পরীমনরি ঘনষ্ঠি কে এই কবীর

আগের সংবাদ

তালিকায় হাইপ্রোফাইলদের নাম

পরের সংবাদ

যেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রেনু

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : ১৯৫৩ সালের ১৪ মে। গোয়েন্দারা জিপিও থেকে বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি আটক করে। ৫ মে লেখা ওই চিঠিতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘স্নেহের রেনু। আজ খবর পেলাম তোমার একটি ছেলে হয়েছে। তোমাকে ধন্যবাদ। খুব ব্যস্ত, একটু পরে ট্রেনে উঠব। ইতি তোমার মুজিব।’ গোয়েন্দা রিপোর্টের তৃতীয় খণ্ড থেকে এটি জানা গেছে। তবে ওই চিঠিটি গোয়েন্দারা শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল কিনা, তা উল্লেখ নেই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনে ৪৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। ৫৪ বছরের জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছিল তাকে। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বারে প্রায় ১৩ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে একজন সাধারণ গৃহবধূ হয়েও মামলা পরিচালনা, দলকে সংগঠিত করা, কর্মীদের সহায়তা, আন্দোলনের দিকনির্দেশনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর রেনু।
বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণার উৎস রেনু কালের পরিক্রমায় ফজিলাতুন্নেছা মুজিব থেকে এখন ‘বঙ্গমাতা’র আসনে আসীন। টুঙ্গীপাড়ার খোকা থেকে শেখ মুজিব, শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, আর বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পিছনে বঙ্গমাতার অবদানই বেশি।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তেও বঙ্গবন্ধু সংসার ও রাজনীতির কর্মময় জীবনের বর্ণনায় বারবার স্ত্রীর নাম উচ্চারণ করেছেন। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত শেখ মুজিবের যখনই অতিরিক্ত অর্থের দরকার হতো তখনই নিজের পিতৃ সম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থ বিনা দ্বিধায় পাঠাতেন রেনু। জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি সব পরিস্থিতি জানাতেন এবং বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে তা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার স্মৃতিচারণে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়েছেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের সাহস দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে তার ছিল অনন্য ভূমিকা। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর এবং বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সহযোদ্ধা ছিলেন তিনি।
বঙ্গমাতা অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বসংহা ও দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি। তিনি কখনো সাহস হারাননি। আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ফজিলাতুন নেছা মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নীরবে ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করেছেন বঙ্গমাতা। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দির মুক্তির জন্য পূর্ববাংলায় দুর্বার আন্দোলনকে গতিশীল রাখতে নেতৃত্ব দেন বঙ্গমাতা। লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে রাজি হননি তিনি। তার একটাই দাবি ছিল- প্যারোল নয়, নিঃশর্ত মুক্তি। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, বঙ্গমাতার এমন অটল সিদ্ধান্তের কারণেই রাজবন্দিরা মুক্তি পেয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণাতেও বঙ্গমাতার অবদান অনস্বীকার্য। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ভাষায়, আমার মা আব্বাকে খাবার দিলেন, ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আব্বাকে সোজা বললেন, তুমি ১৫ মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নিবা। অনেকেই অনেক কথা বলবে। তুমি সারা জীবন আন্দোলন সংগ্রাম করেছ, জেল খেটেছ। তুমিই জান, কি বলতে হবে? তোমার মনে যে কথা আসবে, সে কথাই বলবা। বঙ্গমাতার এই উদ্দীপক প্রেরণাই বঙ্গবন্ধুকে ৭ মার্চের ভাষণটি দিতে শক্তি জুগিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।
১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণকারী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বেঁচে থাকলে আজ ৯২ বছরে পা রাখতেন। কিন্তু তিনি যে স্বামী অন্তপ্রাণ আপাতমস্তক বাঙালির নারীর প্রতিকৃতি। পিতৃহন্তারকের সামনে দাঁড়িয়ে শেষ সাহসী উচ্চারণ করলেন বঙ্গবন্ধুর রেনু, তোমরা ওকে শেষ করে দিয়েছ, আমাকে আর বাঁচিয়ে রেখ না। পঁচাত্তরের পনের আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে এক হয়ে মিশে গোটা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলকেই রক্তাক্ত করেছে বঙ্গবন্ধুর রক্ত, বঙ্গমাতার রক্ত। জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি হে মহীয়সী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়