জন্মদিন : প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যচিন্তা

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর চোখে বঙ্গমাতা

পরের সংবাদ

৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছাড়া পেলেন চয়নিকা : পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমির বিরুদ্ধে মামলা হবে

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২১ , ২:৪৬ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নির্মাতা ও প্রযোজক চয়নিকা চৌধুরীকে রাজধানীর পান্থপথ এলাকা থেকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। প্রায় ৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ১১টার দিকে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তের প্রয়োজনে যখন ডাকা হবে, তিনি আসবেন- এই শর্তে তাকে ছাড়া হয় বলেও জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে গতকাল রাতেই পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকে রাজধানীর গুলশান থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। তবে চয়নিকা চৌধুরীকে ছেড়ে দিলেও তাকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
রাজধানীর পান্থপথ থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চয়নিকা চৌধুরীকে আটক করে রাজধানী মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। চিত্রনায়িকা পরীমনিকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন তিনি। গুঞ্জন চলছিল তাকেও আটক করা হতে পারে। এ বিষয়ে গতকালও ইঙ্গিত মেলে ডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কথায়।
জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া শেষে বাসায় ফেরার পথে ডিবি পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়েন পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। পরবর্তীতে তার গাড়িতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য উঠে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এদিকে চয়নিকা চৌধুরীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি গাড়ি থেকে আতঙ্কিত হয়ে বলছিলেন, আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমি কিছু জানি না।
কয়েক শতাধিক নাটকের পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী ‘বিশ্ব সুন্দরী’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এই ছবিতে তার অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে পরীমনিও ছিলেন। এই নির্মাতার ওয়েব ফিল্ম অন্তরালের জন্য সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হন পরীমনি। এর শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। যদিও চয়নিকা চৌধুরীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে থাকেন পরীমনি। উত্তরা বোট ক্লাবকাণ্ডের পর পরীমনির পাশেই তাকে সব সময় দেখা গেছে। এ নায়িকার পক্ষে কথা বলেছেন তিনি। তবে র‌্যাবের হাতে আটকের সময় সোচ্চার দেখা যায়নি এ নির্মাতাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার পরীমনিসহ বেশ কয়েকজনকে ব্যবসায়ীদের ডিজে পার্টি ও মাদকের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উঠে। পরীমনির অন্ধকার জগতে প্রবেশের পেছনে চয়নিকার হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চয়নিকাকে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়। তবে ডিবি তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, চয়নিকা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে রাত ১০টায় মিন্টো রোডের কার্যালয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, সবাই প্রশ্ন করছিল, পরীমনির কথিত মা চয়নিকা চৌধুরীকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। এছাড়া রিমান্ডে থাকা আসামিদের কাছ থেকেও কথিত এই মা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হবে। তদন্তের প্রয়োজনে যখন ডাকা হবে, তিনি আসবেন। এই শর্তে তাকে ছাড়া হচ্ছে।
জিমি আটক প্রসঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, যে ছেলেটা বোট ক্লাবে হাফপ্যান্ট পরে উশৃঙ্খল আচরণ করেছে, পরীমনির সঙ্গে ভাঙচুর করেছেÑ তাকে আমরা আটক করেছি। গুলশানের একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। বাসা থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। মাদক আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। এদিকে চয়নিকাকে ডিবি হেফাজতে নেয়ার আগে গতকাল শুক্রবার দুপুরে টক অব দ্য কান্ট্রি পরীমনিকে মাদকের মামলায় রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে ডিবি যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পরীমনিকে অন্ধকার জগতে প্রবেশে সহযোগিতা করেছেন এক নারী। তাকে খুঁজছে পুলিশ। তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, পরীমনিকে অন্ধকার জগতে পা দিতে এক নারী সহযোগিতা করেছেন। তাকে আমরা খুঁজছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নজরদারিও শুরু করেছি আমরা। আমরা এ মুহূর্তে সেই নারীর নামটি বলতে চাচ্ছি না। পরীমনির বাসায় মদ পাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই আটক হন পরীমনির মম হিসেবেও পরিচিত চয়নিকা চৌধুরী।
পরীমনি ও রাজের ঘরোয়া পার্টিতে কারা আসতেনÑ এমন এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি হারুন বলেন, নজরুল ইসলাম রাজ তথাকথিত কয়েকজন মডেল দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নানা জনকে মনোরঞ্জন দিতেন। তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি মূলত একজন মূর্খ, পড়ালেখা জানেন না। ঢাকায় এসে তিনি প্রথমে একটি ছোট চাকরি করতেন। পরে যোগাযোগ বাড়িয়ে সমাজের বিত্তশালীদের কাছে তথাকথিত মডেল সাপ্লাই দিয়ে বর্তমান অবস্থানে এসেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক নাম পেয়েছি। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তিনি আরো বলেন, সমাজে যারা অবৈধভাবে টাকা আয় করে বিত্তশালী হয়েছেন, তাদের সন্তানরা এসব অবৈধ পার্টিতে যাচ্ছেন ও নীতিবহির্ভূত কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। সমাজের তথাকথিত বিত্তশালী, যারা মাদক কারবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
যদিও পরীমনি গ্রেপ্তারের পর চয়নিকা চৌধুরী জানান, পরীমনির সঙ্গে তার শুধু কাজের সম্পর্ক। অন্যদের মতো টেলিভিশন লাইভে গ্রেপ্তারর ঘটনাটি দেখেছেন তিনি। তবে পরীমনির বাসায় যাননি। কারণ এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপার। তারা যা ভালো বুঝবেন, সেটাই করবেন। তিনি আরো বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের সম্মান আছে। এখন কিছু বলা ঠিক নয়। আমরা অপেক্ষা করব কিছুদিন। অবস্থা বুঝে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও টিমের সঙ্গে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে চয়নিকা ও জিমিকে আটকের আগেই নায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক রাজ, মডেল পিয়াসা, মৌ, পিয়াসার সহযোগী জিসান-মিশু ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির পদ হারানো হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে করা পৃথক ৭টি মামলার তদন্তভার সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মামলা তদন্তভার স্থানান্তরের সূত্র ধরে শুক্রবার সন্ধ্যায় পিয়াসা, হেলেনা জাহাঙ্গীর ও মৌসহ ৫ জনকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়