পরীমনরি ঘনষ্ঠি কে এই কবীর

আগের সংবাদ

তালিকায় হাইপ্রোফাইলদের নাম

পরের সংবাদ

হাকিমপুরে করোনার প্রভাব : কেজি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী পরিবারে নীরব দুর্ভিক্ষ

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আফতাবুজ্জামান তাজ, হাকিমপুর (দিনাজপুর) থেকে : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার সাধারণ ছুটি ও লকডাউন ঘোষণা করায় দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। সারাদেশের মতো দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুলও বন্ধ রয়েছে। প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বিপাকে পড়া উপজেলার তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিক্ষার্থীদের বেতননির্ভর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে না আসায় তাদের পরিবারে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
মহামারি করোনায় সরকার বিভিন্ন খাতে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও হাকিমপুরের কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারের নেই কোনো বিশেষ সহায়তা। অর্থকষ্টে জীবনযাপন করা শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা আর্থিক প্রণোদনাসহ কেজি স্কুলকে রক্ষা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি প্রক্রিয়ায় আনার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
হাকিমপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ২৫টি কিন্ডারগার্টেনে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। তারা প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। কিন্ডারগার্টেনগুলোর আয়ের একমাত্র উৎস শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি। তাদের থেকে প্রাপ্ত এ আয়েই প্রতিষ্ঠানের ভবন ভাড়া, পরিবহন, বিদ্যুৎবিল, শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক সম্মানীসহ সব ব্যয় নির্বাহ করা হয়। শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ভর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যৎ সামান্য সম্মানী ও টিউশনি করে জোড়াতালি দিয়ে চলত শিক্ষক-কর্মচারীদের অসচ্ছল পরিবারের ভরণপোষণ। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একদিকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের বেতন। অপরদিকে বন্ধ রয়েছে প্রাইভেট টিউশনি। ফলে বন্ধ হয়েছে তাদের উপার্জন। লোকলজ্জা ও চক্ষু লজ্জার ভয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা পারছেন না মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে আবার পারছেন না লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে। তারা অপেক্ষায় আছেন কবে এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে।
আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা পেশা পরিবর্তন করে কেউ রিকশাচালক, কেউ ভ্যানচালক, আবার কেউবা রাজমিস্ত্রী, দিনমজুর, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন পেশার মাধ্যমে পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ অবস্থায় সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা। কিন্ডারগার্টেন সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকারি সহায়তা না পেলে ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া না হলে শিক্ষাক্ষেত্রে অপরিসীম ভূমিকা রাখা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিকে রাখা দায় হয়ে পড়বে।

নর্থ বেঙ্গল কিন্ডারগার্টেন এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল সোসাইটির হাকিমপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও চাইল্ড কেয়ার কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, কেজি স্কুল শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় পরিচালিত হয়। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কোনো বেতন দিচ্ছে না। ফলে আমরা শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রায় দেড় বছর বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। এই দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় আমাদের পবিবারে হাহাকার বিরাজ করছে।
হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ও শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে কিন্ডারগার্টেনসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারিভাবে সহায়তার কোনো নির্দেশনা নেই। তবে তারা অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ জানান, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অতি দরিদ্র শিক্ষক-কর্মচারীদের ইতোমধ্যেই কিছু সহায়তা প্রদান করেছি। তারা খুব অর্থ সমস্যায় আছে। দাবির প্রেক্ষিতে তাদের এককালীন কিছু দেয়ার চেষ্টায় আছি।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-আলম জানান, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের দুবারে দুশ জনকে খাদ্য সহায়তার আওতায় এনেছি। যদি তাদের আরো সহায়তার প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে জানালে উপজেলা পরিষদ থেকে যে কোনো সময় যে কোনোভাবে তাদের সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত। আমি জানি তারা খুব সমস্যায় আছে। তারা সম্মানীয় ব্যক্তি। তাদের বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখব।
দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো মূলত প্রাইভেট স্কুল। তারা স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হলেও শিক্ষার্থীরা মূল শ্রোতে রয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীদের সহায়তার জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ আমাদের কাছে নেই। তবে আমি জানি, সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে তারা হিমশিম খাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়