জন্মদিন : প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যচিন্তা

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর চোখে বঙ্গমাতা

পরের সংবাদ

সেলিব্রেটি পার্টিগার্লদের পাকড়াও যে কারণে

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : তারকা জগতের অনেকেই যেন অর্থের লোভে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। ধনাঢ্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও ধনীর দুলালদের ফাঁসিয়ে টাকা হাতানো তাদের পেশায় পরিণত হয়েছিল। রাতে পার্টির আড়ালে গোপন ক্যামেরায় আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করে ট্র্যাপে ফেলে টাকা কামানোর এই চক্রে রয়েছে ২৮-৩০ জন। তাদের কেউ চলচ্চিত্রে আবার কেউ মডেলিংয়ের খাতায় নাম লেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁদে আটকানোর পরিক্রমায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে আটকা পড়েছেন আলোচিত কয়েকজন। এরমধ্যে ১০ জন শিল্পপতি, পাঁচজন ব্যবসায়ী, একজন ব্যাংকের কর্ণধারসহ ১৭-১৮ জনের নাম পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর চলছে। তারাও আসতে পারেন আইনের আওতায়। হেলেনা জাহাঙ্গীর, পিয়াসা, মৌ, পরীমণির পর নায়িকা ও মডেলদের ব্যবহার করে ফাঁদ পাতার অভিযোগে গত রাতে ঢাকার পান্থপথ থেকে আটক করা হয়েছে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে। তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী ও বারিধারার বাসিন্দা কথিত সেলিব্রেটিদের সঙ্গে প্রভাবশালী এবং ধনাঢ্যদের দহরম মহরম রয়েছে। কথিত আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীর, বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌর পর গ্রেপ্তার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমণির অপরাধ জগতের বিস্তৃতি দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে বিদেশেও। তাদের সহযোগী হিসেবে শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাজের ঘনিষ্ঠ কাকন ও সেমিলিয়া নামে কথিত দুই মডেলকে খুঁজছে র‌্যাব। শিলা হাসান নামে এক মডেলকে ঘিরে রয়েছে রহস্য। তাদের সঙ্গে গুলশানের একটি অভিজাত ফ্যাশন হাউস মালিকের স্ত্রীর নামও উঠে আসে আলোচনায়। তাকে ঘিরে সৃষ্ট বিরোধেও নাড়া পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একই ইউনিটে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ চক্রের সদস্যদের এজেন্ট রয়েছে। তারা সেখান থেকে সুন্দরী মেয়েদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় আনতেন। এরপর তাদের মাধ্যমে অভিজাত এলাকার পার্টি গার্ল হিসেবে ব্যবহার করতেন। অনেককে মডেল বানানো, নাটক-সিনেমায় কাজ করার টোপ দেয়া হতো। রিমান্ডে থাকা নজরুল রাজ

এসব কাজের নাটের গুরু।
এদিকে অভিজাত সোস্যাল ক্লাবগুলোতে সমাজের প্রতিষ্ঠিতদের আনাগোনা রয়েছে। সব শ্রেণিপেশার মানুষের মিলনমেলা সেখানে। বোটক্লাবে

পরীমণির অপ্রিতীকির ঘটনার আগের রাতে গুলশানের অলকমিউনিটি ক্লাবে হাঙ্গামার ঘটনায় সোস্যাল ক্লাবগুলো আলোচনায় আসে। উত্তরা ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসির ইউ মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হলে এলিট শ্রেণির এসব আড্ডাস্থল ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের প্রচারণা শুরু হয়। ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এসব ক্লাব ঘনিষ্ঠরা নড়েচড়ে বসেন। বেশ কয়েকজন ক্লাব কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। শুরু হয় তদন্তকাজ। এরপর তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে অভিযান।
র‌্যাব পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তিনজন কর্মকর্তা আলাপচারিতায় জানান, একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি সম্প্রতি মডেল পিয়াসা ও মৌয়ের জালে জড়িয়ে পড়েন। তার আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও ও ছবি পুঁজি করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। এই চক্রের ব্যাপারে ওই ব্যাংকের এমডি সরকারের একজন মন্ত্রীর শরণাপন্ন হন। একইভাবে একাধিক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা এই চক্রের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তাকে অবগত করেন। পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসে সমাজের প্রতিষ্ঠিতদের জিম্মি করে টাকা হাতানোর কৌশলের গল্প। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ নিয়ে বৈঠক করে অভিযানের পরিকল্পনা করেন। এরপর এলিট ফোর্স র‌্যাবকে এর দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযানে পিয়াসা ও মৌকে আটকের পর তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৭টি ভিডিও পাওয়া গেছে। এসব ভিডিওতে কয়েকজন শিল্পপতি-ব্যবসায়ীর বখে যাওয়া সন্তানদের আপত্তিকর ছবি রয়েছে। এসব ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে শুরু হয় অভিযান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার তালিকায় আরো ৩৫-৪০ জনের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মিশু ঢাকার উঠতি মডেল ও নায়িকাদের নিয়ে দেশ-বিদেশে ‘বিশেষ পার্টির’ আয়োজন করতেন। তার বিলাসবহুল গাড়ির শোরুম আছে। মোহাম্মদপুরের সাবেক কাউন্সিলর রাজীবের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। মিশুর মাধ্যমে রাজীব বিদেশে টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে গুলশানে ৩০-৪০টি পার্টি হাউসের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। যারা এসব পার্টি হাউসে নিয়মিত যাতায়াত করেন, তারা ধনাঢ্য পরিবারের সদস্য। পার্টি হাউসে নিয়মিত আয়োজনকারীদের মধ্যে আরো কয়েকজন বিতর্কিত মডেল ও অভিনেত্রী গ্রেপ্তার হতে পারেন। তালিকায় থাকা কয়েকজনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পার্টিতে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা অনেকের যাতায়াত রয়েছে। উঠতি মডেল, অভিনেত্রীরা সেখানে থাকেন। রাতভর চলে নানা আয়োজন। একেক রাতে ১০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত একেকজন খরচ করেন। ঘণ্টা হিসাবে পার্টি হাউসে ছোট ছোট কক্ষও ভাড়া দেয়া হয়।
পুলিশের গুলশান জোনের কর্মকর্তাদের মতে, বিতর্কিত এসব মডেল অভিনেতা-অভিনেত্রীর মধ্যে যারা পার্টির আয়োজক, তারা প্রায় সবাই অঢেল অর্থের মালিক। বড় বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী তাদের অনেককে গাড়ি-ফ্ল্যাট উপহার দেন। আবার অনেককে কৌশলে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করা হয়। এই চক্রের সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়