জন্মদিন : প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যচিন্তা

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর চোখে বঙ্গমাতা

পরের সংবাদ

সাক্ষাৎকার : ড. মুনতাসীর মামুন >> তদন্ত কমিশন হলে ষড়যন্ত্রের অনেক কিছু উন্মোচিত হবে

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অধ্যাপক ড. মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন। ইতিহাসবিদ ও গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন নামেই দেশে-বিদেশে পরিচিত। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট’-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯-২০০২ সাল পর্যন্ত। ১৬ আগস্ট ২০১৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে নিয়োগ পান। এই দায়িত্ব সফলভাবে শেষ করার পর ২০২১ সালে ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে যোগদান করেন এ ইতিহাসবিদ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে গত ১০ বছর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন ড. মুনতাসীর মামুন। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে সম্প্রতি ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন তিনি। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, তদন্ত কমিশন হলে ষড়যন্ত্রের অনেক কিছু উন্মোচিত হবে। এখনো তদন্ত কমিশন করে ষড়যন্ত্রের দিক উন্মোচন করা সম্ভব। কারা পরিকল্পনা করেছে, কারা জড়িত, তা বের করা প্রয়োজন। এরপর আর সম্ভব হবে না, কারণ প্রত্যক্ষদর্শীরা বেঁচে থাকবেন না।
‘বাংলাদেশি জেনারেলদের মন’ নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে ড. মুনতাসীর মামুনের। ওই বইয়ে ২৪ জনের সাক্ষাৎকার রয়েছে। বইটির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, স্পষ্ট বোঝা যায়, কে এম সফিউল্লাহ ছাড়া আগস্টের ষড়যন্ত্রের কথা সব সেনা কর্মকর্তাই জানতেন। কে এম সফিউল্লাহ অন্ধকারে ছিলেন। কারণ তিনিই একমাত্র বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত ছিলেন। এজন্য তাকে কেউ জানাননি। অনেকেই বলেন, সেনাবাহিনীতে ‘চেইন অব কমান্ড’ ছিল না। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেননি। বরং তারা পরস্পরের মধ্যে কে সেনাপ্রধান হবেন, এটি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনেক মন্ত্রীই কেন পরদিন মোশতাকের

সভায় যোগ দিলেন? সেসব তো আসতে হবে?
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি বলেন, আজকের সময়ের মানদণ্ডে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের থমকে যাওয়া বাস্তবতার বিচার করা সম্ভব নয়। এর ব্যাখ্যা দু’রকমের হতে পারে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর যে ব্যাখ্যাটি বেশি প্রচলিত ছিল, তা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলেছেন, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সংবাদপত্র স্বাধীনতার কথা বলেছেন, কিন্তু বাকশাল করতে গিয়ে তিনি সেগুলো হরণ করেছেন বলে অপপ্রচার চালানো হতো। দ্বিতীয়ত, অরাজক অবস্থার সৃষ্টি। মানুষের মধ্যে এসব ধারণা দেয়া হয়েছিল। এসব কারণকে দাখিল করে খুনিরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। এই ব্যাখ্যাটা অনেক দিন পর্যন্ত চলছিল। যে বিষয়টি অনেকেই বুঝতে পারেননি, তা হচ্ছে- স্বাধীনতা এনেছেন এমন রাষ্ট্রনায়কদের বিভিন্ন দেশে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু সপরিবারে হত্যাকাণ্ড কোথাও হয়নি। এর বেনিফিশারি মোশতাক-জিয়া। তারা বাংলাদেশ শাসন শুরু করলে তখন আস্তে আস্তে সবকিছু স্পষ্ট হতে শুরু হয়। জিয়া থেকে খালেদা জিয়া- শাসনের একটা ধারাবাহিকতা আছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের বুঝিয়েছেন এবং আমরা নিজেরাও বুঝেছি একাত্তরই আমাদের মূল ভিত্তি। অর্থাৎ ’৪৭-এর পর যেসব আন্দোলন, তা পাকিস্তান প্রত্যয়ের বিপরীতে। (আমি পাকিস্তানকে দেশ হিসেবে দেখছি না, আমার কাছে পাকিস্তান একটি প্রত্যয়।) কিন্তু জিয়াউর রহমান বললেন, “না। ’৪৭-এর দ্বিজাতি তত্ত্ব আমাদের মূল ভিত্তি, ’৭১ হচ্ছে বিচ্যুতি এবং ’৭৫ হচ্ছে মূলধারায় ফিরে যাওয়া।” বঙ্গবন্ধু একমাত্র রাজনীতিবিদ, যিনি ক্ষমতায় এসে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র করেছেন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। ওই সময়ের কোনো রাজনীতিবিদ তা চিন্তাও করেননি। ’৭৫ পর্যন্ত দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক তৎপরতা চোখে পড়েনি। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার হয়নি।
মুনতাসীর মামুন আরো বলেন, ইতিহাসের সূত্র অনুযায়ী বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কোনো আকস্মিক কিছু ছিল না। পরিকল্পিত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। যারা পাকিস্তানকে কায়েম করতে চেয়েছিল। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই একাত্তরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল। আমেরিকা, চীন, সৌদি আরব বাংলাদেশকে বাধ্য হয়েই স্বীকার করেছে; কিন্তু মেনে নিতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড মানেই আদর্শের হত্যাকাণ্ড মন্তব্য করে এ গবেষক বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের আদর্শের নাম। আকস্মিক হত্যাকাণ্ড হলে শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করত, তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করত না। এমনকি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী জাতীয় চার নেতাকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এর কারণ তার পরিবারের অথবা অনুসারীরা বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সফল হবে না।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো জাতি বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভীত, সন্ত্রস্ত মানুষ সেদিন প্রতিবাদের শক্তি ও ভাষাই হারিয়ে ফেলেছিল। এজন্য নির্মম হত্যাকাণ্ডের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিবাদ হয়নি। ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও প্রতিবাদ হয়েছে। আমার যদ্দূর মনে পড়ে, প্রথম প্রতিবাদ করে ছাত্র ইউনিয়ন ও বামপন্থিরা। প্রতিরোধ করার দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু আমার মনে হয়, তারাও বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়