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তাদের জব্দ করা আলামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের এই পর্যায়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে এই মুহূর্তে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের প্রতারণা, অনৈতিক কার্যক্রম ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নানা পেশার অনেক নাম আমরা জেনেছি। এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাদের নাম এসেছে- তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, সিআইডি যে মামলাগুলো তদন্ত করছে তা প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মাদকসংক্রান্ত। অন্য বিষয়ে তথ্য বা অভিযোগ এলে বা থেকে থাকলেও আমরা আমলে নেব। সিআইডির হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে থাকা ছয় আসামির বিরুদ্ধেই মাদক রাখা ও পার্টির নামে জিম্মি ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ভিকটিম পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, সিআইডির কাছে এখন পর্যন্ত কোনো ভিকটিম অভিযোগ করেননি। তবে আমরা বেশ কিছু ভিকটিমের নাম জেনেছি। আমরা পরীমনি ও পিয়াসাদের দ্বারা ব্ল্যাকমেইলের সত্যতা পেয়েছি। পরীমনি-পিয়াসাদের জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কোনো নিরপরাধ লোক যাতে ক্ষতি বা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার না হন সেটিও আমরা বিবেচনায় রেখেছি। পুরোপুরি সত্যতা ছাড়া আমরা কারো নাম প্রকাশ করছি না। আরেক প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক বলেন, সত্যিকারের ভিকটিমদের আমরা খুঁজছি। তাদের বক্তব্য আমরা শুনব। আমরা পুরোপুরি সত্যতার ভিত্তিতে জড়িতদের আটক করব, জিজ্ঞাসাবাদ করব।
পরীমনির বাসায় তল্লাশি অভিযানে কী জব্দ করা হয়েছে জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, অনেক কিছুই জব্দ করেছি। তা ফরেনসিক করা হচ্ছে। পরীমনিসহ ৬ আসামির ব্ল্যাকমেইল ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কাউকে ছাড় দেবে না সিআইডি। তদন্তের স্বার্থে পরীমনিসহ সিআইডি হেফাজতে থাকা প্রত্যেক আসামিকে প্রয়োজনে ফের রিমান্ড আবেদন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আজ পরীমনির চার দিনের রিমান্ড শেষ হবে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রেমস বাওয়ানীর সঙ্গে পিয়াসার একটি ক্লাবে সময় কাটানোর ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। গুলশানে একটি দামি ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রির শোরুমের মালিক ইবনুল হাসান খোকনের সঙ্গে পরীমনি ও পিয়াসার বহুবার কথোপকথন হয়েছে মোবাইল ফোনে। মদ বিক্রির দোকানের মালিক রানা শফিউল্লাহর সঙ্গে পিয়াসার লং ড্রাইভে যাওয়ার কথোপকথন রয়েছে। বাংলাদেশে গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ ডনের সঙ্গে পিয়াসার হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কয়েকবার কথোপকথন হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হাবিবুুল্লাহ ডনের মালিকানাধীন গুলশানের গাড়ির শোরুম অটো মিউজিয়াম থেকে পিয়াসার সহযোগী মিশুর চুরি করা একটি গাড়ি উদ্ধার করেছে র‌্যাব। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে পরীমনির অডিও রেকর্ডে একটি গাড়ি উপহার দেয়ার কথা শোনা গেছে। একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরীমনির গভীর সখ্যের বিষয়টি কথোপকথনে উঠে এসেছে। ব্যাংক কর্নধারদের নামের আদ্যক্ষর ‘ম’ এবং ‘ত’। বাংলাদেশে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরীমনির মোবাইল ফোনে কথা হতো।
অন্যদিকে পিয়াসা ঘনিষ্ঠ শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও তার সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের কাছেও মিলছে এই জগতের অনেকের নাম। এছাড়া সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বহিষ্কৃৃত হেলেনা জাহাঙ্গীর তার অপকর্মের সহযোগীদের নাম বলেছেন। সেখানেও উঠে এসেছে অনেক প্রভাবশালীর নাম। যাতে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন।
অন্যদিকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমির মামলার তদন্তভার পেয়েছে সিআইডি। গতকাল তাকে ডিবি অফিস থেকে মালিবাগে সিআইডি অফিসে নেয়া হয়েছে। রাতে শুরু হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। তিনি পরীমনির জীবনযাত্রার বিষয়ে মামলার তদন্তে সহায়ক তথ্য দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়